E-Paper

মাধ্যমিকে বসছে প্রায় ৮০ হাজার কম পরীক্ষার্থী

শিক্ষকেরা অনেকে জানাচ্ছেন, করোনা ও লকডাউন পরিস্থিতিতে দীর্ঘ দিন স্কুল বন্ধ থাকায় অনেক ছাত্রছাত্রীর পড়াশোনা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। অনলাইনে পড়াশোনা সে ভাবে কার্যকর হয়নি।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ০৭:২২
চলছে প্রস্তুতী।

চলছে প্রস্তুতী। — ফাইল চিত্র।

গত বছরের তুলনায় এ বছর রাজ্য জুড়ে মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীর সংখ্যা অনেকটাই কমেছে। দুই জেলার পরিসংখ্যানেও ফুটে উঠেছে সেই ছবি।

দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলায় এ বছর মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ৬২,৫৮৩ জন। গত বছর সংখ্যাটা ছিল ১,০০৩,১৬ জন। অন্য দিকে, গত বছর উত্তরে মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী ছিল প্রায় ১ লক্ষ। এ বছর তা কমে হয়েছে ৫৯,৩৫৫ জন। অর্থাৎ দুই জেলা মিলিয়ে এ বছর প্রায় ৮০ হাজার পরীক্ষার্থী কমেছে।

এই পরিস্থিতির কারণ কী?

শিক্ষকেরা অনেকে জানাচ্ছেন, করোনা ও লকডাউন পরিস্থিতিতে দীর্ঘ দিন স্কুল বন্ধ থাকায় অনেক ছাত্রছাত্রীর পড়াশোনা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। অনলাইনে পড়াশোনা সে ভাবে কার্যকর হয়নি। দীর্ঘ সময় পড়াশোনা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ায় বহু পড়ুয়াই লেখাপড়ার প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। পাশাপাশি, কাজ হারানোর ফলে ওই সময়ে অনেক পরিবারে আর্থিক অনটন দেখা দেয়। পরিবারের হাল ধরতে ছাত্রদের অনেকে কাজের যুক্ত হয়ে পড়েছিল। অনেকে ভিন্ রাজ্যে চলে যায়। অনেক নাবালিকার বিয়ে দিয়ে দেন বাবা-মায়েরা।

যদিও তারা নবম শ্রেণিতে রেজিস্ট্রেশন করেছিল। স্কুল খোলার পরে স্কুলছুটের বিষয়টি প্রকট হতে শুরু করে। অনুপস্থিত পড়ুয়ার সংখ্যা দেখে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন শিক্ষকেরা। অনেক স্কুলে অনুপস্থিত পড়ুয়াদের স্কুলমুখী করতে শিক্ষক-শিক্ষিকারা পড়ুয়াদের বাড়ি বাড়ি যান। অধিকাংশ ক্ষেত্রে সে চেষ্টা কাজে আসেনি।

শিক্ষকদের একাংশ আবার জানাচ্ছেন, অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পাশফেল উঠে গিয়েছে। তবুও পরীক্ষা নেওয়ার ব্যবস্থা থাকায় পড়ুয়াদের পড়াশোনার হাল-হকিকত বোঝার সুযোগ ছিল। করোনা পরিস্থিতিতে সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণিতে কোনও পরীক্ষা ছাড়াই উঁচু ক্লাসে উঠে গিয়েছে পড়ুয়ারা। এরপরে নবম ও দশম শ্রেণিতে অনেকেই উত্তীর্ণ হতে পারেনি। অনেকে আবার টেস্টে অনুত্তীর্ণ হয়েছে।

বনগাঁর গাঁড়াপোতা গালর্স হাইস্কুলের ৭৬ জন ছাত্রী এ বছর মাধ্যমিক পরীক্ষা দেবে বলে আবেদনপত্র পূরণ করেছে। যদিও নবম শ্রেণিতে নাম রেজিস্ট্রেশন করেছিল ৮৮ জন ছাত্রী। প্রধান শিক্ষিকা ববি মিত্র বলেন, ‘‘যে ৭৬ জন ছাত্রী আবেদনপত্র পূরণ করেছে, তাদের মধ্যেও অনেককে বাড়ি থেকে ডেকে এনে, অভিভাবকদের বুঝিয়ে পরীক্ষায় বসানো হচ্ছে।’’ আগামী বছর থেকে এই সমস্যা কাটিয়ে ওঠা যাবে অবশ্য তাঁর আশা। পাথরপ্রতিমার গোপালনগর হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক তরুণকুমার মিত্র বলেন, ‘‘গত দু’বছর পড়াশোনা হয়নি। ফলে অনেকে নবম শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষা, দশম শ্রেণির টেস্টে পাশ করতে পারেনি। সেই কারণেও অনেকে এ বার পরীক্ষায় বসছে না।’’ শিক্ষকদের একাংশ আবার ভিন্ন ভাবে সমস্যার বিশ্লেষণ করছেন। তাঁরা জানান, ২০১৭ সালে নিয়ম হয়, দশ বছর বয়স না হলে পঞ্চম শ্রেণিতে ভর্তি নেওয়া হবে না। অন্যান্য বছরের তুলনায় সে বছর কম পড়ুয়া পঞ্চম শ্রেণিতে ভর্তির সুযোগ পেয়েছিল। সেই ব্যাচই এ বার মাধ্যমিক দিচ্ছে। তাই পরীক্ষার্থীর সংখ্যা বেশ কম। একই মত ডায়মন্ড হারবার মহকুমা স্কুল পরিদর্শক ব্রজেন্দ্রনাথ মণ্ডলেরও। উত্তর ২৪ পরগনার স্কুল পরিদর্শক কৌশিক রায়ের মতে, এ বার যারা পরীক্ষা দিচ্ছে, তারা ছ’বছরে ক্লাস ওয়ানে ভর্তির নিয়মে পঠনপাঠন শুরু করেছিল। ফলে গতবারের তুলনায় সংখ্যা কমেছে। দক্ষিণ ২৪ পরগনার মাধ্যমিক পরীক্ষার কো-অর্ডিনেটর অজিতকুমার নায়েক বলেন, ‘‘ রেজিস্ট্রেশনের পরে যেটুকু পরীক্ষার্থী কমেছে, সেটা খুব অস্বাভাবিক নয়। দশ শতাংশের মতো পরীক্ষার্থী প্রতিবারই কম থাকে।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Madhyamik 2023 North 24 Parganas South 24 Parganas

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy