Advertisement
E-Paper

অ্যাডমিট নিয়েও মাধ্যমিকে নেই, স্কুলছুট অনেকে

জেলার আর এক স্কুল, বামনখালি এমপিপি হাই স্কুলে নবম শ্রেণিতে রেজিস্ট্রেশন করেছিল ১৪৭ জন। মাধ্যমিক দেওয়ার জন্য অ্যাডমিট নিয়েছে ১২৬ জন।

রবিবার স্কুল ছুটি তাই সোমবার মাধ্যমিক পরীক্ষা উপলক্ষে শনিবার একটি

রবিবার স্কুল ছুটি তাই সোমবার মাধ্যমিক পরীক্ষা উপলক্ষে শনিবার একটি পরীক্ষা কেন্দ্রে দেখা গেল পরীক্ষার্থীদের সিট নম্বর লাগাতে ও বসার জায়গা ঠিক করতে ।

সমরেশ মণ্ডল

শেষ আপডেট: ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ০৮:৫১
Share
Save

রেজিস্ট্রেশন করছে। অ্যাডমিটও নিচ্ছে। কিন্তু তার পরেও মাধ্যমিকে বসছে না বহু পরীক্ষার্থী। দক্ষিণ ২৪ পরগনা জুড়েই এই ছবি। শিক্ষকেরা জানাচ্ছেন, ছেলেরা কৈশোরেই কাজের খোঁজে অনেকে পড়া ছেড়ে দিচ্ছে। আবার, কন্যাশ্রীর মতো সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্প, প্রশাসনের নজরদারি থাকলেও বয়সের আগেই মেয়েদের বিয়ে হয়ে যাচ্ছে। পরিসংখ্যান থেকেই উঠে আসছে এমন উদ্বেগজনক তথ্য।

এ বছর দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলায় মাধ্যমিক পরীক্ষা দিচ্ছে ১ লক্ষ ১০০০ জন। তাদের মধ্যে ছাত্র ৪৪৫০০ জন, ছাত্রী ৫৬৫০০ জন। কাকদ্বীপ মহকুমা এলাকার পরীক্ষার্থী ১২,০২২ জন। ছাত্রের সংখ্যা ৫৬৪২ ও ছাত্রী ৬৩৮০। কাকদ্বীপ মহকুমা শিক্ষা দফতর সূত্রে খবর, বেশিরভাগ স্কুলে বহু পরীক্ষার্থী মাধ্যমিকে বসছে না।

নামখানা ব্লকের মৌসুনি দ্বীপ এলাকায় বালিয়াড়া কিশোর হাইস্কুলে নবম শ্রেণিতে রেজিস্ট্রেশন করেছে ১৩৩ জন। কিন্তু মাধ্যমিক পরীক্ষায় বসার জন্য অ্যাডমিট নিয়েছে ১০১ জন। বাকি ৩২ জন ছাত্রছাত্রী কার্যত ‘স্কুলছুট’। তাদের মধ্যে ১৫ জন ছাত্র, ১৭ জন ছাত্রী। স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক অরিন্দম মাইতি বললেন, ‘‘পরিবারে দিশা দেখানোর মতো কেউ না থাকা ও আর্থিক অবস্থাই জন্য দায়ী। আমরা স্কুল থেকে বারবার গিয়ে আবেদন করেছি ছেলেমেয়েদের স্কুলে পাঠান। কিন্তু কেউ আসেনি। অনেকের বিয়ে হয়ে গিয়েছে অল্প বয়সে।’’

প্রায় একই ছবি সাগরে শ্রীধাম কপিলানন্দ বিদ্যাভবন হাইস্কুলে। সেখানে নবম শ্রেণিতে রেজিস্ট্রেশন করেছে ১৩০জন। কিন্তু মাধ্যমিক দেওয়ার জন্য অ্যাডমিট নিয়েছে ১১০ জন। প্রধান শিক্ষক বিনয় মণ্ডল বললেন, ‘‘অল্প বয়সে ছেলেরা মোবাইলের প্রতি বেশি আসক্ত হচ্ছে। স্কুলে ক্লাস করতে আসে না। মোবাইলে গেম খেলার ব্যস্ত থাকে।’’ প্রধান শিক্ষক জানালেন, পড়া চালিয়ে যেতে বললে মেয়েদের অভিভাবকেরা জানান ‘ভাল’ ছেলে পেয়েছেন বলে মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন।

জেলার আর এক স্কুল, বামনখালি এমপিপি হাই স্কুলে নবম শ্রেণিতে রেজিস্ট্রেশন করেছিল ১৪৭ জন। মাধ্যমিক দেওয়ার জন্য অ্যাডমিট নিয়েছে ১২৬ জন। বাকি ২১ জন ছাত্রছাত্রী বিভিন্ন কারণে স্কুলে আসা বন্ধ করে দিয়েছে বলে জানালেন স্কুল কর্তৃপক্ষ। ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সৌমিত্র দাস বলেন, ‘‘আমরা ছেলেমেয়েদের বোঝালেও শুনছে না। কারণ, ওদের অভিভাবকেরাই চান না ওরা আর পড়াশোনা করুক।’’

এ ভাবে স্কুল ছুট হওয়াই বাস্তবে পরীক্ষা না দেওয়ার কারণ বলে জানাচ্ছেন জেলার শিক্ষকেরা। তাঁদের অভিজ্ঞতা, কিশোর বয়সেই কাজের খোঁজে স্কুল ছাড়ছে ছেলেরা। মেয়েদের অনেকের বিয়ে হয়ে যাচ্ছে। বহু স্কুলে পরিস্থিতি প্রায় একই। শিক্ষকেরা জানাচ্ছেন, করোনার সময় থেকেই ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ কমেছে। গত কয়েক বছর ধরেই চলছে এই পরিস্থিতি।

শিক্ষারত্ন প্রাপক, খানসাহেব আবাদ হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক জয়দেব দাস বলেন, ‘‘ছেলেরা মোবাইলের প্রতি বেশি আসক্ত হওয়ার ফলে অল্প বয়সে শিক্ষা থেকে সরে যাচ্ছে। কিশোরী বয়সে বিয়ে হয়ে অপরিণত অবস্থায় মেয়েরা মা হচ্ছে। যারা আছে সময়ে স্কুলে আসছে না।’’ তাঁর অভিজ্ঞতা, ‘‘শিশুদের জীবনে তার প্রথম শিক্ষক হলেন তার মা-বাবা। তাঁরাই শিক্ষা সম্পূর্ণ করছেন না। এর ফলে ভুগতে হচ্ছে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে।’’ তবে অনেক ক্ষেত্রে অভিভাবকেরাও অসহায় বলে দাবি করছেন। বালিয়াড়ার এক স্কুলের এক ছাত্রীর বাবা বললেন, ‘‘দুর্ঘটনায় আমার পা খোঁড়া হয়ে গিয়েছে। আয় করতে পারি না। ভাল সম্বন্ধ এসেছিল। তাই মেয়েকে বিয়ে দিতে হয়েছে।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

kakdwip

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}