দশমীর রাতে একটি ফোন এসেছিল। ‘জামাইবাবু বেরোতে বলছে’ বলে বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন শান্ত মণ্ডল। আর ফেরেননি। পরের দিন সকালে বাড়ি থেকে কিছুটা দূরে রাস্তায় শান্তের নিথর দেহ পড়েছিল। খুনের ৯ দিন পর মূল অভিযুক্তকে গ্রেফতার করল পুলিশ। প্রাথমিক তদন্তে উঠে এসেছে, ‘ব্যবসায়ী’ শ্যালকের উত্থানে ঈর্ষান্বিত জামাইবাবু তাঁকে লোকজন দিয়ে খুন করিয়েছেন।
শান্তের বাড়ি দক্ষিণ ২৪ পরগনার বারুইপুরের বেগমপুরে। বোনের শ্বশুরবাড়ি বারুইপুরের বেলেগাছিতে। শান্তের বাড়ির লোকের দাবি, দশমীর রাতে জামাই তাঁদের ছেলেকে ফোন করে ডেকেছিল। তার পর আর কিছু জানেন না তাঁরা। সকালে ছেলের রক্তাক্ত দেহ দেখতে পান রাস্তায়। পুলিশ জানাচ্ছে, শান্তের খুনে মূল অভিযুক্ত তাঁর জামাইবাবু দেবব্রত পাত্র। আগেই মিনাজুল পাইক, জসিমুদ্দিন লস্কর এবং অটোচালক হাফিজুল মোল্লা নামে তিন অভিযুক্তকে পাকড়াও করা হয়েছে।
কিন্তু কেন শ্যালকের সঙ্গে জামাইবাবুর শত্রুতা? পুলিশ জানাচ্ছে, বেঙ্গালুরুতে গাঁজার ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ছিলেন বারুইপুরের শান্ত। কিছু দিনের মধ্যে সেই অবৈধ ব্যবসায় প্রচুর লাভ করতে থাকেন শান্ত। জীবনযাত্রা বদলে যায় মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলেটির। শ্যালকের ‘টাকার জোর’ দেখে ঈর্ষান্বিত হন জামাইবাবু। কারণ, শ্যালক বেঙ্গালুরুতে গাঁজার ব্যবসা করে বড়লোক হয়ে যাচ্ছেন, আর তিনি সেই শহরেই খাবার ডেলিভারির কাজ করতেন। ওই হতাশা এবং আত্মীয়ের সাফল্যে তেতে উঠেছিলেন দেবব্রত। শ্যালককে খুনের ছক কষেন।
আরও পড়ুন:
দশমীর রাতে শ্যালককে ফোন করে ডেকে পাঠিয়েছিলেন দেবব্রত। আগে থেকেই ঠিক করা ছিল জনৈক হাফিজুল অটোয় করে শান্তকে নিয়ে যাবেন। একই অটোতে ছিলেন মিনাজুল ও জসিমুদ্দিন। প্রথমে সকলে মিলে বাসন্তীতে যায়। সেখানে মদ্যপান করেন তাঁরা। গভীর রাতে বাড়ি ফেরার জন্য উঠে পড়েন শান্ত। তখন তাঁকে অটো করে নিয়ে যাওয়া হয় বেগমপুরের নির্জন এলাকায়। সেখানে আবার মদ্যপান করানো হয় গাঁজা কারবারিকে। তার পর ধারালো কাটারি দিয়ে নলি কেটে খুন করা হয়।
তদন্তে নেমে দিন সাতেকের মধ্যে সমস্ত তথ্যপ্রমাণ হাতে পায় পুলিশ। গ্রেফতার করে চার জনকেই। বাজেয়াপ্ত হয়েছে সেই অটোটি। তবে খুনে ব্যবহৃত কাটারি পাওয়া যায়নি। জানা যাচ্ছে, খুনের জন্য এক কামারকে বরাত দিয়ে ওই কাটারি বানান দেবব্রত। তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।