রাতে হস্টেলের ঘর থেকে পড়ুয়াদের ডেকে নিয়ে গিয়ে র্যাগিংয়ের অভিযোগ উঠেছে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। সোমবার প্রথম বর্ষের অন্তত ছ’জন পড়ুয়া ডিন (স্টুডেন্টস অ্যাফেয়ার্স) অনুপমনাথ গুপ্তর কাছে সিনিয়র ছাত্রদের একাংশের নামে লিখিত অভিযোগ জানিয়েছেন। লাগাতার ‘এমন চললে, আত্মহত্যা করতে হবে’ বলেও ডিনের কাছে তাঁরা দাবি করেছেন। আরজি কর কাণ্ডের পরে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালে ‘হুমকি-প্রথা’ (থ্রেট কালচার) চালানোয় যাঁদের দিকে আঙুল উঠেছিল, তাঁদের একাংশ র্যাগিংয়েও জড়িত বলে অভিযোগ। ঘটনাচক্রে, এ দিনই ‘হুমকি-প্রথায়’ নাম জড়ানো দুই চিকিৎসককে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজে তৃণমূলপন্থী চিকিৎসক সংগঠন পর্যবেক্ষক হিসাবে নিয়োগ করায় বিতর্ক বেধেছে।
উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজের প্রথম বর্ষের পড়ুয়াদের দাবি, গত ৯-১০ অক্টোবর সিনিয়র ছাত্রছাত্রীদের একাংশ রাতে তাঁদের মাল্টিপারপাস হলে ডেকে ‘কলেজ ফেস্ট’-এর নানা কাজের কথা বলেন। অভিযোগ, সেখানেই তাঁদের দু-তিন ঘণ্টা দাঁড় করিয়ে কুকথা বলতে, আপত্তিকর অঙ্গভঙ্গি করতে বাধ্য করা হয়। রাতে হস্টেলের ঘরে গিয়েও র্যাগিং করা হচ্ছে। কলেজের ‘ফেস্ট’-এর জন্য বাড়ি থেকে তিন-চার হাজার টাকা আনতে চাপাচাপি করা হচ্ছে। প্রথম বর্ষের ছাত্রীদের একাংশ বলেন, ‘‘এ ভাবে এখানে অত্যাচারের জেরে অন্তত তিন জন পড়ুয়া হস্টেল ছেড়েছেন। অত্যাচারের কথা শুনে বাড়ির লোকেরা আতঙ্কে রয়েছেন।’’
ডিনের কাছে পড়ুয়াদের একাংশ এ দিন দাবি করেন, অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে প্রথম বর্ষের কয়েক জন মানসিক ভাবে ভেঙে পড়েছেন। ডিন বলেন, ‘‘অভিযোগ পেয়েই পুলিশকে মৌখিক জানিয়েছি। যাঁরা অভিযোগ করেছেন, তাঁরা কী করে হস্টেলে থাকবেন তা নিয়েও হুমকি দেওয়া হয়েছে। পুলিশকে দেখতে বলেছি।’’ তাঁর সংযোজন: ‘‘আমার কাছ থেকেও ফেস্ট বাবদ ৫০ হাজার টাকা চাওয়া হয়েছে। অভিযুক্তদের কাজকর্মে ভেঙেপড়ে ভুল পদক্ষেপ যেন পড়ুয়ারা না করেন, তা বুঝিয়েছি।’’ মেডিক্যাল কলেজের সুপার তথা ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষসঞ্জয় মল্লিক এ দিন জরুরি বৈঠক ডাকেন। অধ্যক্ষ বলেন, ‘‘অভিযোগ পেয়েছি। মঙ্গলবার (আজ) অ্যান্টি র্যাগিং কমিটির বৈঠক ডাকা হয়েছে।’’
আরজি কর কাণ্ডের পরে চিকিৎসক এবং ডাক্তারি পড়ুয়াদের একাংশের প্রভাবশালী গোষ্ঠী ‘উত্তরবঙ্গ লবি’র বিরুদ্ধে রাজ্যের একাধিক মেডিক্যাল কলেজে হুমকি-প্রথা চালানোর অভিযোগ ওঠে। উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজে সে কাজে অভিযুক্ত পাঁচ ছাত্রকে সাসপেন্ড করা হয়। তাঁদের মধ্যে এক জন এ বার র্যাগিংয়ের ক্ষেত্রেও অভিযুক্ত।
বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজে আবার ‘প্রোগেসিভ হেলথ অ্যাসোসিয়েশন’ নামে ডাক্তারদের একটি সংগঠন এ দিন এক নির্দেশিকায় জুনিয়র ডাক্তারদের সংগঠনের পর্যবেক্ষক হিসাবে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজের চার চিকিৎসকের নাম জানানোয় বিতর্ক শুরু হয়। কারণ, তাঁদের মধ্যে দু’জন ‘উত্তরবঙ্গ লবি’র অন্যতম মাথা বলে যাঁর বিরুদ্ধে আঙুল উঠেছিল, সেই অভীক দে-র ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত। তাঁদের বিরুদ্ধে হুমকি, তোলাবাজি, হেনস্থা, পরীক্ষার ফলাফলে প্রভাব খাটানোর মতো অভিযোগ ছিল। হস্টেল থেকে বার করে দেওয়াও হয়েছিল। ওই সংগঠনের পরিচালন সমিতির সদস্য সুব্রত সেন যদিও বলেন, ‘‘ওঁদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের সারবত্তা মেলেনি।’’ ওই দু’জন বলেন, ‘‘সংগঠন যা দায়িত্ব দিয়েছে, পালন করব।’’
বর্তমানে এসএসকেএমের পোস্ট-গ্র্যাজুয়েট ট্রেনি অভীক দে বলেন, ‘‘উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালে র্যাগিংয়ের কী অভিযোগ জানা নেই। তবে নানা অভিযোগ করা হয়। কিন্তু প্রমাণ কেউ দেয় না। আর কলেজের ফেস্ট কমিটি পড়ুয়ারা নির্বাচন করেন।’’ অভীক-ঘনিষ্ঠদের দাবি, বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজে ফেস্টের দায়িত্বে থাকা লোকজনই আগে হুমকি-প্রথার অভিযোগ করেছিলেন। তাঁরা নানা অনিয়ম করেছেন। সে সব নজরে আসবে বলে এখন ফের হুমকি-প্রথার কথা মনে করাতে চাইছেন।
রিপোর্ট তলব
বিমানের র্যাম টার্বাইন ইঞ্জিন (র্যাট) নিয়ে এয়ার ইন্ডিয়ার কাছে রিপোর্ট তলব করল বিমান পরিবহণ নিয়ামক সংস্থা ডিজিসিএ। সূত্রের খবর, সম্প্রতি এয়ার ইন্ডিয়ার যে বিমানগুলিতে বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থার বদল হয়েছে সেগুলির র্যাট খতিয়ে দেখে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি, বোয়িং সংস্থার কাছ থেকেও আচমকা র্যাট সচল হওয়ার সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া নিয়ে বিস্তারিত রিপোর্ট চেয়েছে ডিজিসিএ। আমদাবাদে ভেঙে পড়া বিমানে র্যাট আচমকা সচল হয় বলে অভিযোগ। নিজস্ব সংবাদদাতা
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)