Advertisement
E-Paper

প্রহৃত ব্যক্তির মৃত্যু, দেহ আটকে বিক্ষোভ দেগঙ্গায়

শৌচকর্ম করতে কলা বাগানে ঢুকেছিলেন তিনি। বাগান মালিকদের অবশ্য অভিযোগ ছিল, কলা চুরি করতে গিয়েছিলেন। সেই ‘অপরাধে’ এক রিকশা চালককে ল্যাম্পপোস্টে বেঁধে বেধড়ক পেটানোর অভিযোগ ওঠে বাগান মালিকদের বিরুদ্ধে। আড়াই মাস আগের এই ঘটনায় গুরুতর আহত হন নুর ইসলাম মণ্ডল (৪৫) নামে ওই রিকশাচালক।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০১:৩৭
গ্রেফতারের দাবি। ছবি: সজলকুমার চট্টোপাধ্যায়।

গ্রেফতারের দাবি। ছবি: সজলকুমার চট্টোপাধ্যায়।

শৌচকর্ম করতে কলা বাগানে ঢুকেছিলেন তিনি। বাগান মালিকদের অবশ্য অভিযোগ ছিল, কলা চুরি করতে গিয়েছিলেন। সেই ‘অপরাধে’ এক রিকশা চালককে ল্যাম্পপোস্টে বেঁধে বেধড়ক পেটানোর অভিযোগ ওঠে বাগান মালিকদের বিরুদ্ধে। আড়াই মাস আগের এই ঘটনায় গুরুতর আহত হন নুর ইসলাম মণ্ডল (৪৫) নামে ওই রিকশাচালক। গ্রামের সালিশিতে নিদান হয়, নুরের চিকিৎসার খরচ দিতে হবে বাগান মালিকদের। তবে তাঁরা তা দেননি বলেই অভিযোগ। এর পরে সোমবার সকালে কার্যত বিনা চিকিৎসায় মৃত্যু হল নুরের। এই ঘটনায় মৃতদেহ আটকে প্রতিবাদে নামেন দেগঙ্গার যাদবপুরের মানুষ। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা নাগাদ পুলিশ মৃতদেহ ময়না তদন্তে পাঠায়। অভিযুক্তেরা অবশ্য পলাতক। তাঁদের খোঁজে তল্লাশি শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছে দেগঙ্গা থানার পুলিশ।

স্থানীয়েরা জানান, কলকাতায় রিকশা চালিয়ে প্রতিদিনই বাড়ি ফিরতেন নুর। ঘটনার দিনও কলকাতা যাওয়ার জন্য ভোরে বাড়ি থেকে বেরোন তিনি। কিছুটা গিয়ে শৌচকর্ম করতে রাস্তার পাশের কলাবাগানে ঢুকলে পাহারাদারেরা ধরে ফেলেন তাঁকে। অভিযোগ, এর পরেই কলা চুরির অপবাদে শুরু হয় মারধর। এমনকী নুরকে রাস্তায় লাইটপোস্টে বেঁধে বাঁশ দিয়ে মারধর করা হয় বলেও অভিযোগ। পরে রক্তাক্ত অবস্থায় স্থানীয়েরাই উদ্ধার করেন নুরকে।

নুর।

তাজ্জেল খান নামে এক বাসিন্দা জানান, নুরকে হাড়োয়া হাসপাতালে নিয়ে যান তাঁরাই। সেখানে চিকিৎসার পরে বাড়ি ফিরিয়ে আনা হয় তাঁকে। এর পরে স্থানীয়দের সঙ্গে দেগঙ্গা থানায় গিয়ে ওই বাগানের পাঁচ মালিক সিরাজুল মণ্ডল, জুলফিকর মণ্ডল, হাফিজুল মণ্ডল, মুকুন্দ নাথ ও প্রহ্লাদ নাথের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানান নুরের স্ত্রী ফতিমা বিবি। বিষয়টি নিয়ে সরব হন এলাকার মানুষও। গ্রামে বসে সালিশি সভা। সেখানেই বাগান মালিকেরা অপরাধ স্বীকার করেন। জানান, চিকিৎসার খরচ তো বটেই, ক্ষতিপূরণও দেবেন তাঁরাই। তখনকার মতো বিষয়টি মিটে যায়।

ফতিমার অভিযোগ, বাগানের লোকেরা প্রথমে কিছু টাকা দিলেও পরে অস্বীকার করেন। এ দিকে নুর বিছানা নেওয়ায় অথৈ জলে পড়ে যায় পরিবার। এ দিন ফতিমা বলেন, ‘‘হাসপাতালের চিকিৎসা, সিটি স্ক্যানের টাকা ছিল না। টাকা চাইতে দেলে বাগান মালিকেরা উল্টে ভয় দেখাতেন। ভিক্ষে করে শুধু খাবার জোগাড় করতে পেরেছি, চিকিৎসা করাতে পারিনি।’’ তিনি জানান, ঘটনার পর থেকে মাঝেমধ্যেই অসুস্থ হয়ে পড়তেন নুর। মুখ থেকে রক্তক্ষরণ হতো। সোমবার সকাল ১০টা নাগাদ বাড়িতেই মারা যান নুর। এর পরেই অভিযুক্তদের বাড়িতে চড়াও হন এলাকার মানুষ। ততক্ষণে অবশ্য তাঁরা বাড়ি ছেড়ে পালান বলে জানিয়েছে পুলিশ। এ দিকে, মৃতদেহ নিতে এলে পুলিশকে ঘিরে বিক্ষোভ দেখান এলাকার মহিলারা। ঘটনাস্থলে যান হাড়োয়া পঞ্চায়েত সমিতির তৃণমূলের সহ সভাপতি সিরাজ মোল্লা। কিন্তু সন্ধ্যা পর্যন্ত দেহ আটকে বিক্ষোভ চলে। সিরাজ বলেন, ‘‘দোষীদের শাস্তি চাই।’’

রাতে পুলিশ সুপার ভাস্কর মুখোপাধ্যায়ের নির্দেশে ঘটনাস্থলে যায় আরও পুলিশ। তারা গিয়ে দেহটি ময়না তদন্তে পাঠায়। ভাস্করবাবু বলেন, ‘‘মৃতের পরিজনদের অভিযোগ মতো ঘটনার তদন্ত হবে। গ্রেফতারও করা হবে অভিযুক্তদের।’’

Protest
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy