E-Paper

সক্রিয় কিডনি পাচার চক্র, দিশাহারা গ্রাম

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ক্যানিং ১ ব্লকে কিডনি পাচার চক্র সক্রিয় মূলত হাটপুকুরিয়া পঞ্চায়েত এলাকায়।

প্রসেনজিৎ সাহা

শেষ আপডেট: ০১ এপ্রিল ২০২৫ ০৮:৪৭
—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

কিডনি পাচার চক্র সক্রিয় হয়ে উঠেছে বলে অভিযোগ উঠছে ক্যানিং ও আশপাশের এলাকায়। স্থানীয় সূত্রের খবর, ইতিমধ্যেই বেশ কয়েকটি গ্রামের মানুষ মোটা টাকার বিনিময়ে নিজেদের কিডনি বিক্রি করে দিয়েছেন। কিন্তু কিডনি দেওয়ার পরেও অনেক ক্ষেত্রেই প্রতিশ্রুতি মতো টাকা তাঁরা পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ উঠেছে। প্রশাসনের কর্তারা খবর পেলেও দু’পক্ষ বিষয়টি স্বীকার না করায় পদক্ষেপও করা যাচ্ছে না বলে স্থানীয় সূত্রের খবর। সমস্যার কথা মেনে নিয়ে ক্যানিং পশ্চিমের বিধায়ক পরেশরাম দাস বলছেন, “এ ভাবে চলতে থাকলে এলাকার বহু মানুষ নিজেদের কর্মক্ষমতা হারাবেন। এলাকায় গিয়ে এ বিষয়ে সাধারণ মানুষকে সচেতন করব। দলীয় নেতৃত্বকেও বলব, এ বিষয়ে এলাকায় সজাগ দৃষ্টি রাখতে।”

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ক্যানিং ১ ব্লকে কিডনি পাচার চক্র সক্রিয় মূলত হাটপুকুরিয়া পঞ্চায়েত এলাকায়। এ ছাড়াও, খাস কুমড়োখালি, দাঁড়িয়া-সহ নানা গ্রামের মানুষও এই চক্রের কবলে পড়ে নিজেদের কিডনি বিক্রি করেছেন বলে জানা যাচ্ছে। সূত্রের দাবি, এক একটি কিডনির জন্য সাত থেকে ন’লক্ষ টাকা দেওয়ার কথা বলা হচ্ছে। কেউ রাজি হলে তাঁকে অগ্রিম দু’তিন লক্ষ টাকা দিয়ে দেওয়া হচ্ছে। হাতে টাকা পেয়ে দরিদ্র মানুষের অনেকেই এই ফাঁদে পড়ছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ব্লক প্রশাসনের এক কর্তা বলেন, “বুঝতে পারছি যে মোটা টাকার বিনিময়ে কিডনি বিক্রি হচ্ছে। কিন্তু দু’পক্ষের কেউই সেটা আমাদের সামনে স্বীকার করছেন না।’’

কী ভাবে চলে এই চক্র?

স্থানীয় সূত্রে জানা যাচ্ছে, টাকা দিয়ে ‘দাতা’কে রাজি করানোর পরে কিডনি গ্রহীতার সঙ্গে যোগাযোগ করে দালালেরা। রক্তের গ্রুপ এবং অন্যান্য বিষয়গুলি মিলে গেলে বিডিও অফিসে শুনানির জন্য আবেদন করা হয়। উভয় পক্ষকে সেখানে ডাকা হয় প্রশাসনের তরফে। তবে সেখানে দালালের ‘শেখানো বুলি’ আওড়ান কিডনি দাতারা। ‘স্বেচ্ছায় এবং বিনামূল্যে’ তাঁরা কিডনি দান করছেন বলে বয়ান দেন ব্লক প্রশাসনের কর্তাদের সামনে। অনেক সময়ে গ্রহীতা বিপদের সময়ে দাতাকে সাহায্য করছেন বা নিজের খুবই কাছের মানুষ, নিকটাত্মীয় বলেও পরিচয় দেন। ফলে সব বুঝেও কিছু করতে পারছেন না প্রশাসনের কর্তারা।

এক কর্তার কথায়, ‘‘বাধ্য হয়েই পুলিশকে তদন্তের নির্দেশ দিয়ে কিডনি প্রতিস্থাপনের নির্দেশনামায় সই করেন ব্লক প্রশাসনের আধিকারিকেরা। কিন্তু সেখানেও পুলিশ কিছুই করতে পারছে না। মানুষ নিজে থেকে সচেতন না হলে কিডনি পাচার বন্ধ করা যাবে না।”

কিডনি প্রতিস্থাপন হয়ে যাওয়ার পরে দালালদের অনেকের দেখা মিলছে না বলে অভিযোগ উঠছে। কিডনি দাতারা বকেয়া টাকা পাচ্ছেন না। ক্যানিংয়ের হাটপুকুরিয়ার এক বাসিন্দা বললেন, “উত্তরপ্রদেশের এক ব্যবসায়ীকে কিডনি দিয়েছিলাম। দালাল আট লক্ষ টাকা দেবে বলেছিল। অগ্রিম তিন লক্ষ টাকা ও অপারেশনের দিন দু’লক্ষ টাকা দেয়। বাকি টাকা আজও দেয়নি। নানা জায়গায় জানিয়েও কোনও লাভ হয়নি। আমার মতো অনেকের সঙ্গেই এই ঘটনা ঘটেছে।” ক্যানিং ১ বিডিও নরোত্তম বিশ্বাস জানাচ্ছেন, আর্থিক লেনদেনের বিষয়ে কেউ অভিযোগ করেননি। তাঁর কথায়, ‘‘অভিযোগ পেলে নিশ্চয় খতিয়ে দেখা হবে।’’

পুরো টাকা না পেলেও কেন দালালদের খপ্পরে পড়ছেন?

স্থানীয় বাসিন্দা এক মহিলা বললেন, “পরিবারে সামান্য উপার্জন। একটা কিডনির বিনিময়ে লক্ষ লক্ষ টাকার লোভ অনেকে সামলাতে পারছেন না। একটা কিডনি দিয়ে দিলেও সে রকম কোনও সমস্যা হয় না বলে শুনেছি। তাই ওই টাকা দিয়ে দোকান বা ব্যবসা করা যাবে ভেবে অনেকে রাজি হচ্ছে। সব দালালেরা তো আর খারাপ না, যে টাকা দেবে না!”

এই আশাতেই ঘুরপাক খাচ্ছেন বাসিন্দারা।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Canning

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy