Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

বেহাল নিকাশি, বানভাসি হওয়ার আতঙ্কে বাসিন্দারা

খালের উপরেই ইটের পিলার তুলে তৈরি হয়েছে দোতলা তিনতলা ঝাঁ চকচকে বাড়ি, দোকানঘর। দক্ষিণ ২৪ পরগনা মথুরাপুর ১ ব্লকের বাপুলিবাজার থেকে দক্ষিণ বিষ্ণুপুর পর্যন্ত মথুরাপুর পঞ্চায়েতের অন্তর্গত খাল প্রায় বন্ধ করে এ ভাবে বেআইনি নির্মাণগুলি তৈরি করা হয়েছে বলে অভিযোগ বাসিন্দাদের।

এ ভাবেই নিকাশি বুজিয়ে গড়ে উঠেছে নির্মাণ। ছবি: দিলীপ নস্কর।

এ ভাবেই নিকাশি বুজিয়ে গড়ে উঠেছে নির্মাণ। ছবি: দিলীপ নস্কর।

নিজস্ব সংবাদদাতা
মথুরাপুর শেষ আপডেট: ০১ জুলাই ২০১৫ ০১:১৩
Share: Save:

খালের উপরেই ইটের পিলার তুলে তৈরি হয়েছে দোতলা তিনতলা ঝাঁ চকচকে বাড়ি, দোকানঘর। দক্ষিণ ২৪ পরগনা মথুরাপুর ১ ব্লকের বাপুলিবাজার থেকে দক্ষিণ বিষ্ণুপুর পর্যন্ত মথুরাপুর পঞ্চায়েতের অন্তর্গত খাল প্রায় বন্ধ করে এ ভাবে বেআইনি নির্মাণগুলি তৈরি করা হয়েছে বলে অভিযোগ বাসিন্দাদের। প্রশাসনের নজরদারির অভাবেই এই বেআইনি দখল চলছে। কিন্তু প্রশাসন থেকে কোনও ব্যবস্থাকরা হচ্ছে না। তাই এ বারও বর্ষায় ফের বানভাসি হওয়ার আশঙ্কায় বাসিন্দারা।

বিডিও সৌমেন মাইতি বলেন, ‘‘খাল দখল করে যে সমস্ত বাড়ি দোকানঘর নির্মাণ করা হচ্ছে সে বিষয়ে অভিযোগ পেয়েছি। পুলিশকে ব্যবস্থা নিতে বলেছি। তবে ওই এলাকার খালটি সেচ দফতরের অধীনে নয়। এক সময়ে এলাকার বাপুলি নামে এক ধনী পরিবার থেকে ওই খালটি তৈরি করা হয়।’’

মথুরাপুরের বাপুলিবাজার সাতপুকুরিয়া থেকে বয়ে আসা মথুরাপুরের ওই খালটি দেবীপুর পঞ্চায়েত অফিসের পাশ দিয়ে গিয়েছে। খালটি প্রায় ৫ কিলোমিটার দূরে দক্ষিণ বিষ্ণুপুরের কাছে ডায়মন্ড হারবার মূল খালের সঙ্গে মিশেছে। মূলত মথুরাপুর পূর্ব ও পশ্চিম, দেবীপুর এই তিনটি পঞ্চায়েত এলাকার বর্ষার অতিরিক্ত জল নিকাশির জন্য ওই খালই একমাত্র ভরসা। কিন্তু কয়েক বছর ধরে খালপাড়ের উপর রাস্তার দু’ধারে বড় বড় পাকা বাড়ি, দোকান ঘর তৈরি হয়েছে। তাতে খালের অধিকাংশ জায়গা জুড়ে এই বাড়িগুলি তৈরি হওয়ায় নিকাশির পথ বন্ধ হয়েছে। ফলে কয়েক বছর ধরেই বর্ষায় ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট, চাষের জমি জলে ডুবে রয়েছে। জল সরতে ৮ থেকে ১০ দিন সময় লাগে। তাতে নানা আবর্জনা পচে এলাকায় দুর্গন্ধ ছড়ায়। মশা মাছির উপদ্রপে স্থানীয়রা অতিষ্ট হয়ে যায়। পেটের রোগে আক্রান্ত হয় বাসিন্দারা। এখন ৩০ ফুট চওড়া খালটি বিলুপ্ত হবার পথে।

স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, প্রায় বছর দ’শেক ধরে খালের দখলদারি চলছে। বাম আমলেও তা চলেছে। একই ভাবে এখন শাসকদলের নেতাদের মদতে খালের উপর গড়ে উঠছে বেআইনি বাড়ি ও দোকান। খাল পাড় দখল করে যারা বাড়ি করছে তাদের পুলিশের সঙ্গে ভাল যোগসাজশ আছে। ফলে সাহস করে ওদের বিরুদ্ধে প্রশাসনের কাছে যাওয়া যায় না। ওই এলাকার প্রবীণ বাসিন্দা বুদ্ধদেব মণ্ডল, শশীকান্ত হালদারেরা জানান, এক সময় ওই খালের জলে এলাকা জুড়ে নানা সব্জি চাষ হত। কিন্তু গরমে খালের জল শুকিয়ে যাওয়ায় তা আর হয় না। অথচ এখানে বেশির ভাগ মানুষ চাষের সঙ্গে যুক্ত। প্রত্যেক বছরই বর্ষায় ভাসতে হচ্ছে এলাকাবাসীদের। মথুরাপুর স্টেশন মোড়ের কাছেই রয়েছে তৃণমূলের দেবীপুর পঞ্চায়েত অফিস। তাদের চোখের সামনে এই বেআইনি নির্মাণ হচ্ছে। কিন্তু প্রশাসন নির্বাক।

তবে দখল বন্ধ করতে প্রশাসনের উপস্থিতিতে সর্বদলীয় বৈঠক করা হয়েছিল। কিন্তু তা কার্যকর হয়নি। দেবীপুর পঞ্চায়েতের তৃণমূলের প্রধান আনোয়ার হোসেন খাঁ বলেন, ‘‘খাল বন্ধ করে বেআইনি নির্মাণ হওয়ায় সাধারণ বাসিন্দাদের ক্ষোভের মুখে পড়তে হচ্ছে। বিষয়টি দলীয় নেতৃত্বকে জানিয়েছি। পাশাপাশি পুলিশ প্রশাসনকে জানানো হয়েছে।’’ মথুরাপুর ১ পঞ্চায়েত সমিতির তৃণমূলের সভাপতি অমিয় গায়েন বলেন, ‘‘বহু বছর ধরে ওই দখল চলছে। এখন নতুন যারা নির্মাণ করছেন তাদের চিঠি দিয়ে কাজ বন্ধ রাখতে বলেছি। সমস্ত বিষয়টি বিডিও কে জানানো হয়েছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE