Advertisement
E-Paper

মাংসের দোকানে মেলে বিলিতি মদ

শবযাত্রার গাড়ি থামিয়ে ব্রয়লার মুরগির দোকানে ভিড় করেছিলেন কিছু লোক। কৌতুহলবশত এগিয়ে গিয়ে দেখা গেল, চাপা গলায় চলছে বিলিত মদের দরদাম।

দিলীপ নস্কর

শেষ আপডেট: ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০০:৫৫

শবযাত্রার গাড়ি থামিয়ে ব্রয়লার মুরগির দোকানে ভিড় করেছিলেন কিছু লোক। কৌতুহলবশত এগিয়ে গিয়ে দেখা গেল, চাপা গলায় চলছে বিলিত মদের দরদাম। বাড়তি কিছু টাকা গুনে রম-হুইস্কি-ভদকার ‘পাঁইট’, ‘খাম্বা’, ‘নিপ’ ব্যাগে ভরছেন শবযাত্রীদের অনেকে। কেউ কেউ ছোট বোতল গুঁজে নিচ্ছেন কোমরে।

উঁকি দিয়ে দেখা গেল, সামনে ‘মুরগির মাংসের দোকান’ লেখা বোর্ড ঝুললেও মুরগির দেখা নেই। মদের বেআইনি কারবারই চলছে সেখান থেকে।

মন্দিরবাজারের হটুগঞ্জ-বিষ্ণুপুর রোডে প্রায় সমস্ত মোড়ে মুরগি থেকে মুদিখানা, পানবিড়ি থেকে মনিহারি— সব দোকান থেকেই বিলিতি মদের কারবার চলছে রমরমিয়ে। কিছু বাড়তি টাকা গুনলেই মিলছে মদ। ক্রেতা কে, বয়স কত, এ সব দেখার কোনও দায় নেই দোকানির।

সরকারি আইন অনুযায়ী, লাইসেন্সপ্রাপ্ত দোকান থেকে একুশ বছরের কাউকে মদ বিক্রি নিষিদ্ধ। দোকানের সামনে এই মর্মে নোটিস টাঙিয়ে রাখা হচ্ছে। নানা কারণে মদ্যপ অবস্থায় অল্পবয়সী ছেলেরা অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে বলে জানা যাচ্ছে। ক’দিন আগেই মদের আসরে দুই নাবালক মিলে তাদেরই এক নাবালক বন্ধুকে খুনের ঘটনা ঘটেছে। হাবরা থানা এলাকায় পুলিশ ঠিক করেছে, মদের দোকানের কর্মীরা যদি অল্পবয়সীদের হাতে মদ বিক্রি করেন, তা হলে কোনও কারণে ওই অল্পবয়সী ছেলেটি মদ্যপ অবস্থায় আইন ভেঙে ধরা পড়লে ধরা হবে দোকানের কর্মীকেও। কিন্তু এত সবের পরেও পরিস্থিতি সর্বত্র কতটা বদলাচ্ছে, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। গ্রামবাংলার অনেক জায়গাতেই চোরাগোপ্তা বিক্রি হচ্ছে মদ। যারা কিনছে, তাদের বয়স দেখছে না কেউ।

দক্ষিণ ২৪ পরগনার নানা এলাকায় দেখা মিলল এই চিত্র।

মন্দিরবাজার, ছোটপোল, রত্নেশ্বরপুর, বাঁশবেড়িয়া, গোকুলনগর ও বিষ্ণুপুর মোড়ে দেখা গেল বিভিন্ন দোকান থেকে দেদার বিকোচ্ছে মদ। এমনকী, থানা থেকে ঢিল ছোড়া দূরত্বে জগদীশপুর হাইস্কুলের গেটের উল্টো দিকে একটি স্টেশনারি দোকানেও প্রচুর মদ মজুত আছে বলে অভিযোগ শোনা গেল। প্রত্যন্ত এলাকার গ্রামে-গঞ্জের হাটে-বাজারে নানা দোকানে মদ মেলে।

শুধু নাবালক ক্রেতাই নয়, ক’দিন আগে রাত সাড়ে ৯টা নাগাদ বিষ্ণুপুরের এক শালপাতার দোকানে ঢুকে বিক্রেতার বয়স দেখেও চোখ ছানাবড়া। মেরেকেটে ১০-১২ বছরের রোগাসোগা ছেলেটাই এখানে মদের কারবার সামলাচ্ছে। তার কাছ থেকেই জানা গেল, প্রায় দ্বিগুণ বাজার দরে এখানে মদ বিক্রি হয়।

স্থানীয় মানুষজনের অভিযোগ, বিষয়টা অজানা নয় পুলিশের। কিন্তু সেখানেও মাসোহারা পৌঁছে যায়। তাই পুলিশ কিছু দেখেও দেখে না। এক মুরগির মাংস দোকানের মালিক নিজেও জানালেন সে কথা। মাংসের দোকানের আড়ালে মদ বিক্রি করেন তিনিও। ওই ব্যবসায়ীর কথায়, ‘‘মাস শেষ হতে না হতেই পুলিশ টাকার জন্য দোকানে হাজির হয়। প্রতিমাসে হাজার টাকা করে দিই।’’

কিন্তু অল্পবয়সীদের কাছে মদ বেচেন কেন? ওই বিক্রেতার সাফ জবাব, ‘‘টাকার জন্য ব্যবসা করি। ক্রেতার বয়স দেখার আমার দরকার নেই। তা ছাড়া আমি নিরক্ষর। বয়সের প্রমাণপত্র দেখালে আমি তার কী বুঝব!’’

লাইসেন্স ছাড়া কেন এ ভাবে চলছে মদের কারবার?

আবগারি দফতরের এক আধিকারিক জানালেন, বেআইনি মদের দোকান হলে তাঁরা পদক্ষেপ করতে পারেন। কিন্তু এ ক্ষেত্রে অন্য ব্যবসার আড়ালে মদের কারবার চলে। ফলে বিষয়টি দেখার কথা পুলিশের।

মহকুমা পুলিশ সূত্রে জানানো হয়েছে, বেআইনি মদের কারবার নিয়ে কেউ কোনও অভিযোগ করেননি। তা ছাড়া, পুলিশ টাকা নিয়ে এ সব বেআইনি কাজে প্রশ্রয় দেয়, তেমন খবরও নেই পুলিশের কাছে। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Meat Shop
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy