Advertisement
E-Paper

গ্যাংমানের কাজ সামলাচ্ছেন প্রমীলারাও

গ্যাংম্যানেরা নিশ্চই রয়েছেন। কিন্তু, বড় বড় হাতুড়ি-রেঞ্চ হাতে তাঁদের সঙ্গে আর যাঁরা রয়েছেন, তাঁরা মহিলা। এক মনে রেললাইনে লুব্রিক্যান্ট দিচ্ছেন, বোল্ট পরীক্ষা করছেন। কখনও আবার যন্ত্রপাতি নিয়ে কাজ করতেও দেখা গেল। জগদ্দল, শ্যামনগর এলাকায় এমন দৃশ্যে চমকাচ্ছেন অনেকেই।

সুপ্রকাশ মণ্ডল

শেষ আপডেট: ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০২:১২
দক্ষ: কাজ সামলাচ্ছেন মেয়েরা। ছবি: সজল চট্টোপাধ্যায়

দক্ষ: কাজ সামলাচ্ছেন মেয়েরা। ছবি: সজল চট্টোপাধ্যায়

কুয়াশামোড়া শীত-সকাল। ফুট কয়েক গিয়েই আটকে যাচ্ছে দৃষ্টি। রেল লাইনটা সেই কুয়াশায় হারিয়ে যাচ্ছে।

কিন্তু দূরের ঠক-ঠক আওয়াজটা অস্পষ্ট শোনা যাচ্ছে। আওয়াজটা ক্রমশ এগিয়ে এলে নজরে এল কয়েকটা লাল বিন্দু। সেই দৃশ্য কিছুটা স্পষ্ট হতেই বোঝা গেল, রেল লাইনে রোজকার রক্ষণাবেক্ষণের কাজ চলছে। যাঁরা কাজ করেন, লাল পোশাকের সেই গ্যাংম্যানরাই কাজ করছেন।

তবে চেনা দৃশ্যের থেকে এ ছবি কিছুটা আলাদা। গ্যাংম্যানেরা নিশ্চই রয়েছেন। কিন্তু, বড় বড় হাতুড়ি-রেঞ্চ হাতে তাঁদের সঙ্গে আর যাঁরা রয়েছেন, তাঁরা মহিলা। এক মনে রেললাইনে লুব্রিক্যান্ট দিচ্ছেন, বোল্ট পরীক্ষা করছেন। কখনও আবার যন্ত্রপাতি নিয়ে কাজ করতেও দেখা গেল। জগদ্দল, শ্যামনগর এলাকায় এমন দৃশ্যে চমকাচ্ছেন অনেকেই।

যাঁরা এ কাজে হাত লাগিয়েছেন, তাঁরাও উল্টে অবাক। প্রশ্ন করছেন, ‘‘এতে অবাক হওয়ার কী আছে? মহিলারা বিমান চালাচ্ছেন, জাহাজ চালাচ্ছেন, অ্যাপ ক্যাবে হাত পাকাচ্ছেন, আরও কত কী করছেন— তার তুলনায় এ কাজ তো নেহাতই সামান্য!’’

রেলও বলছে, এতে আশ্চর্যের কিছু নেই। মহিলারা নিজে থেকেই এই কাজে আসতে চেয়েছেন। পূর্ব রেলের জনসংযোগ আধিকারিক রবি মহাপাত্র বলেন, ‘‘সময় ক্রমশ এগিয়ে চলেছে। মহিলারা কোনও কাজেই ব্রাত্য নন। সেটা তাঁরা প্রমাণ করে দিচ্ছেন। অযোগ্য তো ননই।’’ তিনি জানান, শুধু পূর্ব রেলই নয়, দেশজুড়ে এমন দৃশ্য আগামী দিনে আরও দেখা যাবে। কারণ, অন্যান্য অনেক কাজের মতো রেললাইন রক্ষণাবেক্ষণের কাজেও মহিলাদের নিয়োগ করা হবে।

কিন্তু কেমন করে তৈরি হল এমন ছকভাঙা কাহিনি? ঘরবন্দি না থেকে সরাসরি রেল লাইনের কাজে কী করে নেমে পড়লেন ওঁরা? পুরুষকর্মীদের সঙ্গে সমান তালে কাজ করার মানসিক জোরই বা ওঁরা পেলেন কী ভাবে?

রেল সূত্রে জানা গিয়েছে, গ্যাংম্যানদের মৃত্যুর পরে তাঁদের পরিবারের একজনকে চাকরি দেওয়া হয়। এটাই নিয়ম। সে ভাবেই চাকরি পেয়েছেন কারওর স্ত্রী, কারও বা মেয়ে।

তাঁদেরই একজন, লক্ষ্মী যাদব (নাম পরিবর্তিত)। বলেন, ‘‘স্বামীর মৃত্যুর পরে আমরা চাকরি তো পেলাম। কিন্তু সেই অর্থে কোনও কাজ ছিল না আমাদের। আজ এই কাজ, কাল সেই কাজ। ফলে আমরা চেয়েছিলাম স্থায়ী কোনও কাজ দেওয়া হোক আমাদের।’’

রবি মহাপাত্রও তেমনটাই জানাচ্ছেন। তিনি বলেন, ‘‘ওঁরা নিজেরাই এমন কাজে আসতে চেয়েছিলেন।’’ লক্ষ্মী বলছেন, ‘‘আমরাই বলেছিলাম কোনও কাজেই আমাদের আপত্তি নেই। যখন আমাদের রেল লাইনের কাজ করতে বলা হয়, তখন আমরা সঙ্গে সঙ্গে রাজি হয়ে যাই। এখন তো পুরুষদের সঙ্গেই কাজ করছি। কোনও অসুবিধা হচ্ছে না।’’ কাজে অসুবিধা না হলেও অন্য সমস্যা রয়েছে বলে মানছেন মহিলারা। দিনভর লাইনে কাজ। কিন্তু লাইনের ধারে শৌচাগার নেই। ফলে বেশ অসুবিধায় পড়তে হয়।

স্বচ্ছ ভারত নিয়ে চার দিকে এত প্রচার। তার মধ্যেও ওই মহিলাদের অসুবিধায় কিছু প্রশ্ন তো উঠছেই। রবিবাবু বলেন, ‘‘অসুবিধার কিছু নেই। স্টেশনে ব্যবস্থা তো আছেই।’’

Women Gangman
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy