দলবদ্ধ: কলসদ্বীপে চোখে পড়ছে এরা।। নিজস্ব চিত্র
গত কয়েক দিন ধরে সুন্দরবনের বিভিন্ন এলাকায় দেখা মিলছে পরিযায়ী পাখিদের। শীত পড়তেই ঝাঁকে ঝাঁকে পরিযায়ী পাখি ভিড় করছে বাদাবনে। এক সময়ে শীতের মরসুমে এই সব এলাকায় প্রচুর পরিযায়ী পাখির আনাগোনা লেগে থাকত। কিন্তু ক্রমশ সেই সংখ্যা কমে গিয়েছিল। স্থানীয় সূত্রের খবর, গত বছর থেকে ফের পাখির সংখ্যা বেড়েছে। এ বারও প্রচুর পাখি এসেছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, সুন্দরবনের বহু এলাকায় গত কয়েক বছরে নতুন করে ম্যানগ্রোভের অরণ্য গড়ে উঠেছে। তার ফলে ফের সুন্দরবনে আসতে শুরু করেছে পরিযায়ী পাখিরা। তা ছাড়া, করোনা পরিস্থিতিতে দীর্ঘ দিন সুন্দরবনে লঞ্চ, বোট বন্ধ থাকায় দূষণ কমেছে। সেটাও পাখিদের ফিরে আসার অন্যতম কারণ বলে মনে করছেন অনেকে।
ভিন্ দেশি অতিথিদের রক্ষা করতে উদ্যোগী হয়েছে দক্ষিণ ২৪ পরগনা বন বিভাগ। ইতিমধ্যে একাধিক জায়গায় পাহারার ব্যবস্থা করা হয়েছে বন দফতরের তরফে। নদীতেও টহলদারি চলছে। দক্ষিণ ২৪ পরগনা বনবিভাগের বিভাগীয় বনাধিকারিক মিলনকান্তি মণ্ডল বলেন, “গত কয়েক বছরে আমরা প্রচুর ম্যানগ্রোভ রোপণ করেছি। নতুন জঙ্গল তৈরি হয়েছে। সেই সব জায়গায় পাখিদের জন্য প্রচুর খাবার পাওয়া যাচ্ছে। তার টানে পরিযায়ী পাখিরা ফের ভিড় জমাচ্ছে সুন্দরবনে। এই পাখিদের যাতে কেউ শিকার না করে, সে জন্য পাহারা বসানো হয়েছে।”
পাখি বিশারদেরা জানান, এই সময়ে শীতপ্রধান দেশগুলিতে ঠান্ডা বাড়ে। সেখান থেকে পাখিরা হাজার হাজার কিলোমিটার পথ পেরিয়ে সাধারণত কম ঠান্ডার দেশে চলে আসে। কিছু দিন কাটিয়ে আবার ফিরে যায়। রাশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, ফিনল্যান্ড থেকে শীতের সুন্দরবনে আসে বহু পাখি।
বিভিন্ন দেশের ৪০টির বেশি প্রজাতির পরিযায়ী পাখির দেখা মেলে এখানে। কলকাতার একটি পাখি পর্যবেক্ষক সংস্থা গত বছর সুন্দরবনে সমীক্ষা চালিয়ে জানতে পেরেছে, রাশিয়ার সাইবেরিয়া থেকে কারলিউ (বড় গুলিন্দা), ফিনল্যান্ড থেকে ছোট গুলিন্দা (হুইমব্রেল), চিন, তুর্কিস্তান থেকে স্নাইপ (কাদাখোঁচা), তিব্বত থেকে মিঠুয়া (প্লোভার) পাখিরা সুন্দরবনে আসে। এ ছাড়াও, চখাচখি (রুড্ডি শেলডাক), ছোট দিঘর (গাডওয়াল), বামুনিয়া (টাফটেড ডাক) বিলিতি জিরিয়া (কেন্টিস) পাখিদেরও দেখা মেলে সুন্দরবনে। এ বার আরও নতুন কোনও প্রজাতির পাখি এসেছে কি না, তা জানতে এই সংস্থাটি ১৪ জানুয়ারি থেকে সমীক্ষা শুরু করেছে।
বন বিভাগ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, এ বার জম্বুদীপ, কলস, ঠাকুরান, মেছুয়া, ছাইমারি চরে সন্ধ্যার পরে হাজার হাজার বিদেশি পাখি আস্তানা গেড়েছে। ভগবতপুর, বকখালি, গঙ্গাসাগরের রামকর চর এবং মাতলা, বিদ্যাধরীর চরে পরিযায়ী পাখিদের ভিড় লেগে রয়েছে। বিকেলের পরে চরে কিচির মিচির শব্দে মন ভরে যাচ্ছে পর্যটক, স্থানীয় মানুষের।
সুন্দরবন ব্যাঘ্র প্রকল্পের ফিল্ড ডিরেক্টর অজয়কুমার দাস বলেন, “এ বছর বেশ কয়েকটি নতুন জায়গায় পরিযায়ী পাখিদের দেখা মিলছে। কোন কোন প্রজাতির পরিযায়ী পাখি এ বার এসেছে, সেগুলির গণনা শুরু হয়েছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy