Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪
হাবড়ায় ধরা পড়ল প্রতারণা চক্র

‘ভ্যানিশিং কালি’র কামাল

ব্যক্তিগত ঋণ পাইয়ে দেওয়ার নাম করে আর্থিক প্রতারণার একটি চক্রের হদিস পেল হাবড়া থানার পুলিশ। সম্প্রতি হাবড়ার এক মহিলা ওই চক্রের খপ্পরে পড়ে প্রায় ৩৫ হাজার টাকা খুইয়েছেন। মহিলার অভিযোগ পেয়ে পুলিশ তদন্তে নেমে শুক্রবার বিকেলে মছলন্দপুর থেকে ওই চক্রের এক মহিলাকে গ্রেফতার করে। পুলিশ জানিয়েছে, ধৃতের নাম সুদেষ্ণা সেনগুপ্ত।

নিজস্ব সংবাদদাতা
হাবড়া শেষ আপডেট: ১৫ জুলাই ২০১৮ ০৯:৩০
Share: Save:

ব্যক্তিগত ঋণ পাইয়ে দেওয়ার নাম করে আর্থিক প্রতারণার একটি চক্রের হদিস পেল হাবড়া থানার পুলিশ।

সম্প্রতি হাবড়ার এক মহিলা ওই চক্রের খপ্পরে পড়ে প্রায় ৩৫ হাজার টাকা খুইয়েছেন। মহিলার অভিযোগ পেয়ে পুলিশ তদন্তে নেমে শুক্রবার বিকেলে মছলন্দপুর থেকে ওই চক্রের এক মহিলাকে গ্রেফতার করে। পুলিশ জানিয়েছে, ধৃতের নাম সুদেষ্ণা সেনগুপ্ত। বাড়ি কলকাতার গড়ফা থানা এলাকায়।

পুলিশ জানিয়েছে, তদন্তে নেমে প্রতারণা চক্রের কাজকর্ম সম্পর্কে প্রচুর তথ্য হাতে এসেছে। চক্রের বাকিদের খোঁজেও তল্লাশি শুরু হয়েছে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সম্প্রতি হাবড়ার জয়গাছি এলাকার বাসিন্দা মিঠু পালের মোবাইলে একটি ফোন আসে। সিভিক ভলান্টিয়ার। একটি ঋণদানকারী সংস্থার নাম করে তাঁকে বলা হয়, ব্যক্তিগত ঋণ দেওয়া হবে। সে জন্য আইটি ফাইল, ভোটার পরিচয়পত্র, প্যান কার্ড-সহ কিছু নথি দরকার। পর দিন ফের ফোন আসে। মিঠু ঋণ নিতে রাজিও হয়ে যান।

৬ জুলাই বিকেলে এক মহিলা ও এক পুরুষ মিঠুর বাড়িতে আসে। ২ লক্ষ টাকা ঋণ পাইয়ে দেবে বলে জানায়। নথিপত্র দিয়ে দেন মিঠু। ব্যাঙ্কের একটি ‘ক্যানসেলড চেক’ও দেন। সার্ভিস চার্জ বাবদ ১৪৯ টাকার আর একটি চেক নেওয়া হয় তাঁর থেকে। পর দিন তাঁর মোবাইলে মেসেজ আসে, অ্যাকাউন্ট থেকে ৩৫,৫০০ টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে।

মহিলার কাছ থেকে অভিযোগ পেয়ে তদন্তে নামে হাবড়া থানার পুলিশ। শুক্রবার মছলন্দপুরের এক মহিলা ও এক পুরুষ বিভিন্ন বাড়িতে গিয়ে ঋণ পাইয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছিল বলে খবর আসে। মছলন্দপুর ও গোবরডাঙা ফাঁড়ির পুলিশ অভিযান চালায়। পুরুষটি পালিয়ে গেলেও সুদেষ্ণা নামে একজনকে পুলিশ ধরে ফেলে। মিঠু থানায় এসে তাকে শনাক্ত করেন।

কী ভাবে প্রতারণা চক্রটি কাজ করে?

তদন্তকারী অফিসারেরা জানান, কলকাতা থেকে চক্রটি কাজকর্ম দেখাশোনা করে। প্রথমে ইন্টারনেটের মাধ্যমে বিভিন্ন এলাকার মানুষের মোবাইল নম্বর সংগ্রহ করে। সেই নম্বরে ফোন করে কম সুদে মোটা টাকা ঋণ পাইয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়। কেউ রাজি হলে বাড়িতে হাজির হয়ে নথিপত্র, চেক নিয়ে আসে।

হাবড়া থানার আইসি গৌতম মিত্র জানান, ‘ভ্যানিশিং কালি’ ব্যবহার করত প্রতারকেরা। ‘ঋণগ্রহীতার’ কাছ থেকে চেক নিয়ে তারা নিজেরাই লিখত। কিন্তু যে পেন ব্যবহার করত, তাতে থাকত ভ্যানিশিং কালি। ওই কালিতে লিখলে কিছুক্ষণের মধ্যেই লেখা আপনা থেকে মুছে যায়। চেকে সই অবশ্য গ্রাহকের নিজের পেনেই করানো হত। ফলে কিছুক্ষণের মধ্যেই প্রতারকদের হাতে এমন একটি চেক চলে আসত, যাতে গ্রাহকের সই থাকলেও বাকিটা থাকত ফাঁকা। সেখানে ইচ্ছে মতো টাকার অঙ্ক বসিয়ে টাকা তুলে নেওয়া হত সংশ্লিষ্ট ব্যাঙ্ক থেকে। ঋণ পেতে হলে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে অন্তত ৪০ হাজার টাকা থাকতে হবে বলে প্রতারকেরা জানাত।

পুলিশের এক কর্তা জানান, ‘ভ্যানিশিং কালি’ ব্যবহার করে জালিয়াতি আগে প্রচুর দেখা যেত। কিন্তু ইদানীং তেমন শোনা যায় না। তবু সতর্ক থাকা উচিত। নথিপত্রে সই করার সময়ে নিজের পেন ব্যবহার করাই ভাল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Money Fraud Money Fraud Racket
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE