Advertisement
E-Paper

অবহেলায় থমকে নদীর গতিপথ, বিপাকে কৃষি

উঁচু কোনও জায়গায় দাঁড়িয়ে দেখলে মনে হবে সামনে বিস্তৃত মাঠ। যেমন মনে হয় হরিদাসপুর সেতুর উপর দাঁড়ালে। কিন্তু আসলে ওটি একটি নদী। বছর কুড়ি আগেও গভীরতা ছিল। ছিল স্রোত। এখন সবই অতীত।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৫ জুন ২০১৫ ০১:৩২
মাছ ধরার জন্য পরিষ্কার হচ্ছে নদী।—নিজস্ব চিত্র।

মাছ ধরার জন্য পরিষ্কার হচ্ছে নদী।—নিজস্ব চিত্র।

উঁচু কোনও জায়গায় দাঁড়িয়ে দেখলে মনে হবে সামনে বিস্তৃত মাঠ। যেমন মনে হয় হরিদাসপুর সেতুর উপর দাঁড়ালে। কিন্তু আসলে ওটি একটি নদী। বছর কুড়ি আগেও গভীরতা ছিল। ছিল স্রোত। এখন সবই অতীত।

নদীর নাম— নাওভাঙা। এক সময়ে নৌকা চলত সেখানে। যাতায়াত করতেন স্থানীয় বাসিন্দারা। কিন্তু এখন সে নদীর বুকে শুধুই কচুরিপানা, শ্যাওলা। মাঝখানে মাঝখানে সামান্য জল উঁকি মারে। দেখলে বড়জোর কোনও বদ্ধ জলাশয় মনে হতে পারে।

উত্তর ২৪ পরগনার নাওভাঙা এক সময়ে ছিল স্রোতস্বিনী। নদী পাড়ের মানুষের নানা স্বাভাবই নদীর এই দশ করেছে। দীর্ঘদিন ধরে পলি জমতে জমতে নাব্যতা হারিয়ে গিয়েছে। এলাকার চাষিদের কাছে আজ দুঃস্বপ্নের মতো নাওভাঙা। প্রশাসনের কাছে একাধিকবার দরবার করেও কোনও ফল হয়নি। কোথাও কোনও উদ্যোগ নেই নদী সংস্কারের। বরং আরও বেশি করে নদীকে শোষণ করে চলেছেন এক শ্রেণির মানুষ।

সামান্য যেটুকু জল রয়েছে, সেখানেও বাঁধ দিয়ে জলের স্বাভাবিক গতি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। কোথাও হাঁটু জল, কোথাও বুক সমান আবার কোথাও কোমর সমান জলে মাছ ধরেন অনেকে। ভেচাল, পাটা, কোমরের মতো মাছ ধরার জালে ছেয়ে গিয়েছে নদীর একাংশ। ফলে কোনও ভাবেই নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ তৈরি হওয়া সম্ভব নয়। হরিদাসপুর এলাকায় নদীর এমনই অবস্থা যে কচুরিপানা তুলে ধরে মাছ খুঁজে বেড়ান মৎস্যজীবীরা। কিন্তু এখন তেমন মাছ আর মেলে না। শোল, শিঙি, চ্যাঙ মাছ কিছু পাওয়া যায়, জানালেন তাঁরাই। তবু নিয়মিত ছোট জাল ফেলেন মজা নদীতে।

প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, পশ্চিমবঙ্গে বনগাঁর ভিড়ে গ্রামের কাঁটাখাল থেকে শুরু হয়েছে নাওভাঙা নদী। তারপর স্থানীয় হরিদাসপুর, নরহরিপুর, খলিতপুর, ছয়ঘরিয়ার মধ্যে দিয়ে পিরোজপুর-পেট্রাপোল বাঁওরে গিয়ে পড়েছে। সেখান থেকে তিন কিলোমিটার লম্বা বালির খালের মাধ্যমে নাওভাঙা মিশেছে ইছামতী নদীর সঙ্গে। প্রায় ১৪ কিলোমিটার লম্বা নাওভাঙায় এক সময় সারা বছরই জল থাকত। মাছ ধরে রুটি রুজি জোগাতেন মৎস্যজীবিরা। সে সব এখন অতীত।

নদীর বেহাল দশায় সবচেয়ে বেশি বিপাকে ছয়ঘরিয়া গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার চাষিরা। প্রতি বছর নিয়ম করে ভাদ্র-আশ্বিন মাসে জলে ডুবে যায় হাজার হাজার বিঘা কৃষি জমি। জমা জল নামতে নামতে কেটে যায় আরও আড়াই-তিন মাস। সেই জমি চাষের উপযোগী হতে সময় লাগে আরও বেশ কিছু দিন। শুধু তাই নয়। বছরের পর বছর এই নিয়মে চলতে চলতে দু’ফসলি বা তিন ফসলি বহু জমিই এখন এক ফসলি জমিতে পরিণত হয়েছে বলে অভিযোগ চাষিদের।

নদীর গভীরতা প্রায় নেই বললেই চলে। তাই জমা জল বেরিয়ে যাওয়া তো দূরের কথা উল্টে নদীর জল উপচে ঢুকে পড়ে চাষের জমিতে। কৃষকদের দাবি, ‘‘শুধু প্রশাসনিক কর্তারা নন, রাজনৈতিক নেতাদের কাছেও বহুবার নদী সংস্কারের তদ্বির করা হয়েছে। কিন্তু কারও নজর নেই।’’ স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, ২০০৪ সালে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নদী সংস্কারের পরিকল্পনা করা হয়েছিল। কিন্তু কাজ এগোয়নি।

তবে অভিযোগ উঠছে অন্য তরফ থেকেও। বাসিন্দারা আঙুল তুলছেন কৃষকদের দিকেও। তাঁদের দাবি, পাট পচানোর জন্য কৃষকরা সরাসরি নদীতে ফেলে দেন পাট। তার ফলে কিছুটা হলেও নদীর নাব্যতা কমছে।

সেই সঙ্গে তাঁদের দাবি বালির খালেরও আশু সংস্কার প্রয়োজন। কিন্তু তেমনটা করা মুশিকল। খালের দু’ধারে বাংলাদেশ সীমান্ত। ফলে খাল সংস্কারের জন্য প্রয়োজন সে দেশের অনুমতিও। ছয়ঘরিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রাক্তন প্রধান তথা বর্তমান পঞ্চায়েত সদস্য তৃণমূলের সন্তোষ দাস বলেন ‘‘কয়েক বছর আগে একবার পঞ্চায়েতের পক্ষ থেকে কচুরিপানা পাটা-ভেচাল-কোমর তুলে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু এখন আবার সেই একই অবস্থা। একমাত্র ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে পলি তুলে নদী সংস্কার করা না হলে সমস্যা মিটবে না।’’

তবে সে সমস্যা মেটাবে কে? জনপ্রতিনিধিরা সকলেই প্রতিশ্রুতি দেন। এ ক্ষেত্রেও তেমনই দিচ্ছেন। বনগাঁ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি অনিমা মণ্ডল বলেন ‘‘নাওভাঙা নদী সংস্কারের বিষয়টি জেলা প্রশাসনের কাছে জানানো হয়েছে।’’

বনগাঁর মহকুমাশাসক সুদীপ মুখোপাধ্যায় জানান, ‘‘নদী সংস্কারের বিষয় নিয়ে সাম্প্রতিক অতীতে মহকুমার প্রশাসনিক স্তরে কোনও আলোচনা হয়নি। তবে এলাকার মানুষের দাবির বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখা হবে।’’ উত্তর ২৪ পরগনা জেলা পরিষদের সভাধিপতি রহিমা মণ্ডল বলেছেন, ‘‘বিষয়টি আমি যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়ে দেখছি। জেলাপ্রশাসন ও সেচ দফতরের সঙ্গে আলোচনায় আমি নাওভাঙা সংস্কারের কথা তুলেছি।’’

এ দিকে জেলা পরিষদের আনাচে কানাচে শোনা যাচ্ছে স্পষ্ট সাফাই, মূলত টাকার অভাবেই ওই নদী সংস্কারের কাজ শুরু করা যাচ্ছে না।

naobhanga river naobhanga garbage naobhanga agriculture naobhanga agri irrigation
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy