সংস্কৃতিকেন্দ্র: গোবরডাঙায়। ছবি: সুজিত দুয়ারি।
শেষমেশ স্বপ্নপূরণ হতে চলেছে শহরবাসীর। শীঘ্রই গোবরডাঙার মানুষ পেতে চলেছেন একটি আধুনিক অডিটোরিয়াম।
গোবরডাঙা শহরের মানুষ নাটকপ্রেমী। দীর্ঘদিন ধরে তাঁদের চাহিদা ছিল নাট্যচর্চার জন্য একটি স্থায়ী মঞ্চের। ওই দাবিতে এলাকার নাট্যকর্মী সংস্কৃতিকর্মী থেকে সাধারণ মানুষ দীর্ঘ আন্দোলনও করেছিলেন।
শহরবাসীর দাবি মেনে ২০১৪ সালের অক্টোবর মাস থেকে গোবরডাঙা পুরসভা অডিটোরিয়ামের কাজ শুরু করেছিল।
গোবরডাঙার পুরপ্রধান সুভাষ দত্ত বলেন, ‘‘চলতি বছরের মার্চ মাসের মধ্যে অডিটোরিয়ামটির উদ্বোধন করা হবে। এখন শুধু সিলিং ও সিট বসানোর কাজটাই বাকি। অডিটোরিয়ামটি তৈরি করতে খরচ হয়েছে প্রায় ৫ কোটি টাকা।’’ পুরসভার নিজস্ব তহবিল ছাড়াও সাংসদ, বিধায়ক ও সাধারণ মানুষের দানের টাকায় এটি তৈরি হয়েছে বলে তিনি জানান। অডিটোরিয়াম উদ্বোধনের খবরে খুশি এলাকাবাসী।
নাট্য পরিচালক ও নকশা নাট্য সংস্থার কর্ণধার আশিস দাস বলেন, ‘‘একটু দেরি হলেও মার্চের মধ্যে অডিটোরিয়াম উদ্বোধন হওয়াটা আমাদের কাছে সুখবর। গোবরডাঙায় আধুনিক থিয়েটার মঞ্চের খুবই প্রয়োজন ছিল।’’
নাট্য পরিচালক তথা শিল্পায়ন নাট্য সংস্থার কর্ণধার আশিস চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এর থেকে আনন্দের খবর আর কিছু হতে পারে না। শুধু নাট্যপ্রেমী নয়, সংস্কৃতিপ্রেমী মানুষের স্বপ্নপূরণ হচ্ছে।’’
স্বপ্নচর নাট্য সংস্থার কর্নধার মহম্মদ সেলিম বলেন, ‘‘গোবরডাঙার মানুষের নাটক দেখার দীর্ঘদিনের অভ্যাস হারিয়ে যেতে বসেছিল। অডিটোরিয়াম উদ্বোধন হলে ফের সেই অভ্যাস ফিরে আসবে।’’
অডিটোরিয়াম তৈরি নিয়ে কম টালবাহানা হয়নি অতীতে। ২০১০ সালে বাম পরিচালিত পুরবোর্ডের তরফে অডিটোরিয়াম তৈরির জন্য প্রথম প্রস্তুতি নেওয়া হয়। রাজ্যের তৎকালীন পুরমন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্য অডিটোরিয়ামের শিলান্যাস করেন। ওই বছরের পুরভোটে বামেরা হেরে যায়। ২০১১ সালে রাজ্যে রাজনৈতিক পালা বদলায়। অডিটোরিয়াম তৈরির কাজ থমকে যায়। ২০১২ সালে মার্চে তৃণমূলের তৎকালীন রাজ্যসভার সাংসদ মুকুল রায়কে দিয়ে ফের পুরসভার তরফে অডিটোরিয়ামের শিলান্যাস করানো হয়। তারপরেও কাজ এগোয়নি। ক্ষোভ জমতে শুরু করে শহরবাসীর মধ্যে। শেষে ২০১৪ সালের অক্টোবর মাস থেকে কাজ শুরু হয়। ওই কাজই এখন শেষের মুখে।
পুরসভা ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০০০ সালের বন্যায় বহু বছরের পুরনো জরাজীর্ণ গোবরডাঙা টাউন হলটি কার্যত ধূলিসাৎ হয়ে যায়। তার আগে টাউন হলেই নাট্য চর্চা ও উৎসব হত। টাউন হলের জায়গাতেই নতুন অডিটোরিয়ামটি তৈরি হয়েছে।
নাট্যচর্চার জন্য গোবরডাঙা খ্যাতি গোটা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। গোবরডাঙা ও সংলগ্ন এলাকায় ছোট-বড় নাট্য দলের সংখ্যা এখানে গোটা তিরিশের মতো। সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, রুদ্রপ্রসাদ সেনগুপ্ত, বিভাস চক্রবর্তী, মনোজ মিত্রের মতো বহু মানুষ এখানে নাটক করে গিয়েছেন। এখানকার নাট্যচর্চার ইতিহাস প্রায় দেড়শো বছরের পুরনো। সেখানেই এতদিন অডিটোরিয়াম না থাকায় নাট্যপ্রেমীদের আক্ষেপ ছিল। এতদিনে তা মিটতে চলছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy