Advertisement
E-Paper

ক্ষতিপূরণ না পেয়ে ক্ষোভ অসুস্থদের

এখন পুরোপুরি অন্ধ। একা চলাফেরা করতে পারেন না। ২০১১ সালে বিষমদ-কাণ্ডের চিহ্ন বয়ে বেড়াচ্ছেন হাসিবুল। সংগ্রামপুর স্টেশন থেকে ঢিলছোড়া দূরত্বে গলির ভিতরে ছোট মাটির বাড়িতে সারা দিন বসে থাকা ছাড়া তেমন কোনও কাজ নেই। 

  শুভাশিস ঘটক

শেষ আপডেট: ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০১:৩৬
দৃষ্টিহীন: বিষ মদে দৃষ্টি গিয়েছে হাসিবুলের। সঙ্গে তাঁর পরিবার

দৃষ্টিহীন: বিষ মদে দৃষ্টি গিয়েছে হাসিবুলের। সঙ্গে তাঁর পরিবার

বছর সাতেক আগে সংগ্রামপুর স্টেশনে মুটেগিরি করতেন হাসিবুল গায়েন। এখন পুরোপুরি অন্ধ। একা চলাফেরা করতে পারেন না। ২০১১ সালে বিষমদ-কাণ্ডের চিহ্ন বয়ে বেড়াচ্ছেন হাসিবুল। সংগ্রামপুর স্টেশন থেকে ঢিলছোড়া দূরত্বে গলির ভিতরে ছোট মাটির বাড়িতে সারা দিন বসে থাকা ছাড়া তেমন কোনও কাজ নেই।
হাসিবুলের বাড়ির সামনে দাঁড়াতেই এগিয়ে এলেন এক মহিলা। এক রকম ঝাঁঝিয়ে উঠে বললেন, ‘‘কী করতে এসেছেন? ছবি তুলতে? মদ খেয়ে অন্ধ হয়ে গিয়েছে। ওই ছবি তুলবেন?’’
মহিলা হাসিবুলের স্ত্রী মুর্শিদা বিবি। তাঁর কথায়, ‘‘যারা মদ খেয়ে মারা গিয়েছে, সে পরিবারগুলো তবু ২ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ পেয়েছে। কিন্তু যারা অন্ধ হয়ে গেল, অন্য রোগে ভুগছে, তাঁদের তো একটা টাকাও দিল না রাজ্য সরকার।’’ জানালেন, স্বামীর প্রতিবন্ধী কার্ড করিয়েছেন। কিন্তু প্রায় আট বছর পেরিয়ে গেলেও কোনও সরকারি সাহায্য পাননি। চার সন্তান আর স্বামীর দেখভাল করেন পরিচারিকার কাজ করে। বড় ছেলে দর্জির দোকানে কাজ করে। মগরাহাট, উস্তি ও মন্দিরবাজার থানা এলাকায় বিষমদ কাণ্ডের জেরে শ’দেড়েক মানুষ অন্ধ অথবা অসুস্থ হয়ে শয্যাশায়ী বলে দাবি স্থানীয় মানুষজনের।
২০১১ সালের ১২ ডিসেম্বর বিষমদ-কাণ্ডে ১৭২ জনের মৃত্যু হয়েছিল। মৃতের তালিকায় ছিল অনুপ মাকাল নামে এক নাবালকও। সংগ্রামপুরের মদের ভাটিতে ফাইফরমাস খাটত সে। নেশাগ্রস্ত হয়ে পড়ে বলে জানালেন দাদা অমিত। টেকপাঁজা, বিলন্দপুর, সংগ্রামপুর এলাকায় ঘুরলে এখনও বিষমদ-কাণ্ডের পরিণতির নানা উপস্থিতি চোখে পড়ে। সংগ্রামপুর বাজারে ভ্যান চালাতেন কাশীনাথ ঘোষ। বিষমদের জেরে তিনিও অন্ধ। স্ত্রী টুম্পার কথায়, ‘‘বাজারে কয়েক জন ব্যবসায়ী রাস্তার পাশে আমাকে একটি ছোট গুমটি দোকান দিয়েছেন। ওই দোকানে পান-বিড়ি-সিগারেট বিক্রি করি। কোনও রকমে সংসার চলে।’’ তিনি স্বামীর প্রতিবন্ধী কার্ড তৈরি করেছিলেন। কিন্তু এখনও পর্যন্ত সরকারি সাহায্য পাননি।’’ টুম্পার গলাতেও ক্ষোভের সুর। টুম্পা বলেন, ‘‘যারা মারা গিয়েছেন, তাঁদের পরিজনদের ২ লক্ষ টাকা ডাকঘরে জমা করে দিয়েছে রাজ্য সরকার। মাসে মাসে ওঁরা সুদ পাচ্ছেন। কিন্তু আমাদের তো কোনও ব্যবস্থাই করেনি কেউ।’’
উস্তির বিধায়ক তথা সংখ্যালঘু দফতরের প্রতিমন্ত্রী গিয়াসউদ্দিন মোল্লা অবশ্য বিষমদ-কাণ্ডের জেরে প্রতিবন্ধীদের আর্থিক সাহায্য দেওয়া হবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘ওই ঘটনায় তালিকা তৈরি করা হয়েছে। প্রতিবন্ধী কার্ড তৈরি করা হয়েছে। জেলা পরিষদ গঠন হওয়ার পরেই ওই তালিকা অনুযায়ী প্রতিবন্ধীদের আর্থিক সাহায্যের ব্যবস্থা করা হবে।’’ কিন্তু মন্ত্রীর কথায়, ‘‘একমাত্র আশি শতাংশ প্রতিবন্ধী হলেই তবে আর্থিক সাহায্য পাওয়া যাবে।’’
কিন্তু সকলে তো আশি শতাংশ প্রতিবন্ধী নন। সে ক্ষেত্রে কী হবে? মন্ত্রী জানান, ওই বিষয়েও পরবর্তী পর্যায়ে আলোচনা করে কোনও একটা উপায় বের করা হবে।

ছবি: দিলীপ নস্কর

Liquor Dispute Blind Corruption Negligence
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy