Advertisement
E-Paper

ত্রাণ শিবিরে মিলছে না শিশুখাদ্য, অভিযোগ

অন্য শিশুখাদ্য না থাকায় কোলের শিশুদের মুখে চিঁড়ে-গুড়-বিস্কুট গুঁজে দিতে বাধ্য হচ্ছেন তাদের মায়েরা।

নবেন্দু ঘোষ 

শেষ আপডেট: ০২ জুন ২০২১ ০৫:৪৯
অসহায়: মেলেনি শিশুখাদ্য, সন্তানকে বিস্কুট খাওয়াচ্ছেন মা। হিঙ্গলগঞ্জের উত্তর মামুদপুরের একটি শিবিরে।

অসহায়: মেলেনি শিশুখাদ্য, সন্তানকে বিস্কুট খাওয়াচ্ছেন মা। হিঙ্গলগঞ্জের উত্তর মামুদপুরের একটি শিবিরে। নিজস্ব চিত্র।

কারও বয়স ন’মাস। কেউ সবে এক বছর পেরিয়েছে। ত্রাণশিবিরে থাকা ওই সব দুধের শিশুদেরও খেতে হচ্ছে বড়দের খাবার। কেউ খেতে চাইছে না, কেউ খেয়ে বমি করছে। গুঁড়ো দুধ বা অন্য শিশুখাদ্য না থাকায় কোলের শিশুদের মুখে চিঁড়ে-গুড়-বিস্কুট গুঁজে দিতে বাধ্য হচ্ছেন তাদের মায়েরা। হিঙ্গলগঞ্জ ব্লকের হিঙ্গলগঞ্জ পঞ্চায়েতের উত্তর মামুদপুরের ত্রাণশিবিরগুলিতে দেখা যাচ্ছে এই ছবি।

জলোচ্ছ্বাসে উত্তর মামুদপুরে গৌড়েশ্বর নদীর বাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয়েছে অনেক গ্রাম। বাচ্চাদের নিয়ে সেখানকার কয়েকশো মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন স্থানীয় মসজিদ ও বিভিন্ন স্কুলে। এখনও বাড়ি ফিরে যেতে পারেনি বহু মানুষ। মসজিদের ত্রাণশিবিরে আশ্রয় নেওয়া ফারাহা খাতুনের বাড়ি জলোচ্ছাসে ডুবেছিল। কোনওরকমে ন’মাসের বাচ্চাকে নিয়ে উঠে এসেছিলেন মসজিদে। তিনি বলেন, “আমাদের মাটির বাড়ি এখন আর বসবাসের উপযুক্ত নেই। ন’মাসের বাচ্চাকে নিয়ে মসজিদে এসেছি। এখানে সরকারের তরফে যে রান্না করা খাবার দেওয়া হচ্ছে, তাতে বড়দের যা হোক করে চলে যাচ্ছে। আমার বাচ্চা কেনা দুধ এবং শিশুখাদ্য খেত। সে সব কিছু পাচ্ছি না এখানে। এখন শুধু বিস্কুট খাওয়াতে হচ্ছে বাচ্চাকে। কিন্তু, তা খেতে না পেরে বাচ্চা কান্নাকাটি করছে। একটু দুধ পেলে ভাল হত।”

মসজিদে আশ্রয় নেওয়া খাদিজা বিবির বাচ্চার বয়স সবে ১১ মাস। তাঁর কথায়, “যে দিন থেকে এখানে আছি, সেই দিন থেকেই বাচ্চার জন্য দুধ পাচ্ছি না। কখনও ভাত গলিয়ে খাওয়াচ্ছি, কখনও মুড়ি বা বিস্কুট খাওয়ানোর চেষ্টা করছি। বাচ্চা ওই খাবার খাওয়ার উপযুক্ত হয়নি। ফলে, ও খেতে পারছে না। খুব সমস্যায় আছি।” একই বক্তব্য রুনা বিবি, আসিফা বিবি-সহ মসজিদে আশ্রয় নেওয়া মায়েদেরও। স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা জানান, ত্রাণশিবিরে চিঁড়ে-গুড়ের সঙ্গে ছোট দুধের প্যাকেট দেওয়া হয়েছিল একদিন। তবে তা যথেষ্ট নয়।

কী বলছে প্রশাসন?

এ প্রসঙ্গে হিঙ্গলগঞ্জ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি অর্চনা মৃধা বলেন, “পর্যাপ্ত শিশুখাদ্য বিভিন্ন ত্রাণশিবিরে পাঠানো হয়েছে। পঞ্চায়েতের সঙ্গে যোগাযোগ করলেই পাওয়া যাবে।” হিঙ্গলগঞ্জ পঞ্চায়েতের প্রধান তন্দ্রা মণ্ডলের দাবি, “পর্যাপ্ত শিশু-খাদ্য ত্রাণশিবিরগুলিতে পাঠিয়েছি। পঞ্চায়েত সদস্যদের জানালে অবশ্যই সেই সব পাওয়া যাবে।”

শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ আবিরলাল দত্ত বলেন, “কেনা দুধ পাওয়া না গেলে ছ’মাসের বেশি বয়সের বাচ্চাকে মায়ের দুধের পাশপাশি চিঁড়ে-মুড়ি বা জলে ভেজানো বিস্কুটের গুঁড়ো খাওয়ানো যেতে পারে।”

ওই গ্রামে জল স্তর কিছু জায়গায় সামান্য কমেছে। তবে অনেক বাড়ি এখনও জলমগ্ন। গ্রামের ভিতরে নৌকা চলছে। ভাসছে ছাগলের দেহ আর মরা মাছ। দুর্গন্ধে থাকা যাচ্ছে না গ্রামে। জলের তোড়ে ইট উঠে গিয়েছে রাস্তা থেকে। কোথাও আবার রাস্তা ভেঙে গিয়েছে। স্থানীয় মানুষজন রাস্তায় বাঁশের সাঁকো বানিয়ে যাতায়াত করছেন।

স্থানীয় বাসিন্দা সরিকুল গাজি, ফতেমা বিবি ও জিয়াজুল গাজি বলেন “ ত্রাণশিবিরেই আছি। জল কমায় বাড়ির হাল দেখতে এসেছি। যা দেখছি, তাতে বাড়ি আর বসবাসের উপযুক্ত নেই। এখনও ত্রাণশিবিরেই থাকতে হবে।”

COVID-19 coronavirus
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy