Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

ভিনরাজ্যের বৃদ্ধকে ঘর খুঁজে দিল হ্যাম রেডিয়ো

মহারাষ্ট্রের চন্দ্রপুর জেলার কোঠারি থানার কোঠারি গ্রামের রাজারাম বোনগিরবার এখন পঁচাত্তর বছরের বৃদ্ধ।

ফেরা: গঙ্গাসাগর থেকে বাড়ি ফিরলেন বৃদ্ধ। নিজস্ব চিত্র

ফেরা: গঙ্গাসাগর থেকে বাড়ি ফিরলেন বৃদ্ধ। নিজস্ব চিত্র

সুপ্রকাশ মণ্ডল
কলকাতা শেষ আপডেট: ০১ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০০:৫৮
Share: Save:

সূত্র বলতে ছিল, কেবলমাত্র একটা স্কুলের নাম। সেই পথেই ঘরে ফিরিয়ে দেওয়া গেল মরাঠি বৃদ্ধকে। মাঝে কেটে গিয়েছে পঁচিশটা বছর।

মহারাষ্ট্রের চন্দ্রপুর জেলার কোঠারি থানার কোঠারি গ্রামের রাজারাম বোনগিরবার এখন পঁচাত্তর বছরের বৃদ্ধ। কেমন করে যেন গঙ্গাসাগর মেলায় পৌঁছে গিয়েছিলেন। ফিরতে পারেননি। আসলে তাঁর ফেরার ছিল না কোথাও।

মেলা শেষে সাগরদ্বীপে রাস্তার ধারে বসে থাকতে দেখে পুলিশ তাঁকে ভর্তি করেছিল হাসপাতালে। শেষ পর্যন্ত তাঁকে বাড়ি খুঁজে দিল হ্যাম রেডিয়ো ক্লাব। ও দিকে বারো বছর অপেক্ষার পরে রাজারামের স্ত্রী শকুন্তলার এখন বিধবা-বেশ। প্রথমটা বিশ্বাসই করতে পারেননি, স্বামী জীবিত। কিন্তু রাজারামের পায়ের ক্ষতচিহ্ন, মাথার জন্মদাগ দেখে তাঁকে চিনতে পেরেছেন স্ত্রী। মহারাষ্ট্রের পুলিশ রাজারামের ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে বৃহস্পতিবার বৃদ্ধকে বাড়ি ফেরাতে কাকদ্বীপে পৌঁছয়। দুপুরে সেখান থেকে রওনা দেয় কোঠারির দিকে।

মাঝের এতগুলো বছর আজও ঝাপসা রাজারামের কাছে। তেমন কিছু মনে করতে পারেন না। তাঁর পরিবার অবশ্য ধন্যবাদ জানিয়েছেন হ্যাম রেডিয়ো ক্লাবকে।

কেমন করে সম্ভব হল ফেরা?

কাকদ্বীপ মহকুমা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, গঙ্গাসাগর মেলা শেষ হওয়ার পরে পুলিশ কয়েক জনকে হাসপাতালে ভর্তি করে দিয়ে যায়। তাঁরা সামান্য অসুস্থ ছিলেন। তাঁদের মধ্যেই ছিলেন রাজারাম। দিন কয়েকের চিকিৎসায় চাঙ্গা হয়ে ওঠেন তিনি। কিন্তু কী ভাবে, কার সঙ্গে মেলায় এলেন, কোথায় বাড়ি— কোনও প্রশ্নেরই উত্তর দিতে পারেননি।

এই পরিস্থিতিতে হ্যাম রেডিয়ো ক্লাবের দ্বারস্থ হন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। ওয়েস্টবেঙ্গল হ্যাম রেডিয়ো ক্লাবের সম্পাদক অম্বরীশ নাগ বিশ্বাস বলেন, ‘‘কাজটা কঠিন ছিল। বাড়ির কোনও কথাই মনে করতে পারছিলেন না বৃদ্ধ। এমনকী, নিজের নামও ঠিকমতো বলতে পারেননি। এ সব ক্ষেত্রে আমরা স্মৃতিহারাদের সঙ্গে দীর্ঘক্ষণ গল্প করি।’’ অম্বরীশ জানান, গল্প করার সময়ে একবার মহারাষ্টীয় জাতীয় বিদ্যালয়ের নাম বলেন বৃদ্ধ।

এই একটি সূত্র ধরেই খোঁজ শুরু হয়। মহারাষ্ট্রে বেশ কয়েকটি স্কুলের খোঁজ মেলে। মহারাষ্ট্রের হ্যাম ক্লাবের সদস্য দত্তা দেওগাওকরকে বিষয়টি জানান অম্বরীশ। দত্তা মহারাষ্ট্র সরকারের প্রাক্তন আমলা। তিনি চন্দ্রপুর জেলার কোঠারিতে এমন একটি স্কুলের সন্ধান পান। দীর্ঘ খোঁজাখুজির পরে কোঠারি গ্রামে সন্ধান মেলে রাজারামের পরিবারের। পুলিশকে পাঠানো হয় রাজারামের ছবি। তাঁর এখনকার ছবি দেখে চিনতে পারেননি বাড়ির কেউ। তাঁর স্ত্রী শকুন্তলা জানান, তাঁর স্বামীর পায়ে একটি বড় কাটা দাগ রয়েছে। আর মাথার চুল সরালেই চোখে পড়ে জন্মদাগ। অম্বরীশ জানান, শকুন্তলার দেওয়া তথ্য মিলে যায়। সেই ছবি তুলে পাঠানো হয়। কোঠারি থানার ওসি সন্তোষ অম্বিকে জানান, পায়ের কাটা দাগ ও মাথার জরুলের ছবি দেখেই কাঁদতে শুরু করেন শকুন্তলা। বলেন, ‘‘ওই আমার স্বামী। বাড়িতে ফিরিয়ে আনো ওকে।’’ ওখান থেকে পুলিশ রাজারামের একটি পারিবারিক ছবি পাঠায়। সেই ছবিতে দেখেই স্ত্রীর নাম শকুন্তলা বলে ডেকে ওঠেন রাজারাম। তারপরে তাঁর বাড়ি ফেরা শুধু ছিল সময়ের অপেক্ষা।

জানা গিয়েছে, মহারাষ্ট্রে কোঠারিতে বনবিভাগে চাকরি করতেন রাজারাম। সামান্য মানসিক সমস্যা হয়েছিল। ১৯৯৪ সালে অফিসে যাওয়ার পরে আর বাড়ি ফেরেননি। মহারাষ্ট্র পুলিশ জানায়, সব মিটে যাওয়ার পরে বেঁকে বসেন রাজারামের বড় ছেলে সুনীল। তাঁরা জানান, বারো বছর অপেক্ষার পরে তাঁরা বাবার শ্রাদ্ধ করে ফেলেছেন। শকুন্তলা রাজারামের পেনশন পাচ্ছেন। তাঁদের সব নথিতেই বাবাকে মৃত বলে দেখানো রয়েছে। তাতে সমস্যা হতে পারে। দত্তা জানান, তাঁদের আশ্বাস দেওয়া হয়, কোনও সমস্যা হবে না। পরেই বাবাকে বাড়ি ফেরাতে রাজি হন সুনীল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Ham Radio Gangasagar
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE