মিশ্রণ: বনগাঁয় ছবিটি তুলেছেন নির্মাল্য প্রামাণিক
বড় মাপের ড্রামে রয়েছে নীলচে-সবুজ জল। ঝুড়ি ভর্তি পটল, উচ্ছে ও কাঁকরোল এনে ঢালা হচ্ছে ওই ড্রামে। সেখানে কিছুক্ষণ চুবিয়ে রাখার পরে সেই আনাজ পাড়ি দিচ্ছে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে। অভিযোগ, ওই ড্রামের জলে মেশানো রয়েছে তুঁতে। এই ভাবেই টাটকা হয়ে যাচ্ছে বাসি আনাজ।
উত্তর ২৪ পরগনার বনগাঁ, বাগদা গাইঘাটা, গোপালনগর, হাবরা অশোকনগর, স্বরূপনগর, বাদু়ড়িয়া- সহ সব হাটে গেলেই কম বেশি চোখে পড়বে এই জিনিস। এই ছবি বেশি দেখা যায় হাটবারে। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, বড়ো রাস্তার পাশেই প্রশাসনের নাকের ডগায় চলছে এই বেআইনি কারবার। টাটকা ভেবে সেই আনাজ খেয়ে ক্ষতি হচ্ছে মানুষের। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, দীর্ঘদিন ধরে তুঁতে মেশানো আনাজ খেলে লিভার জনিত সমস্যা দেখা দিতে পারে।
তবে দেরিতে হলেও এই জিনিস বন্ধ করতে প্রচার শুরু করেছে উত্তর ২৪ পরগনা জেলা পুলিশ। বনগাঁ মহকুমা-সহ জেলার বিভিন্ন এলাকায় তুঁতে মেশানো আনাজ নিয়ে সাধারণ মানুষ এবং ব্যবসায়ীদের সচেতন করতে লাগানো হয়েছে ফ্লেক্স। বনগাঁর এসডিপিও অনিল রায় বলেন, ‘‘বনগাঁ মহকুমায় ইতিমধ্যেই ৩০টি ফ্লেক্স লাগানো হয়েছে। আবেদন করা হয়েছে, আনাজে অস্বাস্থ্যকর রং মেশাবেন না এবং রং মেশানো খাবার কেনাবেচা করবেন না।’’
আনাজে তুঁতে মেশানো হয় কেন?
আরও পড়ুন: তিরিশটি হোটেলকে শো-কজ
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, চাষিরা আনাজ বিক্রি করেন ব্যবসায়ীদের। তার পর ব্যবসায়ীরাই তুঁতে মেশানো জলে ওই আনাজ ডুবিয়ে রাখেন। তাঁদের দাবি, যে আনাজ দূরে পাঠাতে হয় মূলত সেগুলিতেই তুঁতে কিংবা রং মেশানো হয়। না হলে সেগুলি পচে যায় অথবা শুকিয়ে যায়। তাই তুঁতে মেশানো ছাড়া উপায় নেই।
পুলিশ জানিয়েছে, ইতিমধ্যেই দেগঙ্গা, গোপালনগর, বাগদা এলাকা থেকে আনাজে রং মেশানোর অভিযোগে কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ধৃতদের বিরুদ্ধে রুজু হয়েছে জামিন অযোগ্য ধারায় মামলা। তবে তার পরেও আনাজে রং মেখানোর প্রবণতা পুরোপুরি বন্ধ হয়নি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যবসায়ী জানিয়েছেন, তুঁতে না মেশালে আনাজের দাম মিলবে না। তাই গোপনে এই কাজ চলবেই।
তবে উত্তর ২৪ পরগনা জেলা পুলিশ সুপার ভাস্কর মুখোপাধ্যায় অবশ্য জানিয়ে দিয়েছেন, ‘‘আইনি পদক্ষেপের পাশাপাশি আমরা মানুষের সচেতনতার উপরে জোর দিয়েছি। আনাজে তুঁতে অথবা অন্যান্য ক্ষতিকর রঙ মেশানোর বিরুদ্ধে জেলার সব জায়গায় অভিযান চলবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy