E-Paper

শাহজাহানের ‘কয়লা-করের’ চাপে ভাটা বিক্রি করেন মালিক

এক-একটি ইটভাটায় ৫-১০ লক্ষ ইট উৎপাদন হয় বছরে। একটি মাটির ইট চুল্লিতে পোড়াতে প্রায় আড়াইশো গ্রাম কয়লা লাগে।

নবেন্দু ঘোষ 

শেষ আপডেট: ০৮ জুন ২০২৪ ০৯:৩৯
বসিরহাট আদালত চত্বরে শেখ শাহজাহান। ছবি: নির্মল বসু 

বসিরহাট আদালত চত্বরে শেখ শাহজাহান। ছবি: নির্মল বসু 

একে তো নিম্নমানের কয়লা, তা-ও কিনতে হত বেশি দামে।

সন্দেশখালিতে ইটভাটা মালিকদের অনেকেই জানাচ্ছেন এ হেন অভিজ্ঞতার কথা। এক ভাটা মালিকের কথায়, ‘‘দাদার হুকুম, কয়লা কিনতে হবে তাঁর থেকেই!’’

ইডি-র দাবি, এই ‘হুকুম’ মানতে কার্যত বাধ্য হতেন সন্দেশখালি ও ন্যাজাটের ২৯টি ইটভাটার মালিকেরা। কয়লা কিনতেন সন্দেশখালির ‘বেতাজ বাদশা’, তৃণমূল নেতা শেখ শাহজাহানের কাছ থেকে। ইডির তদন্তে এমনই তথ্য উঠে এসেছে। ইটভাটার কারবারে বিপুল পরিমাণ কয়লা লাগে। ইডি-র দাবি, এক সময়ে তার পুরোটাই নিয়ন্ত্রণ করত শাহজাহান ও তার বাহিনী।

সন্দেশখালির এক ভাটা মালিকের কথায়, ‘‘একে তো নিম্নমানের কয়লা দিত শাহজাহান। তার উপরে টন-প্রতি ২-৩ হাজার টাকা বাড়তি গুণতে হত।’’ জানা গেল, এক ভাটা মালিক নাকি ‘দিদিকে বলো’ হেল্প লাইনে ফোন করে কয়লার এই কারবার নিয়ে নালিশ জানিয়েছিলেন। পরবর্তী সময়ে নানা সমস্যায় পড়তে হয়েছিল তাঁকে।

এক-একটি ইটভাটায় ৫-১০ লক্ষ ইট উৎপাদন হয় বছরে। একটি মাটির ইট চুল্লিতে পোড়াতে প্রায় আড়াইশো গ্রাম কয়লা লাগে। অর্থাৎ, ১ লক্ষ ইট উৎপাদন করতে কয়লা লাগে ২৫০ টন। টন-পিছু শাহজানের ‘রেট’ ২-৩ হাজার টাকা বেশি ধরলে মুনাফা কোন পর্যায়ে পৌঁছয়, সে হিসেবই আদালতকে জানিয়েছে ইডি। এক ভাটা মালিকের কথায়, ‘‘এক দিকে ইটের বাজার পড়তির দিকে, তার উপরে কয়লার বাড়তি দাম গুণতে গুণতে চরম ক্ষতির মুখে পড়তে হচ্ছিল। শেষে শাহজাহানকে বলি, বেশি ইট তৈরির ক্ষমতাই নেই আমার। দয়া করে আর কয়লা দেবেন না। যে যাত্রা কোনও রকমে রক্ষা পেয়েছিলাম।’’

তবে সকলে ‘রক্ষা’ পাননি। জানা গেল, ধামাখালির দু’টি ইটভাটার মালিক খরচ সামলাতে না পেরে শাহজাহানকে তাঁদের ভাটাই বিক্রি করে দেন!

সন্দেশখালির বিধায়ক তৃণমূলের সুকুমার মাহাতো এ সব নিয়ে মন্তব্য করতে চাননি। বিজেপি নেতা বিকাশ সিংহ বলেন, ‘‘এত দিন আমরা বলে এসেছি, শেখ শাহজাহানের সঙ্গে অনেক দুর্নীতির যোগ আছে। ইডির তদন্তে সে সবই উঠে আসছে।’’

ভাটা মালিকেরা অনেকেই জানালেন, মূলত ২০১৬ সাল থেকে কয়লার কারবারের দিকে নজর পড়ে শেখ শাহজাহানের। ২০২১ পর্যন্ত চলে সেই জোরজুলুম। কারও কারও অনুমান, ইডি কয়লা পাচার নিয়ে তদন্ত শুরু হওয়ায় সেখান থেকে হাত তুলে নেন শাহজাহান।

এ দিকে, বৃহস্পতিবার বসিরহাট আদালতে শেখ শাজাহানকে দেখে পুলিশের গাড়ি ঘিরে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান উঠল তৃণমূল কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে থেকে। এর আগেও একাধিক বার এই আদালতে নানা মামলায় তোলা হয়েছে শাহজাহানকে। সে সময়ে তেমন ভিড় চোখে পড়েনি। তবে এ দিন শাহজাহানের অনুগামীদের জমায়েত ছিল চোখে পড়ার মতো। অনুগামীদের দেখে হাত নাড়েন শাহজাহান।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

sandeshkhali

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy