Advertisement
৩০ এপ্রিল ২০২৪
Panihati Municipality

১১ কোটি টাকার বকেয়া বিদ্যুৎ-বিলে পর্যুদস্ত পানিহাটির ময়লা ফেলবে কলকাতা

বৃহস্পতিবার থেকে পানিহাটির আবর্জনা তুলতে শুরু করেছে কলকাতা পুরসভা। সিদ্ধান্ত হয়েছে, লোকসভা ভোট পর্যন্ত প্রতিদিন সেখান থেকে ডাম্পার এসে আবর্জনা তুলে নিয়ে ধাপায় ফেলবে।

An image of Panihati Municipality

পানিহাটি পুরসভা। —ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০৪:৪৬
Share: Save:

এক সমস্যা ঢাকার চেষ্টা শুরু হয়েছে। কিন্তু বেরিয়ে আসছে আরও সমস্যা!

জমে থাকা আবর্জনা অবশেষে সরানো শুরু হয়েছে ঠিকই। কিন্তু, গত এক বছরে বিদ্যুৎ সংযোগ বাবদ কয়েক কোটি টাকা বকেয়া। ফলে আবেদন করলেও নতুন সংযোগ মিলছে না। এমনই বেআব্রু অবস্থা রাজ্যের ‘এ’ গ্রেড পানিহাটি পুরসভার। ভাগাড় সরানোর দাবিতে চলা আন্দোলনের জেরে প্রায় এক মাস বন্ধ ছিল পুর এলাকার জঞ্জাল সাফাই। গোটা পানিহাটির বড় রাস্তার ধার কার্যত অস্থায়ী ভাগাড় হয়ে গিয়েছে। চলাফেরা করাই দায় হয়ে উঠেছে। জঞ্জাল-সমস্যা মেটাতে সাংসদ সৌগত রায়ের অনুরোধে পদক্ষেপ করেছেন কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম।

বৃহস্পতিবার থেকে পানিহাটির আবর্জনা তুলতে শুরু করেছে কলকাতা পুরসভা। সিদ্ধান্ত হয়েছে, লোকসভা ভোট পর্যন্ত প্রতিদিন সেখান থেকে ডাম্পার এসে আবর্জনা তুলে নিয়ে ধাপায় ফেলবে। বৃহস্পতিবার দু’টি এবং শুক্রবার ১০টি ডাম্পার এসে আবর্জনা তুলে নিয়ে গিয়েছে। পানিহাটির পুরপ্রতিনিধিদের দাবি, জমে থাকা সব আবর্জনা আগামী কয়েক দিনে সাফ হয়ে যাবে। তার পরে প্রতিদিন এলাকা থেকে পানিহাটি পুরসভার ছোট গাড়ি আবর্জনা সংগ্রহ করে বড় রাস্তার ধারে ফেলবে। এ জন্য বিটি রোড, নীলগঞ্জ রোড, সোদপুর-মধ্যমগ্রাম রোডে অমরাবতী মাঠ, ঈশ্বর চ্যাটার্জি রোডে জায়গা নির্দিষ্ট করা হয়েছে। পাশাপাশি রামচন্দ্রপুর ভাগাড়ের আবর্জনার পাহাড়ও সরাবে কলকাতা পুরসভা। পরে সেখানে কলকাতা মেট্রোপলিটন ডেভেলপমেন্ট অথরিটি (কেএমডিএ) জৈব সার প্রকল্প করবে।

ভাগাড় উচ্ছেদ কমিটির তরফে শ্যামল বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আমাদের সমস্যা বুঝে সরকার পদক্ষেপ করছে। সাংসদ সৌগত রায় অনেক চেষ্টা করেছেন। এটা তারই ফল।’’ তবে এখনই আন্দোলন থেকে তাঁরা সরছেন না বলেও জানাচ্ছেন শ্যামল। আবর্জনার ‘নরক-যন্ত্রণা’ আপাতত মিটতে শুরু করলেও অন্য সমস্যাগুলির সমাধান নিয়ে সংশয়ে শাসকদলের পুরপ্রতিনিধিরাই।

যেমন, গত ২২ ডিসেম্বর ‘স্টেট আর্বান ডেভেলপমেন্ট এজেন্সি’ (সুডা) পুরসভাকে চিঠি দিয়েছে। বলা হয়েছে, ন্যাশনাল আর্বান হেল্‌থ মিশনের অধীনে যে দু’টি প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্র তৈরি হয়ে গিয়েছে এবং আরও যে তিনটি কেন্দ্রের কাজ শেষের পথে, সেখানে বিদ্যুৎ সংযোগ মিলছে না। কারণ, পুরসভার বিদ্যুতের বিল বকেয়া। দ্রুত ব্যবস্থা নিতে পুর কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছে সুডা। জানা যাচ্ছে, ১ নম্বর ওয়ার্ডের সুখচর ও ৮ নম্বর ওয়ার্ডের নীলগঞ্জ রোডের স্বাস্থ্য কেন্দ্র প্রস্তুত। স্থানীয় তৃণমূল বিধায়ক নির্মল ঘোষের বাসস্থানের ওয়ার্ড ১৪ নম্বরের দীপ প্রাঙ্গণ, ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের তিন নম্বর গভর্নমেন্ট কলোনি ও ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের ময়রাপাড়ায় কাজ শেষের পথে।

পানিহাটির ১৪টি ওয়ার্ডে সিইএসসি এবং ২১টি ওয়ার্ডে বিদ্যুৎ সংযোগের দায়িত্বে রয়েছে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থা। পুরসভার নামে প্রায় হাজার তিনেক সংযোগ রয়েছে। যেখান থেকে পুর ভবন-সহ চারটি জল শোধন প্লান্ট, শ্মশান, সভাগৃহ, ৩৫টি কমিউনিটি হল, চারটি অনুষ্ঠান ভবন, স্বাস্থ্য কেন্দ্র, প্রায় ৩০ হাজার রাস্তার আলো, ৩৩টি উচ্চ বাতিস্তম্ভ, ১৭৫টি মাঝারি বাতিস্তম্ভ এবং অন্যান্য কাজে বিদ্যুৎ সরবরাহ হয়।

পুরসভার অন্দরের খবর, বিদ্যুৎ সরবরাহকারী দু’টি সংস্থা মিলিয়ে শেষ এক বছরে বিল বকেয়া ১১ কোটি। আগে বিল বাবদ কিছু টাকা পুরসভা দিত। বাকি টাকা প্রদান করত রাজ্য সরকার। শেষ এক বছরে কোনওটাই হয়নি। উপ-পুরপ্রধান সুভাষ চক্রবর্তী বলেন, ‘‘বকেয়া বিল মেটাতে সরকারকে অনুরোধ করেছি।’’ যদিও রাজ্য পুর দফতরের কর্তাদের দাবি, বিল মেটাতে পানিহাটি পুর কর্তৃপক্ষের তদ্বির কখনওই সে ভাবে দেখা যায়নি।

অর্থাভাবে পুর স্বাস্থ্য কেন্দ্র বন্ধ হতে চলার বিষয়ে রাজ্যের এক স্বাস্থ্যকর্তা বলেন, ‘‘ওষুধ, প্রয়োজনীয় অর্থ সবই দেওয়া হয়। সমস্যাটা পুরসভার অভ্যন্তরীণ।’’ পুরকর্মীরা বলছেন, ‘‘অফিসের প্রিন্টারে কালি নেই, পেন নেই। অবস্থা আর কত খারাপ হতে পারে, সেটাই দেখার।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Panihati municipality Panihati financial crisis
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE