তৎপরতা: প্লান্টের সরঞ্জাম বাজেয়াপ্ত করা হচ্ছে। ইনসেটে, বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে ওই প্লান্ট। ছবি: সুজিত দুয়ারি।
বেআইনি জলের প্লান্ট চালানোর অভিযোগে গ্রেফতার করা হল এক পার্শ্বশিক্ষককে। বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে প্লান্ট। বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে কিছু সরঞ্জাম।
অশোকনগরের ঈশ্বরীগাছা বাজার এলাকায় হাবড়া-নৈহাটি সড়কের পাশে দোতলা বাড়ির নীচের তলায় তৈরি হয়েছিল প্লান্ট। বৃহস্পতিবার দুপুরে বারাসত জেলা পুলিশের এনফোর্সমেন্ট ব্রাঞ্চের (ডিইবি) কর্তারা অভিযান চালান। সঙ্গে ছিল অশোকনগর থানার পুলিশ ও এক খাদ্য সুরক্ষা অফিসার। গ্রেফতার করা হয় প্লান্টের মালিক ইন্দ্রজিৎ মণ্ডলকে। তিনি নটনি হাইস্কুলের পার্শ্বশিক্ষক। অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে চলছিল বেআইনি পানীয় জল তৈরি। যে বাড়িতে প্লান্ট বসেছিল, সেটি ভাড়া নেওযা, না ইন্দ্রজিতের নিজের বাড়ি, তা খোঁজ করে দেখছেন তদন্তকারীরা।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, মাটির তলা থেকে পাইপ লাইনের মাধ্যমে জল তুলে ট্যাঙ্কে জমা করা হত। ওষুধ ও রাসায়নিক মিশিয়ে কিছুটা পরিস্রুত করা হত সেই জল। পরে তা প্লাস্টিকের জার ও বোতলে ভর্তি করে বাজারে বিক্রি করা হত। ডিইবি কর্তাদের দাবি, পানীয় জল উৎপাদনের জন্য প্লান্ট কর্তৃপক্ষের সংশ্লিষ্ট অনুমতি ছিল না। বেআইনি ভাবে কারবার চলছিল। ডিইবি সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই কারখানা থেকে উদ্ধার করা জলের নমুনা পরীক্ষার জন্য ল্যাবরেটরিতে পাঠানো হচ্ছে। বেআইনি কারবারে জড়িত আরও কয়েকজনের খোঁজ চলছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বেআইনি পানীয় জলের কারবার চলছিল প্রায় তিন বছর ধরে। বিশ্বজিৎ বসু নামে এক ব্যক্তি ওই কারখানা থেকে জল কিনে বাড়ি-দোকানে সরবরাহ করেন। তিনি বলেন, ‘‘২০ লিটার জল ১০ টাকায় কিনে বিক্রি করতাম। একজন শিক্ষক বেআইনি কিছু করতে পারেন, বুঝতেই পারিনি।’’
উত্তর ২৪ পরগনার হাবড়া, অশোকনগর এলাকায় আগেও বেশ কিছু বেআইনি জলের প্লান্টের সন্ধান পাওয়া গিয়েছে। মাঝে মধ্যে অভিযান চালায় এনফোর্সমেন্ট ব্রাঞ্চ। কেন বেআইনি পানীয় জলের এমন রমরমা কারবার?
স্থানীয় মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, জেলার বিস্তীর্ণ এলাকা আর্সেনিকপ্রবণ। বহু মানুষ জল কিনে পান করেন। অনেকেরই ধারণা, কেনা জল স্বাস্থ্যসম্মত। মানুষের এই বিশ্বাসকে কাজে লাগিয়ে ব্যাঙের ছাতার মতো বেআইনি পানীয় জল তৈরির প্লান্ট গজিয়ে উঠেছে।
আর্সেনিক দূষণ প্রতিরোধ কমিটি সূত্রে জানা গিয়েছে, অশোকনগর এলাকাটি আর্সেনিকপ্রবণ। কমিটির রাজ্য সম্পাদক অশোক দাস বলেন, ‘‘এই ধরনের কারখানার জলে উচ্চমাত্রায় আর্সেনিক থাকে। যা থেকে আর্সেনিক দূষণ ছড়িয়ে পড়ে। নিয়মিত এই জল পান করলে ক্যানসার, কিডনির রোগ হতে পারে।’’ অশোক জানান, জেলায় ভূগর্ভস্থ জলের এমনিতেই সঙ্কট তৈরি হয়েছে। বেআইনি কারখানাগুলি মাটির নীচ থেকে প্রচুর পরিমাণ জল তুলে নেওয়ায় সঙ্কট আরও ভয়াবহ হতে চলেছে।
পুলিশ ও ডিইবি সূত্রে জানা গিয়েছে, পানীয় জলের ব্যবসা করতে হলে, জল দূষণমুক্ত ও জীবাণুমুক্ত কিনা, তার উপযুক্ত পরীক্ষার ব্যবস্থা থাকার কথা। ওই জল পরীক্ষার জন্য একজন কেমিস্ট ও মাইক্রোবায়োলজিস্ট থাকা বাধ্যতামূলক। তিনিই জল পরীক্ষা করে শংসাপত্র দেবেন। অশোকনগরের কারখানায় কোনও কেমিস্ট ছিলেন না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy