E-Paper

অঙ্গনওয়াড়ি চলছে ভবঘুরের মতো, ক্ষোভ জমছে অভিভাবকদের

বৃষ্টি হলে ঝুপড়ির ভিতরে রান্না করা খুবই সমস্যার, কাদা-জলে ভরে যায় চারদিক। সাপ, পোকামাকড়ের উৎপাত হয়।

নবেন্দু ঘোষ 

শেষ আপডেট: ০৬ নভেম্বর ২০২৩ ০৯:০৮
এই ঝুপড়ির ভিতরে চলে রান্না ও এখানে বসতে হয় বাচ্চাদের।

এই ঝুপড়ির ভিতরে চলে রান্না ও এখানে বসতে হয় বাচ্চাদের। —নিজস্ব চিত্র।

দূর থেকে দেখে মনে হবে, জ্বালানির কাঠ রাখার ঘর। কাছে গিয়ে দেখা গেল, সেই ভাঙাচোরা ঝুপড়ি ঘরের ভিতরেই রান্না করা হচ্ছে। এই জরাজীর্ণ ঘরেই চলে অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র। শিশুরা এলে এর মধ্যে বা ফাঁকা উঠোনে বসতে দেওয়া হয়। হিঙ্গলগঞ্জ ব্লকের দুলদুলি পঞ্চায়েতের স্বরূপকাঠি আদিবাসীপাড়ার ২২৪ নম্বর অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রটি ত্রিপলের ছাউনি, খসে পড়া মাটির দেওয়ালের উপরে ভরসা করে দাঁড়িয়ে রয়েছে কোনও রকমে।

স্থানীয় সূত্রের খবর, ২০০৭ সালে এই অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রটি চালু হয়। কিন্তু কোথাও কোনও ঘর তৈরি করা হয়নি সরকারি ভাবে। কেন্দ্রের কর্মী মানা রপ্তান রায় জানান, তিনি প্রথম দিন থেকেই কারও বাড়ির উঠোনে ত্রিপল টাঙিয়ে রান্না করা ও শিশুদের বসার ব্যবস্থা করেন। গত ষোলো বছরে প্রায় তিন-চারটি বাড়ির উঠোনে বিভিন্ন সময়ে অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র চালিয়েছেন মানা। প্রায় ভবঘুরের মতো আজ এখানে তো কাল সেখানে করে কেন্দ্রটি চালানো হচ্ছে। কিছু বাড়ির মালিক বেশি দিন বাড়ির উঠোন অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র চালাতে দিতে চান না। ইদানীং একটি বাড়ির উঠোনে স্থানীয় মানুষের সাহায্য নিয়ে মাটির একটি ছোট্ট ঘর করা হয়েছে। তার উপরে ত্রিপল টাঙিয়ে কেন্দ্র চলছে।

বৃষ্টি হলে ঝুপড়ির ভিতরে রান্না করা খুবই সমস্যার, কাদা-জলে ভরে যায় চারদিক। সাপ, পোকামাকড়ের উৎপাত হয়। কেন্দ্রের সহায়িকা ভবানী মুন্ডা বলেন, “এমন পরিবেশে ঠিকমতো রান্না করা মুশকিল। বৃষ্টি হলে উনুন নিভে যায়। উঁচু জায়গায় উনুন তৈরি করে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে রান্না করতে হয়। সব সময়ে সতর্ক থাকতে হয়, খাবারের মধ্যে পোকামাকড় কিছু না এসে পড়ে!”

এমন পরিবেশে শিশুদের বসিয়ে পড়াশোনা করানো কার্যত অসম্ভব হয়ে পড়ে। তাই এই কেন্দ্রে ২৫ জন পড়ুয়ার নাম নথিভুক্ত থাকলেও দু’এক জন শিশুকেই পাঠান বাড়ির লোক। অভিভাবকেরা নিজেরা এসে খাবার নিয়ে যান।

অভিভাবক মুকেশ সর্দার, শ্যামলী মুন্ডা, কবিতা মুন্ডারা জানান, বাচ্চাদের বসার জায়গা নেই। রান্না করার জায়গা অস্বাস্থ্যকর। তাই বাচ্চাদের পাঠাতে ইচ্ছে হয় না। উপযুক্ত পরিকাঠামো তৈরি করা হলে তখন সন্তানদের নিয়মিত পাঠানো যাবে। অভিভাবকেরা আরও জানান, এখন যেখানে অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র আছে, সেখানে পৌঁছতে জমা জল ঠেলে এক ব্যক্তির জমির উপর দিয়ে যেতে হয়। মানা বলেন, “এখানে বাড়ির মালিক আর বেশি দিন অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র চালাতে দিতে চাইছেন না। ফের অন্য একটি বাড়ির উঠোনে চলে যেতে হবে। কিন্তু এ ভাবে আর কত দিন চলবে! উপর মহলে বহু বার জানিয়েও সমস্যা দূর হয়নি।”

হিঙ্গলগঞ্জের বিডিও দেবদাস গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, “বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখব।” হিঙ্গলগঞ্জের সিডিপিও শ্যামল দত্তও বলেন, “দ্রুত পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হবে।”

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Anganwadi Hingalganj

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy