Advertisement
E-Paper

আশার লোকাল নিয়ে আশঙ্কায় যাত্রী

লোকাল ট্রেন শীঘ্রই চালু হওয়ার খবরে খুশি ক্যানিং, বাসন্তী, গোসাবা এলাকার মানুষজন। ক্যানিং লোকালে সাত সকালে কলকাতায় বিভিন্ন বাড়িতে পরিচারিকার কাজে যেতেন বহু মহিলা। কিন্তু ট্রেনের সংখ্যা, যাত্রী সংখ্যা এবং ই-পাস নিয় চিন্তিত তাঁরাও।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ০৪ নভেম্বর ২০২০ ০২:২৯
নীচে, ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলের স্টেশনগুলিতে প্ল্যাটফর্মে ওঠানামার পথে ব্যারিকেড করা হয়েছে। ছবি: মাসুম আখতার

নীচে, ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলের স্টেশনগুলিতে প্ল্যাটফর্মে ওঠানামার পথে ব্যারিকেড করা হয়েছে। ছবি: মাসুম আখতার

বড়বাজারের একটি অফিসে কাজ করেন কাঁচরাপাড়ার বাসুদেব মল্লিক। লোকাল ট্রেন বন্ধ বলে এক বার টোটো, দু’বার বাস বদলে কর্মস্থলে পৌঁছতে হয় তাঁকে। হয়রানি তো বটেই, যাতায়াতে খরচও হচ্ছে বিস্তর। অথচ মাসে মাত্র ১৮৫ টাকার মান্থলি কেটে ট্রেনে যাতায়াত করতে পারতেন তিনি। যা মাইনে পান, তার বড় অংশই গাড়ি ভাড়ায় বেরিয়ে যাচ্ছে বলে জানালেন।

গত কয়েক মাস ধরে বাসুদেব অপেক্ষা করে ছিলেন কবে চলবে লোকাল ট্রেন। কিন্তু এখন যখন ট্রেন চালুর সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে, তখন বাসুদেবের সংশয়, করোনা আবহে ভিড় সামলে লোকাল ট্রেন চালানো কি আদৌ সম্ভব?

বাসুদেবের প্রশ্ন, “যে বিপুল পরিমাণ মানুষ ট্রেনে যাতায়াত করেন, তাঁদের ৫০ শতাংশকে যদি নেওয়া হয়, তা হলে সকলে ঠাঁই পাবেন কী করে? ট্রেনের ভরসায় থেকে যদি যাত্রীরা না উঠতে পারেন, তা হলে সময়ে কর্মস্থলে পৌঁছবেনই বা কী করে?”

এ সব প্রশ্নের উত্তর মিলবে কিনা জানা যাবে লোকাল ট্রেন চালু হওয়ার পরেই। তবে শহরতলির স্টেশনগুলিতে ট্রেন চালানোর প্রস্তূতি শুরু হয়ে গিয়েছে। নিরাপদ দূরত্বে দাঁড়ানোর জন্য বৃত্ত আগেই আঁকা হয়ে গিয়েছিল। অতিরিক্ত যাত্রী যাতে স্টেশনগুলিতে ঢুকতে না পারে, সে জন্য প্ল্যাটফর্ম এবং বিভিন্ন প্রবেশ পথে ব্যারিকেড তৈরি করা হয়েছে।

বনগাঁ লোকালের ভিড় তো কিংবদন্তী। নানা রঙ্গরসিকতাও চলে তা নিয়ে। সড়ক পথে বনগাঁ থেকে কলকাতা যেতে যা সময় লাগে, তার থেকে অনেক কম লাগে ট্রেনে। তাই এখানকার মানুষের কলকাতা বা শহরের উপকণ্ঠে যাতায়াতের পছন্দের মাধ্যম লোকাল ট্রেন।

বসিরহাট মহকুমার স্বরূপনগর ও বাদুড়িয়া ব্লকের বাসিন্দাদের কলকাতা যাওয়ার বড় ভরসা বনগাঁ লোকাল। ফলে ট্রেন চালু হলে যাত্রী রোখা যাবে কিনা তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে রেল কর্তৃপক্ষের। ফলে দূরত্ববিধির কী হবে তা নিয়ে চিন্তিত যাত্রীরা। বনগাঁ-সহ বিভিন্ন স্টেশনে প্ল্যাটফর্মে ঢোকার মূল রাস্তা ছাড়া বাকি সব অলিগলি বাঁশের ব্যারিকেড দিয়ে বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে।

গোবরডাঙা, মছলন্দপুর, হাবড়া, অশোকনগর, বিড়া, দত্তপুকুর, বারাসত, মধ্যমগ্রাম সব স্টেশনেই চিঁড়েচ্যাপ্টা ভিড় হয়। মাঝপথ থেকে লোকজন কী ভাবে ট্রেনে উঠবেন, থাকছে সেই প্রশ্ন। মেট্রোরেলের মতো ই-পাসের ব্যবস্থাও এ ক্ষেত্রে খুব বাস্তবসম্মত নয়। পেশায় শিক্ষক তন্ময় দে বলেন, “লোকাল ট্রেনে সব পেশার মানুষজন যাতায়াত করেন। সকলের স্মার্ট ফোন নেই। ই-পাসের মাধ্যমে ট্রেনে চড়ার অধিকার মিললে অনেকেই বঞ্চিত হবেন।”

হাসনাবাদ-শিয়ালদহ নিত্যযাত্রী সংস্থার পক্ষে দীপেন পাল বলেন, “লোকাল ট্রেন অবিলম্বে চালু হোক। তবে এই শাখায় যা ভিড় হয়, তাতে ট্রেন কমিয়ে যাত্রী সংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করা হলে অসন্তোষ বাড়বে।” হাসনাবাদ স্টেশন লাগোয়া বস্তির বাসিন্দা বাসন্তী মণ্ডল কলকাতায় আয়ার কাজ করেন। যাত্রিসংখ্যা কমিয়ে ট্রেন চালালে কোনও সুবিধা হবে কিনা বুঝতে পারছেন না।

মন্দিরবাজারের বাসিন্দা জনার্দন রায় কলকাতার কারখানায় কাজ করেন। তিনি মনে করছেন, যে পদ্ধতিতে ট্রেন চালানোর কথা হচ্ছে, তাতে গোলমাল বাড়বে। তাঁর স্মার্ট ফোন নেই। তিনি আদৌ ট্রেনে সওয়ার হতে পারবেন কিনা, তা নিয়েই চিন্তা বাড়ছে।

লোকাল ট্রেন শীঘ্রই চালু হওয়ার খবরে খুশি ক্যানিং, বাসন্তী, গোসাবা এলাকার মানুষজন। ক্যানিং লোকালে সাত সকালে কলকাতায় বিভিন্ন বাড়িতে পরিচারিকার কাজে যেতেন বহু মহিলা। কিন্তু ট্রেনের সংখ্যা, যাত্রী সংখ্যা এবং ই-পাস নিয় চিন্তিত তাঁরাও।ভিড় আটকে ট্রেন চালাতে গিয়ে অশান্তি না ছড়ায়, আশঙ্কায় যাত্রীদের অনেকেই।

Passengers Indian Railways
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy