Advertisement
E-Paper

ওয়ার্ডের মধ্যেই ফের আত্মঘাতী রোগী

ফের বনগাঁ মহকুমা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন এক রোগীর অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনা ঘটল। তা-ও আবার ওয়ার্ডের মধ্যেই। যে ঘটনায় আয়া-নার্সদের নজরদারির অভাব আছে বলে অভিযোগ উঠেছে। সেই সঙ্গে এই হাসপাতালে আয়াদের বিরুদ্ধে দুর্ব্যবহারের অভিযোগ তো বহু পুরনো।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৭ জানুয়ারি ২০১৭ ০২:৫৫
এই জানলার সঙ্গেই গলায় গামছার ফাঁস দিয়ে ঝুলে পড়েন প্রাণকৃষ্ণবাবু। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক

এই জানলার সঙ্গেই গলায় গামছার ফাঁস দিয়ে ঝুলে পড়েন প্রাণকৃষ্ণবাবু। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক

ফের বনগাঁ মহকুমা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন এক রোগীর অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনা ঘটল। তা-ও আবার ওয়ার্ডের মধ্যেই। যে ঘটনায় আয়া-নার্সদের নজরদারির অভাব আছে বলে অভিযোগ উঠেছে। সেই সঙ্গে এই হাসপাতালে আয়াদের বিরুদ্ধে দুর্ব্যবহারের অভিযোগ তো বহু পুরনো।

পুলিশ ও হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, বৃহস্পতিবার রাত ১০টা নাগাদ ঘটনাটি ঘটেছে। মৃতের নাম প্রাণকৃষ্ণ মজুমদার (৫০)। বাড়ি গাইঘাটা থানার সিংজল এলাকায়। পুলিশের অনুমান, রাতে হাসপাতালের মেল মেডিসিন ওয়ার্ডের জানলায় গলায় গামছা জড়িয়ে আত্মহত্যা করেছেন তিনি। একটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করে পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে।

কয়েক মাস আগেও হাসপাতালের ডায়েরিয়া ওয়ার্ডের শৌচালয়ে এক যুবক আত্মহত্যা করেছিলেন। বার বার এ ধরনের ঘটনা ঘটায় হাসপাতালের নজরদারি এবং আয়া-নার্সদের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। কেন একজন রোগী সকলের চোখের আড়াল হবেন, কেন নূন্যতম খেয়াল রাখা হবে না, তা নিয়ে সরব হচ্ছেন মানুষ। কোনও ক্ষেত্রে শৌচালয়ে ঢুকে কেউ অসুস্থও হয়ে পড়তে পারেন। সে ক্ষেত্রেই বা কে নজর রাখবে, তা ক্রমশ চিন্তার বিষয় হয়ে উঠছে বনগাঁর মানুষের কাছে। প্রাণকৃষ্ণূবাবুর আত্মীয়-স্বজনের বক্তব্য, ‘‘ওয়ার্ডের মধ্যে নার্স-আয়ারা থাকেন। তা সত্ত্বেও কী ভাবে একজন রোগী আত্মহত্যা করতে পারেন? ডিউটিতে যাঁরা ছিলেন, তাঁরা তখন কী করছিলেন?’’

হাসপাতাল সুপার শঙ্করপ্রসাদ মাহাতো বলেন, ‘‘থেকে ঘটনার তদন্ত করা হচ্ছে। যে আয়া ওই রোগীর দায়িত্বে ছিলেন, তাঁর সঙ্গেও কথা বলা হচ্ছে। পুলিশকেও বলা হয়েছে ঘটনার কথা।’’ হাসপাতাল সূত্রে দাবি করা হয়েছে, মানসিক অবসাদে ভুগছিলেন ওই রোগী। সে জন্যই আত্মঘাতী হয়েছেন। শ্বাসকষ্ট ও কিডনিজনিত সমস্যা নিয়ে ৩১ ডিসেম্বর দুপুরে প্রাণবাবুকে বনগাঁ মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। হাসপাতাল সূত্রে জানানো হয়েছে, ওই ব্যক্তির শারীরিক অবস্থার দ্রুত অবনতি হচ্ছিল। ডায়ালেসিস করার প্রয়োজন ছিল। হাসপাতাল থেকে তাঁকে কলকাতার হাসপাতালে রেফার করে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু আর্থিক অবস্থা ভাল না হওয়ায় তারা বন্ডে সই করে ওই হাসপাতালেই রোগীকে রেখে চিকিৎসা করাচ্ছিলেন।

প্রাণবাবু মাটির পুতুল তৈরি করতেন। দুই মেয়ে, এক ছেলে। গত কয়েক মাস ধরেই অসুস্থ ছিলেন। প্রাণবাবুর বোন ইলা শীল বলেন, ‘‘ওয়ার্ডের মধ্যে আয়া-নার্সরা ছিলেন। তা সত্ত্বেও কী করে ঘটল এমন ঘটনা?’’

পরিবারের ক্ষোভ বিশেষত আয়াদের উপরেই। প্রাণবাবুর ভাই পরিতোষ বলেন, ‘‘২৪ ঘণ্টায় একজন আয়াকে আমাদের ১৯০ টাকা করে দিতে হচ্ছিল। ধারদেনা করে টাকা জোগাড় হচ্ছিল। তা-ও দাদাকে বাঁচাতে পারলাম না।’’ পরিতোষবাবুর দাবি, ‘‘দাদার আত্মহত্যার মতো কোনও কারণ ঘটেনি।’’ প্রাণবাবুর বন্ধু অসীম দে আবার অভিযোগ করলেন, টাকা দিতে দেরি হওয়ায় আয়া এর আগে দুর্বব্যহারও করেছেন।

বনগাঁ হাসপাতালে আয়াদের দৌরাত্ম্য নতুন নয়। বহুবার রোগী বা তাঁদের আত্মীয়দের সঙ্গে খারাপ ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে আয়াদের বিরুদ্ধে। কিন্তু তাদের দাপট বন্ধ করা তো দূরের কথা, কমানোও যায়নি। এক এক জন সুপার এসেছেন। কিন্তু অব্যবস্থার বদল ঘটেনি।

Hospital ward
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy