E-Paper

বেহাল রাস্তা, দোলায় চড়ে হাসপাতালের পথে রোগী

ট্যাংরাচর দক্ষিণ মণ্ডলপাড়ার অবস্থান একেবারে নদীর ধারে। জনসংখ্যা আড়াইশো। স্থানীয় বাসিন্দারা জানালেন, গোটা এলাকার সার্বিক পরিকাঠামো বেহাল।

দিলীপ নস্কর

শেষ আপডেট: ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১০:১০
দোলায় করে এ ভাবেই রোগীকে নিয়ে যেতে হয় হাসপাতালে।

দোলায় করে এ ভাবেই রোগীকে নিয়ে যেতে হয় হাসপাতালে। ছবি: দিলীপ নস্কর।

গ্রামের রাস্তা বলতে মাটির এঁদো পথ। বর্ষায় জল-কাদায় পায়ে হাঁটাই বিপজ্জনক। ফলে গাড়ি বা অ্যাম্বুল্যান্স ঢোকার প্রশ্নই নেই। দীর্ঘ দিন ধরে এমনই অবস্থা কুলপি ব্লকের ট্যাংরারচর দক্ষিণ মণ্ডলপাড়ার। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, রাস্তার কারণে নিত্য দিন ভোগান্তি পোহাতে হয়। সব থেকে সমস্যা, সঙ্কটজনক রোগীকে হাসপাতালে নিতে হলে। অ্যাম্বুল্যান্স বা অন্য গাড়ি না পাওয়ায় কাপড়ের দোলনা তৈরি করে কাঁধে করে বয়ে নিয়ে যেতে হয়! শহর কলকাতা থেকে মাত্র ৬০-৭০ কিলোমিটার দূরে গ্রামে বছরের পর বছর ধরে চলছে এমন পরিস্থিতি। প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই ব্লকের বেলপুকুর পঞ্চায়েতে ট্যাংরাচর গ্রামের ট্যাংরাচর উত্তরপাড়া, মাঝেরপাড়া, দক্ষিণপাড়া মিলিয়ে হাজার তিনেক মানুষের বসবাস। সংখ্যালঘু অধ্যুষিত গ্রামটি হুগলি নদী থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে ছিল। কিন্তু গত কয়েক বছরে নদী ভাঙতে ভাঙতে এগিয়ে এসেছে গ্রামের কাছে। এলাকার বাসিন্দাদের জীবন-জীবিকা বলতে নদীতে মাছ ধরা, কৃষিকাজ। কিছু যুবক শহরে সেলাইয়ের কাজ করেন। অধিকাংশ পরিবারই নিম্নবিত্ত।

ট্যাংরাচর দক্ষিণ মণ্ডলপাড়ার অবস্থান একেবারে নদীর ধারে। জনসংখ্যা আড়াইশো। স্থানীয় বাসিন্দারা জানালেন, গোটা এলাকার সার্বিক পরিকাঠামো বেহাল। ওই পাড়া থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রায় ২ কিলোমিটার দূরে। নদীবাঁধের মাটির রাস্তা দিয়েই স্কুলে আসতে হয় পড়ুয়াদের। হাই স্কুল গ্রাম থেকে প্রায় সাত কিলোমিটার দূরে। ওই পাড়ার বেশ কিছু শিশু-কিশোর প্রাথমিক ও হাই স্কুলে পড়াশোনা করে। সারা বছর কষ্ট করে হেঁটে স্কুলে গেলেও বর্ষা এলেই স্কুলের রাস্তা বন্ধ হয় যায়। কারণ, রাস্তা নিচু হওয়ায় বৃষ্টি বেশি হলেই হাঁটুসমান জল জমে। অন্য দিকে, বাঁধের রাস্তা কাদায় ভরে যায়।

ট্যাংরাচর দক্ষিণপাড়ার ছেলেমেয়েরা পড়তে যায় ট্যাপাখালি প্রাথমিক বিদ্যালয়। ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মন্টুলাল দাস বলেন, ‘‘সারা বছর ওই পাড়ার ছেলেমেয়েরা ঠিক মতো স্কুলে এলেও বর্ষাকালে আসা বন্ধ হয়ে যায়। মাটির রাস্তা কাদা হয়ে যায়। হেঁটে স্কুলে আসতে গিয়ে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটে।’’ স্থানীয় বাসিন্দা আনারুল মণ্ডল, আবুবক্কর খাঁ বলেন, ‘‘বাড়ির ছেলেমেয়েরা পড়াশোনা করতে চায়। কিন্তু ছোটদের এত দূরের স্কুলে যেতে সমস্যায় পড়তে হয়। বর্ষার সময়ে ছোটরা কেউই প্রায় স্কুলে যেতে পারে না। আমরা পাড়ায় একটা শিশুশিক্ষা কেন্দ্রের জন্য আবেদন করেছিলাম। কিন্তু কোনও ব্যবস্থা হয়নি।’’ ওই পাড়ার কোনও রোগীকে কুলপি গ্রামীণ হাসপাতাল বা ডায়মন্ড হারবার জেলা হাসপাতালে নিয়ে যেতে হলে ভোগান্তিতে পড়েন পরিজনেরা। বাধ্য হয়ে দোলা বানিয়ে রোগীকে প্রায় দু’কিলোমিটার নিয়ে গিয়ে গাড়িতে তুলতে হয়। রাস্তাঘাটে কোনও আলো নেই। বিকেল গড়ালে সমস্যা আরও বাড়ে।

সমস্যা রয়েছে পানীয় জলেরও। পাড়ার একটিমাত্র নলকূপে সরু সুতোর মতো জল পড়ে। মহিলারা জানালেন, এক কলসি জল পেতে অনেকটা সময় লেগে যায়। মাঝে মাঝে নোংরা জল বেরোয়।

এ বিষয়ে কুলপি বিধায়ক যোগরঞ্জন হালদার বলেন, ‘‘এলাকাটি নদী-লাগোয়া বিচ্ছিন্ন গ্রাম। বর্ষায় জলে ডুবে যায়। রাস্তাঘাট উন্নয়নের বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Kulpi

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy