Advertisement
০১ মে ২০২৪
Sundarbans

কারও ভরসা নদীর পাড়, কেউ আবার যান পড়শির বাড়ি

প্রকাশ্যে শৌচমুক্ত গ্রামীণ পরিবেশের কেন্দ্রীয় মানদণ্ড ছুঁতে পারেনি রাজ্যের অধিকাংশ জেলা। অর্থাৎ, ঘরে ঘরে শৌচালয় তৈরির কাজই হয়নি অনেক জায়গায়। দুই জেলায় কী পরিস্থিতি, খতিয়ে দেখল আনন্দবাজার

কাপড়, ত্রিপল, বস্তায় ঘেরা এমন শৌচাগার চোখে পড়ে পাটঘোরা গ্রামের একাধিক বাড়িতে।

কাপড়, ত্রিপল, বস্তায় ঘেরা এমন শৌচাগার চোখে পড়ে পাটঘোরা গ্রামের একাধিক বাড়িতে। —নিজস্ব চিত্র।

নবেন্দু ঘোষ 
হাসনাবাদ শেষ আপডেট: ২৩ অগস্ট ২০২৩ ০৮:২৪
Share: Save:

বাড়িতে পাকা শৌচাগারের বালাই নেই। শৌচকর্মের জন্য এখনও ভরসা সেই মাঠ-ঘাট। এমনই পরিস্থিতি সুন্দরবনের প্রান্তিক সন্দেশখালি, হিঙ্গলগঞ্জ, হাসনাবাদ ব্লকের বহু গ্রামে। কী ভাবে সরকারি পাকা শৌচাগার পাওয়া যায় জানেনই না অনেকে।

সন্দেশখালি ১ ব্লকের ন্যাজাট ২ পঞ্চায়েতের কাছারিপাড়া গ্রামের কয়েক জন বাসিন্দা জানান, কাছেই খালের পাশে একটা সাঁকো আছে। পুকুর থেকে জল নিয়ে বাঁশের সাঁকোতে উঠে খালে শৌচকর্ম করতে হয়। এ ভাবেই চলে আসছে বছরের পর বছর। গ্রামের বাসিন্দা, বছর পঁয়তাল্লিশের মঞ্জুলি কারেক বলেন, “আঁচলে মুখ ঢেকে বসে পড়ি। দিনের বেলা হোক, বা ঝড়-জল— এ ভাবেই সারতে হয়। ছেলেমেয়েরা যেতে চায় না। কিন্তু কোনও উপায় নেই। মেয়ে তো রাতের অপেক্ষায় থাকে।” আরও এক বাসিন্দা ভবানী কারেক বলেন, “আমপানের সময়ে বাড়ির পাকা শৌচাগারের উপরে গাছ পড়ে ভেঙে যায়। তারপর থেকে মাটিতে গর্ত করে ত্রিপলের টুকরো দিয়ে ঘিরে শৌচকর্ম করি। হাওয়া হলে ত্রিপল উড়ে যায়। বৃষ্টি হলে শৌচাগারে যাওয়া যায় না।” মঞ্জুলি, ভবানী-সহ স্থানীয় বাসিন্দা অনুপ বাড়ুই, মামণি বারুইরা জানান, কী ভাবে শৌচাগারের আবেদন করতে হয়, জানেনই না তাঁরা। পঞ্চায়েত সদস্যকে বলেও লাভ হয়নি। তাই এটাই ভবিতব্য ধরে নিয়েছেন তাঁরা।

হিঙ্গলগঞ্জ ব্লকের কালীতলা পঞ্চায়েতের সামসেরনগর কালিন্দীপাড়া এলাকায়ও অনেকের বাড়িতে শৌচাগার নেই। স্থানীয় বাসিন্দা চম্পা বিশ্বাস বলেন, “আয়লার আগে নদীর পাশে যেতাম। এখন প্রতিবেশীর পাকা শৌচাগারে যাই। কিছু দিন আগে এক বার শৌচাগারের জন্য অনলাইনে আবেদন করতে গিয়েছিলাম। কিন্তু আবেদন করার সময় পেরিয়ে গিয়েছিল। আর করা হয়নি।” এলাকায় বাসিন্দা প্রকাশ রপ্তান, সুদীপ্ত মণ্ডল, ভবসিন্ধু মণ্ডলেরা জানান, মাঠে-ঘাটে কোনও রকমে কাজ সারেন। অনলাইনে আবেদন করার পদ্ধতি জানা নেই তাঁদের। এই ব্লকেরই যোগেশগঞ্জ পঞ্চায়েতের দক্ষিণ পাটঘড়া গ্রামের বাসিন্দা নমিতা ঘরামি বলেন, “কাপড়ের টুকরো দিয়ে ঘিরে জায়গায় শৌচকর্ম করতে হয়। খুবই সমস্যা হয়। তবে উপায় তো নেই!”

সন্দেশখালি ১ বিডিও সুপ্রতিম আচার্য বলেন, “এখনও পর্যন্ত যাঁরা আবেদন করছিলেন, তাঁদের মধ্যে প্রায় ১১২ জনের শৌচাগার তৈরি হচ্ছে। কিছু মানুষ আবেদন করার বিষয়ে অসচেতন। তাঁদের সচেতন করতে পঞ্চায়েতগুলিকে বলা হয়েছে। এ ছাড়া, বাংলা সহায়তা কেন্দ্রে জানানো হয়েছে, কেউ এলে তাঁদের অনলাইনে শৌচাগারের আবেদন করার বিষয়টি জানাতে।” হিঙ্গলগঞ্জের বিডিও শাশ্বতপ্রকাশ লাহিড়ী বলেন, “যাঁদের শৌচাগার নেই, তাঁদের বিষয়টি দেখা হবে।” হাসনাবাদের বিডিও অলিম্পিয়া বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, যে সব এলাকায় পাকা শৌচাগার নেই, সে সব জায়গার সচেতনতা শিবির করা হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Sundarbans Toilet
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE