থানা ঘিরে বিক্ষোভ। ভাটপাড়ায়। —নিজস্ব চিত্র
শুরু হয়েছে লোকসভা ভোটের সময় থেকে। উত্তর ২৪ পরগনার ভাটপাড়া, কাঁকিনাড়া, কাঁচরাপাড়া, জগদ্দলের বিভিন্ন এলাকা জুড়ে বোমাগুলির লড়াই থামেনি। রাজনৈতিক এই রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ প্রভাব ফেলেছে জনজীবনে। পরিস্থিতির সঙ্গে যুঝতে না পেরে অনেকেই ঘরবাড়ি ফেলে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে চলে যাচ্ছেন অন্যত্র।
যেমন, কাঁকিনাড়া ৬ নম্বর গলির বাসিন্দা মহম্মদ সিরাজউদ্দিন। তিনি হৃদরোগী, বুকে পেসমেকার বসানো। অশান্ত পরিস্থিতি থেকে বাঁচতে প্রৌঢ় সপরিবারে মাথা গুঁজেছেন গঙ্গার অন্য প্রান্তে হুগলির ভদ্রেশ্বরে আত্মীয়ের বাড়িতে। তিনি জানান, প্রায় একশো বছর ধরে তাঁদের পরিবার কাঁকিনাড়ায় থাকে। স্ত্রী, তিন ছেলে, এক মেয়ে, নাতি- নাতনি নিয়ে তাঁর ভরা সংসার। কিন্তু গত সোমবার পরিস্থিতি বদলে যায়। তাঁর অভিযোগ, ওই দিন দুপুরে জনা ত্রিশ দুষ্কৃতী তাঁর বাড়িতে হামলা চালায়। দরজা ভেঙে ভিতরে ঢুকে বাড়ির লোকজনকে মারধর করে। মহিলাদেরও রেয়াত করেনি আসবাবপত্র-সহ অন্যান্য জিনিস ভাঙচুর করে। লুটপাট চালায়। দুষ্কৃতীরা এলাকায় বোমাবাজি করে এবং গুলি চালায় বলেও তাঁর অভিযোগ। ওই ঘটনার পরে আর বাড়িতে থাকার সাহস পায়নি পরিবারটি। কিন্তু নিরাপদ আশ্রয়ে থেকেও আতঙ্কের রেশ কাটেনি।
সিরাজউদ্দিন বলেন, ‘‘আমরা কোনও রাজনৈতিক দলের সক্রিয় কর্মী নই। তবে তৃণমূলকে সমর্থন করি। সেটাই আমাদের অপরাধ! জন্ম থেকে কাঁকিনাড়ায় থাকার পরে প্রাণের দায়ে বাড়ি ছাড়তে হবে, ভাবতে পারিনি।’’ তাঁর কথায়, ‘‘আমি হৃদরোগী। হামলার মধ্যে কি অবস্থা হয়েছিল, ভেবে দেখুন। বাচ্চাগুলো ভয়ে জড়োসড়ো হয়ে গিয়েছিল।’’ ওই পরিবারের সদস্যদের অভিযোগ, বিজেপি-কে সমর্থন করতেই হবে বলে হামলাকারীরা ফতোয়া দেয়। সিরাজউদ্দিনের স্ত্রী নূরজাহান খাতুন বলেন, ‘‘বোমাগুলির শব্দে আতঙ্কে দিন কাটছিল। বাইরে বেরোনোর যো ছিল না।’’
দুষ্কৃতী-তাণ্ডবের জেরে সিরাজউদ্দিনের মতোই আবতাব কুরেশিও সপরিবারে ঘর ছেড়েছেন। ওই পরিবারের লোকেরা দুর্গাপুরে আত্মীয়ের বাড়িতে উঠেছেন। মহম্মদ আখতার, মহম্মদ গিয়াসউদ্দিন, শেখ শাহনাজদেরও একই সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে। সকলেরই অভিযোগ, এক সময় যারা তৃণমূলের হয়ে এলাকায় ছড়ি ঘুরিয়েছে, তাদের অনেকেই বিজেপির হয়ে হামলা করছে। রাজনৈতিক সংঘর্ষের জেরে সাধারণ মানুষের প্রাণ ওষ্ঠাগত হয়ে উঠেছে। ঘরছাড়া এক মহিলার কথায়, ‘‘প্রশাসন নিরাপত্তার আশ্বাস দিলেও এখনও পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়নি। আমরা চাই দ্রুত এলাকা শান্ত হোক। দরকারে প্রশাসন কড়া ব্যবস্থা নিক। ঘর, জীবিকা ছেড়ে কত দিন এ ভাবে থাকা যায়?’’
ভাটপাড়া, কাঁকিনাড়ার বহু মানুষের মুখেই ফিরছে একই কথা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy