Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

বৃষ্টিতে ক্ষতি শুটকি মাছের ব্যবসায়

বর্ষার পরে শুরু হয়েছিল শুটকি মাছের উৎপাদন। সঙ্গে রবিশস্যের চাষ। কিন্তু কয়েকদিনের অকালবৃষ্টি সব মাটি করে ঋণের ফাঁদে ফেলে দিয়েছে চাষিদের।

—ফাইল চিত্র।

—ফাইল চিত্র।

শান্তশ্রী মজুমদার
কাকদ্বীপ শেষ আপডেট: ০৮ নভেম্বর ২০১৬ ০১:৪৮
Share: Save:

বর্ষার পরে শুরু হয়েছিল শুটকি মাছের উৎপাদন। সঙ্গে রবিশস্যের চাষ। কিন্তু কয়েকদিনের অকালবৃষ্টি সব মাটি করে ঋণের ফাঁদে ফেলে দিয়েছে চাষিদের। শুটকি মাছের খামার মালিকদেরও মাথায় হাত পড়েছে। কৃষি দফতর সূত্রে খবর, ইতিমধ্যেই কাকদ্বীপে কতটা ক্ষয়ক্ষতির হয়েছে তার হিসাব করা হচ্ছে। তবে কৃষি বিমার আওতায় যে সব চাষি রয়েছেন, তাঁদের কিছুটা সুরাহা হতে পারে বলে মনে করছেন দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা কৃষি দফতরে কর্তারা।

সাগরে শুটকি মাছের ব্যবসা করেন আবদার মল্লিক। ছোট খামারে পাঁচ জন শ্রমিককে নিয়ে কাজ করেন তিনি। ঝড়বৃষ্টির আগাম বার্তা পেয়েছিলেন ঠিকই। কিন্তু তাতে লাভ হয়নি। তিন দিনের আনা মাছ সবটাই পচে গিয়েছে। আবদার বলেন, ‘‘সমুদ্র থেকে মাছ ঢুকলে কড়া রোদে ২ দিন, রোদ কম হলে ৩ দিন সময় লাগে শুকোতে। কিন্তু আবহাওয়ার জন্য আগের মাছই শুকোতে পারলাম না। তার উপর আরও এক নৌকো মাছ পচে গেল।’’

অক্টোবর থেকে শুরু করে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত শুটকি মাছের মরসুম। এই সময় দৈনিক মাছ ধরা হয়। তা শুকানো করা হয় সাগরের প্রায় ৭টি সমবায় খটি সমিতির অধীনে অন্তত ৭০০টি খামারে। কিন্তু এ বার নিম্নচাপের বৃষ্টিতে প্রত্যেকেরই ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি খামার মালিকদের। সাগরে খটি ব্যবসায় যুক্ত মৎস্যজীবীদের দাবি, মৎস্য দফতরের পক্ষ থেকে মাছ শুকানোর জন্য আরও বেশি করে কংক্রিটের প্ল্যাটফর্ম তৈরি করে দেওয়া হলে ক্ষয়ক্ষতি কিছুটা সামাল দেওয়া সম্ভব হত। কারণ, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বালি মাটিতে মশারির জাল বিছিয়ে সাবেক পদ্ধতিতে মাছ শুকানো হয়। সেক্ষেত্রে বৃষ্টি হলে পুরোটাই জলে চলে যায়।

কাকদ্বীপ মহকুমায় সাগর এলাকাতেই সবচেয়ে বেশি শুটকি মাছের কারবার চলে। সেখানে ৭টি সমিতিতে মাত্র ৪টি প্ল্যাটফর্ম করে দিয়েছে মৎস্য দফতর। প্রয়োজনের তুলনায় যা খুবই কম বলে জানান মৎস্যজীবীরা। যদিও মৎস্য দফতরের দাবি, ধীরে ধীরে কংক্রিটের প্ল্যাটফর্মের সংখ্যা বাড়ানো হবে। সাগর পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি অনিতা মাইতি জানিয়েছেন, ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ হিসাব করে মৎস্যজীবীদের কিছুটা সাহায্য করা হবে। সাগরের মতো একই অবস্থা নামখানাতেও। বালিয়াড়া, লালগঞ্জ, কালীস্থান মিলিয়ে এই তল্লাটে প্রায় ৩২টি খটি রয়েছে। একই সমস্যায় পড়েছেন ওই সমস্ত মাছ ব্যবসায়ীরাও।

শুধু মাছই নয়, আমন ধান, উচ্ছে, ঝিঙে এবং ডাল উৎপাদনও বেশ মার খেয়েছে মহকুমার বিভিন্ন অঞ্চলে। শীতের আগে প্রায় ৫ বিঘে জমিতে ধান লাগিয়েছিলেন নামখানা চন্দনপিড়ির হরিহর দাস। তিনি বলেন, ‘‘পুরো জমির ধানটাই শুয়ে পড়েছে। সবে পাকতে শুরু করেছিল। কিন্তু অকাল বৃষ্টি সব মাটি করে দিল।’’ মৌসুনি দ্বীপেও উচ্ছে এবং ঝিঙের চাষ প্রচণ্ড ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতি হয়েছে ডাল চাষেরও।

ডায়মন্ড হারবার কৃষি দফতরের সহ-কৃষি অধিকর্তা তথা কৃষি বিশেষজ্ঞ অভিনন্দন সেনগুপ্ত বলেন, ‘‘ডাল এবং ধানের ক্ষতি হয়েছে বটে তবে তা খুব বড় আকারে নয়। এ বার ফসলের উপর বিমার সুযোগ পেয়েছেন অনেক চাষি। ক্ষতির পরিমাণও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’ কৃষি দফতর সূত্রে খবর, কিসান ক্রেডিট কার্ড রয়েছে এরকম বহু চাষিকেই এ বার প্রধানমন্ত্রী ফসল বিমা যোজনার অধীনে আনা হয়েছে। তবে বিমার টাকা পেলে ক্ষতির পরিমাণ কিছুটা কমবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Dried fish
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE