Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

নজরদারি আলগা হতেই ফিরছে প্লাস্টিকের ব্যাগ

কেন প্লাস্টিকের ব্যবহার কম হয়েছিল তার অবশ্য একটা ইতিহাস আছে। ২০১৭ সালে পুরসভা এলাকায় ডেঙ্গির প্রকোপ হয়েছিল। কয়েকজন মারাও গিয়েছিলেন সে বার।

নজরে: দেখা মিলছে প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগের। নিজস্ব চিত্র

নজরে: দেখা মিলছে প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগের। নিজস্ব চিত্র

সীমান্ত মৈত্র
বনগাঁ শেষ আপডেট: ৩০ জুন ২০১৯ ০০:০১
Share: Save:

বনগাঁ শহরের হাটেবাজারে ফের শুরু হয়েছে প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগের ব্যবহার। কয়েক মাস আগেও (লোকসভা ভোটের আগে পর্যন্ত) পরিস্থিতিটা ছিল উল্টো। বনগাঁ শহরের বাজারগুলিতে প্রকাশ্যে প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগের ব্যবহার বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। কোথাও কোথাও মিষ্টির দোকানে, মুদির দোকানে গোপনে ক্যারিব্যাগ ব্যবহৃত হলেও তার পরিমাণ ছিল বেশ কম।

কেন প্লাস্টিকের ব্যবহার কম হয়েছিল তার অবশ্য একটা ইতিহাস আছে। ২০১৭ সালে পুরসভা এলাকায় ডেঙ্গির প্রকোপ হয়েছিল। কয়েকজন মারাও গিয়েছিলেন সে বার। এর পরেই শহর এলাকায় প্লাস্টিকের ব্যবহার বন্ধ করতে কড়া পদক্ষেপ করা হয়েছিল পুরসভার পক্ষ থেকে। ডেঙ্গি প্রতিরোধে এবং পরিবেশ দূষণ বন্ধে পুরসভার তরফে নানা পদক্ষেপ করা হয়েছিল। সাধারণ মানুষকে সচেতন করতে পুরসভার পক্ষ থেকে লাগাতার প্রচার কর্মসূচিও নেওয়া হয়েছিল। পুরকর্মীরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে প্লাস্টিক ব্যবহারের ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করেছিলেন। পুরসভার পক্ষ থেকে বাজারগুলিতে নিয়মিত তল্লাশি ও নজরদারিও চালানো হচ্ছিল। বাজেয়াপ্ত করা হয়েছিল প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগ। জরিমানাও করা হয়েছিল। নিয়মিত ওই নজরদারির জেরে সে সময়ে প্লাস্টিকের পরিবর্তে কাপড় ও কাগজের ক্যারিব্যাগের ব্যবহার শুরু হয়েছিল। এ সবের ফলে গত বছর পুর এলাকায় ডেঙ্গির প্রকোপ রোধ করাও সম্ভব হয়েছিল। কিন্তু হঠাৎ কেন ফিরল প্লাস্টিক? রাজনৈতিক মহল ও স্থানীয় বাসিন্দারা মনে করছেন পুরসভায় চলা সাম্প্রতিক ডামাডোলই এর কারণ। ১৪ জন তৃণমূল কাউন্সিলর পুরপ্রধান শঙ্কর আঢ্যের বিরুদ্ধে অনাস্থা এনেছিলেন। এর মধ্যে ১২ জন বিজেপিতে যোগ দেওয়ায় পুরসভায় তৃণমূল সংখ্যালঘু হয়ে পড়ে। এই ডামাডোলের আবহাওয়ায় অধিকাংশ ক্ষেত্রেই পুরসভার নজরদারিও কমে যায়। প্লাস্টিকের বিষয়ে ধরপাকড়ও কমে। আর সেই সুযোগেই ফের রমরমিয়ে শুরু হয়েছে প্লাস্টিকের ব্যবহার।

বনগাঁ শহরের ট বাজারে গিয়ে দেখা গেল, মাছ ও আনাজ বিক্রেতারা প্রকাশ্যেই ক্রেতাদের প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগে মালপত্র দিচ্ছেন। বনগাঁ শহরের এক মাছ বিক্রেতা জানান, ‘‘ক্রেতাদের কাপড়ের ব্যাগ দিতে হলে লাভ থাকবে না। ক্রেতারা তো আর ব্যাগের দাম দিতে চান না!’’ এক আনাজ বিক্রেতার কথায়, ‘‘পুরসভার পক্ষ থেকে ইদানীং কিছু বলা হচ্ছে না। তাই আবার প্লাস্টিক ব্যবহার শুরু করেছি।’’ অধিকাংশের সঙ্গে কথা বলে বোঝা গেল, সচেতনতা নয়, শুধুমাত্র ধরপাড়কের ভয়েই এত দিন প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগ ব্যবহার বন্ধ ছিল। নজরদারির বজ্র আঁটুনি একটু আলগা হতেই সেই ফস্কা গেরো দিয়ে বেড়েছে প্লাস্টিকের রমরমা।

৫ জুন বিশ্ব পরিবেশ দিবসে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার তরফে বাজারগুলিতে গিয়ে প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগ ব্যবহারের ক্ষতিকারক দিক নিয়ে ক্রেতা-বিক্রেতাদের বোঝানো হয়েছিল। ওই সংস্থার তরফে দীপাঞ্জন দত্ত বলেন, ‘‘এটা খুবই দুর্ভাগ্যের যে, প্লাস্টিকের ক্যারিবাগের ব্যবহার নিয়ে মানুষের মধ্যে সচেতনতা গড়ে উঠল না।’’

কী বলছেন পুরপ্রধান শঙ্কর আঢ্য?

শঙ্করের কথায়, ‘‘মানুষের স্বার্থেই প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগ নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। মানুষ সচেতন না হলে আমরা কী করতে পারি? এর পিছনে রাজনৈতিক মদতও রয়েছে।’’

বনগাঁর মহকুমাশাসক কাকলি মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘সকলের সঙ্গে কথা বলে প্লাস্টিকের ব্যবহার বন্ধ করতে পদক্ষেপ করা হবে।’’

এবার শুধু খবর পড়া নয়, খবর দেখাও। সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের YouTube Channel - এ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE