নম্বরপ্লেটহীট মোটরবাইক। ইনসেটে ধৃত মোকসেদ আলি সর্দার। —নিজস্ব চিত্র।
দুষ্কৃতীদের মোটরবাইক বাহিনীর পাল্টা মোটরবাইক বাহিনী তৈরি করে সাফল্য পেল বসিরহাট থানা।
ইছামতী ঘেঁষা বসিরহাট শহরে চুরি, ছিনতাই নতুন ঘটনা নয়। কিন্তু সম্প্রতি অপরাধের পদ্ধতি পাল্টাচ্ছিল। ইদানীং দুষ্কৃতীরা মোটরবাইকে এসে ‘অপারেশন’ করে মোটরবাইকেই পালিয়ে যাচ্ছিল। ফলে অনেক সময় তাদের চেনাই যাচ্ছিল না, দৌড়ে ধরা তো দূরের কথা। কিন্তু পুলিশের বাইক বাহিনীর সৌজন্যে রবিবার রাতেই ধরে পড়েছে বসিরহাট শহরের ছিনতাই চক্রের মূল পান্ডা। পুলিশ জানিয়েছে, ধৃতের নাম মোকসেদ আলি সর্দার ওরফে বাবু।
গত শুক্রবার দুপুরে বাদুড়িয়ার লক্ষ্মীনাথপুর গ্রামের ইটভাটা ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত শঙ্কর চক্রবর্তী বসিরহাট কলেজের সামনের ব্যাঙ্ক থেকে ৫ লক্ষ টাকা তুলে মোটরবাইকে করে ফিরছিলেন। তখনই পিছন থেকে একটি মোটরবাইকে দুষ্কৃতীরা এসে সেই টাকা ছিনতাই করে চম্পট দেয়। এই ঘটনার পরে নড়েচড়ে বসে বসিরহাট থানার পুলিশ। বাইকে সওয়ার দুষ্কৃতীদের ধরতে এক পুলিশ অফিসার, ২ জন কনস্টেবল এবং ৭ জন সিভিক ভলেন্টিয়ারকে নিয়ে থানার বাইক বাহিনী তৈরি হয়। তার পরেই রবিবার রাতে বসিরহাটের খোলাপোতা এলাকায় টাকি রোড থেকে ধরা পড়ে মোকসেদ। উদ্ধার হয় ২৭ কেজি গাঁজা এবং ২টি মোটরবাইক। ধৃতের বাড়ি স্থানীয় চাঁপাপুকুরের কাটিয়ারবাগ গ্রামে।
জেলা পুলিশের এক কর্তা জানান, বছর দুই আগে বসিরহাট থানার এক পুলিশ কর্তার গাড়ি চালাত মোকসেদ। তার আগে বাদুড়িয়া থানাতে সে গাড়ি চালিয়েছে। সেই সুবাদে দুষ্কৃতীদের সঙ্গে তার ভাল যোগাযোগ তৈরি হয়। সেখান থেকেই সে চুরি, ছিনতাইয়ে হাত পাকাতে শুরু করে। তখন দুষ্কৃতীদের কাছে পুলিশের গতিবিধি পাঠিয়ে দিয়ে সে মোটা টাকা রোজগার করত। কিন্তু মাস কয়েক আগে নারী পাচার চক্রের সঙ্গে যুক্ত অভিযোগে কলকাতার লালবাজারের পুলিশ তাকে গ্রেফতার করেছিল। তখনই পুলিশের গাড়ি চালানোর চাকরি যায় তার। জামিনে মুক্ত হয়ে দুষ্কৃতীদের সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে যুক্ত হয়ে পড়ে বছর পঁচিশের মোকসেদ। টাকা জোগাড়ের জন্য ব্যবসায়ীদের সঙ্গে এলাকার অন্য দুষ্কৃতীরাও চলে আসে তার ‘টার্গেট লিস্টে’। বাংলাদেশ থেকে আসা দুষ্কৃতীদের উপরে চড়াও হয়ে লুঠ করে সোনা। তার পর সেই সোনা বিক্রির টাকা দিয়ে ৬টি নতুন এবং দ্রুতগতির মোটরবাইক এবং ২টি সাইকেল কেনে সে। এ ছাড়াও স্বরূপনগরের এক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে লক্ষাধিক টাকা ছিনতাই, বাদুড়িয়ার মহেশপুরে ব্যবসায়ীর বাড়িতে ডাকাতি, গোরু ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ১৭ লক্ষ টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনায়ও মোকসেদ এবং তার দলবল যুক্ত। রবিবার রাতে অবশেষে ধরা পড়ল মোকসেদ। তার সঙ্গীদের খোঁজে তল্লাশি শুরু করেছে পুলিশ।
পুলিশের জেরায় মোকসেদ জানিয়েছে, তার দলের দু’জনের কাজ ছিল সাইকেল নিয়ে বিভিন্ন বাজারে ঘোরা। রাস্তা দিয়ে কেউ মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে যাচ্ছেন বুঝতে পারলেই তারা দলের বাকিদের ফোন করত। তার পর কয়েক মিনিটের মধ্যেই মোটরবাইকে করে বাকিরা এসে ‘অপারেশন’ সেরে এলাকা ছাড়ত। কিন্তু এ বার শেষ রক্ষা হল না। পুলিশের কাছে খবর ছিল রবিবার সন্ধ্যায় তারা টাকি রোডের পাশে গাঁজা বিক্রি করতে আসবে। সেই মতো সেখানে ‘পজিশন’ নেয় পুলিশের বাইক বাহিনী। শেষ দিকে অবশ্য পুলিশের উপস্থিতি বুঝতে পেরে গিয়েছিল দুষ্কৃতীরা। অন্ধকারের সুযোগ নিয়ে দলের বাকিরা পালিয়ে গেলেও মোকসেদ পালাতে পারেনি।
বসিরহাট থানার আইসি দেবাশিস চক্রবর্তী বলেন, ‘‘দুষ্কৃতীদের মোটরবাইক বাহিনীকে জব্দ করতেই আমরা পাল্টা মোটরবাইক বাহিনী রাস্তায় নামিয়েছি। ব্যবসায়ী এবং সাধারণ মানুষকে অনুরোধ করছি, বড় অঙ্কের টাকা নিয়ে যাওয়ার প্রয়োজন হলে কিংবা বাড়ি ফাঁকা থাকলে পুলিশকে জানান। পুলিশ নজর রাখবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy