বনগাঁ শহরে তৃণমূলের সংহতি যাত্রা। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক।
লোকসভা ভোটের দিনক্ষণ এখনও ঘোষণা হয়নি। তার আগেই প্রবল ঠান্ডার মধ্যেও উত্তপ্ত হয়ে উঠছে বনগাঁর রাজনৈতিক পরিমণ্ডল। বিজেপি ও তৃণমূল নেতারা সভা, পাল্টা সভা করে পরস্পরের বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি দিয়ে চলেছেন। এর ফলে শহরের সাধারণ মানুষ অশান্তির আশঙ্কা করছেন।
রেশন বণ্টন দুর্নীতি মামলায় ইডি গ্রেফতার করেছে বনগাঁর প্রাক্তন পুরপ্রধান তৃণমূলের শঙ্কর আঢ্য বা ডাকুকে। সেই সূত্রে গত শুক্রবার বনগাঁ শহরে সভা করে তৃণমূলের বনগাঁ সাংগঠনিক জেলার সভাপতি বিশ্বজিৎ দাসকে ইডি-র তল্লাশি নিয়ে হুমকি দিয়েছিলেন বিজেপির বনগাঁ সাংগঠনিক জেলার সভাপতি দেবদাস মণ্ডল। সোমবার দুপুরে বনগাঁ শহরে একই জায়গায় পাল্টা সভা করে এ বার দেবদাসকে হুঁশিয়ারি দিলেন দুই তৃণমূল নেতা। যুব তৃণমূল নেতা পাপাই রাহার হুঁশিয়ারি, ‘‘এপ্রিল মাসের পর পাপ্পুকে (দেবদাস) রাজনৈতিক সমাধি দিয়ে দেব। পাপ্পুকে আর দেখা যাবে না।’’ একই কর্মসূচিতে দলের বনগাঁ সাংগঠনিক জেলা সভাপতি বিশ্বজিৎ দাস বলেন, ‘‘যত দূর হাত যায়, চুলকান। আগামী দিনে কোনও অঘটন ঘটলে তৃণমূল দায়ী থাকবে না।’’
দলের শীর্ষ নেতৃত্বের নির্দেশ মতো এ দিন বনগাঁয় সংহতি মিছিল করে তৃণমূল। পরে সভা হয়। সেখানে পাপাই ওই হুঁশিয়ারি দেওয়ার পাশাপাশি একটি ফ্ল্যাটের ছবি দেখিয়ে দাবি করেন, সেটি দিল্লিতে দেবদাসের ফ্ল্যাট। দাম পাঁচ কোটি। সেই টাকা দেবদাস কোথায় পেয়েছেন, সেই প্রশ্নও তোলেন। যুব তৃণমূল নেতার অভিযোগ, ‘‘বাম আমলে মতিগঞ্জে দেবদাসকে কেউ হিসসা না দিয়ে জমি-বাড়ি কিনতে পারতেন না।’’ তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠনের নেতা নারায়ণ ঘোষও দেবদাসের বিরুদ্ধে দুর্নীতির একই অভিযোগ তোলেন। বিজেপির সভা থেকে দেবদাস সরব হয়েছিলেন ডাকুর বিরুদ্ধে। এ দিন দেবদাসের সঙ্গে ডাকুর একটি ছবি দেখিয়ে নারায়ণ বলেন, " ২০১৫ সালের ভোটে ডাকুর হয়ে দেবদাস ভোট লুট করেছিল। সে এখন ডাকুর বিরুদ্ধে কথা বলছে।’’
দেবদাস পাল্টা বলেন, ‘‘লোকসভা ভোটের পর ওদেরই রাজনৈতিক সমাধি হয়ে যাবে। আর দিল্লিতে আমার ফ্ল্যাট আছে। ২০১৪ সালে কেনা।’’ নারায়ণের অভিযোগ প্রসঙ্গে দেবদাস বলেন, ‘‘ক্লাবের সদস্যদের সঙ্গে কথা বললেই পরিষ্কার হয়ে যাবে আমি জমি-বাড়ি লুট করেছিলাম কি না!’’ একইসঙ্গে তাঁর দাবি, ‘‘ডাকুর সঙ্গে আমার যে ছবি দেখানো হয়েছে, সেখানে নারায়ণের ছবিও ছিল। সেটা বাদ দিয়েছে। ২০১৫ সালে আমরা একসঙ্গে অমরনাথ গিয়েছিলাম।’’
এ দিন বনগাঁ শহরে একই জায়গা থেকে আলাদা সময়ে তৃণমূলের দু’টি আলাদা মিছিল বের হয়। একটির নেতৃত্ব দেন জেলা সভাপতি বিশ্বজিৎ। অন্যটির পুরপ্রধান গোপাল শেঠ। যা নিয়ে রাজনৈতিক মহলে গুঞ্জন ছড়িয়েছে। দেবদাসের অভিযোগ, ‘‘দু’টি মিছিল থেকে পরিষ্কার, এখানে তৃণমূলের গোষ্ঠী কোন্দল কোন পর্যায়ে গিয়েছে।’’
এ নিয়ে কোনও মন্তব্য না করলেও বিশ্বজিৎ বলেন, ‘‘ওর (দেবদাস) লজ্জা, ঘৃণা নেই। ও তৃণমূলে আসার চেষ্টা করছে। বনগাঁর মানুষ ওর মতো অন্ধকার জগতের মানুষকে চান না। রাজনীতিতে এসেছেন
লুটপাট করতে।’’ এ কথা মানেননি দেবদাস।
গত শুক্রবারের সভায় বিশ্বজিতের সম্পত্তি নিয়ে কটাক্ষ করেছিলেন ওই বিজেপি নেতা। সেই সূত্রেই তাঁর কথায় আসে ইডি-র প্রসঙ্গ। বলেছিলেন, ‘‘গাড়ি সরিয়ে ফেলে লাভ নেই। ইডি এমন জিনিস, পাতাল খুঁড়ে বের করে নিয়ে আসবে।’’ আইএনটিটিইউসি-র বনগাঁ সাংগঠনিক জেলার সভাপতি নারায়ণকেও ব্যক্তিগত আক্রমণ করেন দেবদাস।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy