E-Paper

কাকদ্বীপ মৎস্যবন্দর বেহাল, নষ্ট হচ্ছে মাছ

প্রশাসন ও স্থানীয় মৎস্যজীবী সংগঠন সূত্রে খবর, বাম আমলে কাকদ্বীপের গঙ্গাধরপুর এলাকার কালনাগিনী খালের পাশে গড়ে ওঠে ওই মৎস্যবন্দর।

সমরেশ মণ্ডল

শেষ আপডেট: ২০ জুলাই ২০২৩ ০৭:৫৭
ভাটার সময় এমনই অবস্থা হয় কালনাগিনী খালের।

ভাটার সময় এমনই অবস্থা হয় কালনাগিনী খালের। —নিজস্ব চিত্র।

দীর্ঘদিন ধরে পলি জমে গভীরতা কমে গিয়েছে কালনাগিনী খালের। সংস্কার হচ্ছে কই! ফলে, মুড়িগঙ্গা নদী পেরিয়ে কাকদ্বীপ মৎস্যবন্দরে ট্রলার নিয়ে প্রবেশ করতে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে বলে অভিযোগ তুলেছেন মৎস্যজীবীরা। তাঁদের খেদ, বন্দরের পরিকাঠামোগত সমস্যাতেও ভুগতে হচ্ছে। বার বার প্রশাসনকে জানানো হলেও কোনও পদক্ষেপকরা হয়নি।

রাজ্যের মৎস্যমন্ত্রী বিপ্লব রায়চৌধুরী বলেন, ‘‘বন্দরের সমস্যাগুলি দ্রুত খতিয়ে দেখে যথাযথ ব্যবস্থা নেব।’’ সমস্যার কথা মেনে নিয়ে মৎস্য দফতরের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘বন্দরের খালে ড্রেজিং না হওয়ায় ট্রলারগুলির ঢুকতে সমস্যা হচ্ছে। ফের ড্রেজিং করতে প্রায় ১৫-২০ কোটি টাকার প্রয়োজন। সমস্ত তথ্য রাজ্য সরকারকে পাঠানো হয়েছে। অর্থ বরাদ্দ হয়ে অনুমতি মিললে দ্রুত বন্দরের কাজ শুরু হবে। অন্যান্য সমস্যাগুলিরও দ্রুত সমাধান করা হবে।’’

প্রশাসন ও স্থানীয় মৎস্যজীবী সংগঠন সূত্রে খবর, বাম আমলে কাকদ্বীপের গঙ্গাধরপুর এলাকার কালনাগিনী খালের পাশে গড়ে ওঠে ওই মৎস্যবন্দর। খালটি মুড়িগঙ্গার সঙ্গে যুক্ত। বন্দর তৈরির সময় খালের গভীরতা ট্রলার প্রবেশের জন্য পর্যাপ্ত ছিল। গভীর সমুদ্র থেকে ট্রলারগুলি মুড়িগঙ্গা হয়ে ওই খালে ঢুকত। কিন্তু অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে পলি না কাটার ফলে খালের গভীরতা অনেকটাই কমে গিয়েছে। বর্তমানে ভাটার সময় ওই খালে জল প্রায় থাকে না বললেই চলে। ফলে, সমুদ্র থেকে ফেরা মাছবোঝাই ট্রলারগুলিকে জোয়ারের জন্য নদীতে ৫-৬ ঘণ্টারও বেশি অপেক্ষাকরতে হয়। অনেক সময়ই এতে বহু মাছ নষ্ট হচ্ছে।

মৎস্যজীবীদের খেদ, বন্দরে মাছ সংরক্ষণের কোনও ব্যবস্থা গড়ে ওঠেনি। ২০১৬ সালে তৎকালীন মৎস্যমন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহ একটি হিমঘর ও ‘ড্রাই ডক’-এর উদ্বোধন করেছিলেন। এতদিনেও সেখানে পরিষেবা চালু হয়নি। মাছ সংরক্ষণের ব্যবস্থা না থাকায় ট্রলার থেকে মাছ নামানোর পর তা দ্রুত ডায়মন্ড হারবার আড়তে নিয়ে যেতে হয়। এতে সময় ও খরচ— দুই-ই বেড়ে যায়। অনেকসময় সংরক্ষণের অভাবে দামি মাছ নষ্ট হয়ে যায়।

স্থানীয় মৎস্যজীবী রঞ্জিৎ দাস বলেন, ‘‘মাছ নিয়ে বন্দরের খালে ঢোকার মুখে কয়েক ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়। তারপর জোয়ার এলে ঘাটে পৌঁছেই মাছ নিয়ে ডায়মন্ড হারবার যাওয়ার তাড়া থাকে। বেশিরভাগ সময়ই যতটা মাছ নিয়ে আসি, তার ৩০ শতাংশই নষ্ট হয়।’’

‘ড্রাই ড্রক’টি তৈরি হয়েছিল ট্রলার মেরামতির জন্য। কিন্তু কিছু ত্রুটি থাকায় সেখানে ট্রলার মেরামতি করা যায় না বলে জানিয়েছেন মৎস্যজীবীরা। ট্রলারের জ্বালানি তেল সরবরাহের জন্যেও এখানে কোনও ব্যবস্থা নেই। অথচ, এই বন্দর ব্যবহার করে হাজারের বেশি ট্রলার। প্রায় লক্ষাধিক শ্রমিক, মৎস্যজীবী এই বন্দরের উপর নির্ভরশীল।

মৎস্যজীবীদের আরও অভিযোগ, তাঁদের নিরাপত্তার বিষয়টি নিয়েও প্রশাসন উদাসীন। গভীর সমুদ্রে ট্রলারগুলির সঙ্গে যোগাযোগ রাখার জন্য কোনও ওয়্যারলেস ব্যবস্থা নেই। বিপদে পড়লে নিজেদের অবস্থান জানানোর কোনও উপায়ও থাকে না তাঁদের কাছে।

কাকদ্বীপ মৎস্যজীবী ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক বিজন মাইতি বলেন, ‘‘এটি জেলার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বন্দর। এখানে ড্রাই ডক ও হিমঘরের ব্যবস্থা থাকলেও তা ব্যবহার করা যায় না। ফলে, নিত্যদিন লোকসানের ধাক্কা সামলাতে হচ্ছে।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

kakdwip Dock

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy