বেহাল: খোলা আকাশের নীচেই চলছে ক্লাস। নিজস্ব চিত্র।
দীর্ঘ দু’বছর লকডাউন এবং অতিমারির জেরে রাজ্যের স্কুল, কলেজ, অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র বন্ধ রাখা হয়েছিল। স্কুল-কলেজ খুলে যাওয়ার কিছুদিন পরে ১ মার্চ থেকে চালু হয়েছে অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রগুলি। কিন্তু বহু কেন্দ্রের পরিকাঠামো বেহাল। গাছের তলায় চলছে কাজ। আগ্রহ হারাচ্ছে পড়ুয়ারা। অভিভাবকেরা এসে শুধু খাবার নিয়ে ফিরে যাচ্ছেন। পড়াশোনা কার্যত শিকেয় উঠেছে।
এই অবস্থা সাগর ব্লকের ঘোড়ামারা দ্বীপের মৃত্যুঞ্জয় মণ্ডল অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের। সকাল সাড়ে ৯টা নাগাদ সেখানে গিয়ে দেখা গেল, একটি গাছের তলায় ত্রিপল খাটিয়ে ঝুপড়ি করে রান্নাবান্না চলছে। চারপাশ খোলা। রোদের হাত থেকে বাঁচতে ঝুলছে এক টুকরো ত্রিপল। পাশেই ত্রিপল বিছিয়ে পড়াশোনা চলছে বাচ্চাদের।
গত বছর মে মাসে ইয়াসের দাপটে পুরো দ্বীপটাই কার্যত ছিন্নভিন্ন হয়ে গিয়েছিল। সর্বস্ব ভেসে গিয়েছিল অনেকের। দ্বীপের চুনপুরি গ্রামে মৃত্যুঞ্জয় মণ্ডলের বাড়িতে অস্থায়ী ভাবে ২০১১ সালে শুরু হয়েছিল এই অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রটি। তখন ওই কেন্দ্রে পড়ুয়ার সংখ্যা ছিল প্রায় ৬৪ জন। ইয়াসে অস্থায়ী এই অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র গোটাটাই নদীতে তলিয়ে যায়। কোনও মালপত্রও উদ্ধার করা যায়নি বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেল। এখন হাতে গোনা জনা পনেরো পড়ুয়া আসে। অথচ, খাতায়-কলমে সেই সংখ্যা ৪৬। কয়েকজন অভিভাবকের দেখা মেলে খিচুড়ি নিতে, কিন্তু পড়ুয়াদের দেখা মেলে না।
খিচুড়ি নিতে এসেছিলেন সুপ্রীতি মাইতি। বললেন, ‘‘আমার ছেলেকে প্রায় এক বছর হল এখানে নিয়ে আসছি। গাছের তলায়, রাস্তার পাশে অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র চলছে। বৃষ্টি পড়লে ছেলেমেয়েরা বসতে পারে না। ঠান্ডা-গরমে কষ্ট পায়। এক বছর আগেও চুনপুরি গ্রামে এক জনের বাড়িতে পড়ানো হত। ইয়াসে পুরো বাড়িটাই নদীতে তলিয়ে গিয়েছে। তারপর থেকেই এই দশা।’’
পারমিতা দাস (মণ্ডল) নামে এক অভিভাবক বললেন, ‘‘আমার দেড় মাসের সন্তান। খিচুড়ি আনতে যাই। খোলা আকাশের নীচে পড়াশোনা হয়। একটা ছোট ঘরে ত্রিপল দিয়ে ঘেরা, সেখানে রান্না হয়। স্থায়ী ঘর থাকলে বাচ্চাদের সুবিধা হত।’’
স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, ২০১১ সাল নাগাদ শুরু হয়েছিল এই অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রটি। প্রথম থেকেই কোনও ঘর নেই। আগে পাশের একটি বাড়িতে চলত কাজ। ইয়াসের পরে কিছুদিনের মধ্যে কেন্দ্রটি গাছ তলায় চলে
আসে। স্থানীয় বাসিন্দাদের অনেকে জানালেন, বাচ্চাদের পাঠাতে চান, কিন্তু এখানে তাদের বসার ঘরটুকু পর্যন্ত নেই। রান্না হয় খোলা আকাশের নীচে। এখন ত্রিপলের ছাউনির নীচে রান্না হচ্ছে। বৃষ্টি পড়লে অন্যের বাড়িতে রান্না করতে হয়। স্থানীয় বাসিন্দা ভাস্করচন্দ্র দাস জানালেন, এই কেন্দ্রে বাচ্চাদের কোনও নিরাপত্তা নেই।
অন্বেষা পাত্র নামে অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের এক ছাত্রী বলে, ‘‘বৃষ্টি হলে এখানে আর বসা যায় না। বাড়ি চলে যেতে হয়। বাথরুমে যাওয়ার প্রয়োজন হলেও বাড়ি যেতে হয়।’’
এ বিষয়ে জেলা প্রকল্প আধিকারিক (আইসিডিএস) অমিত সমাদ্দার বলেন, ‘‘আমরা খুব তাড়াতাড়ি কিছু একটা ব্যবস্থা করব। যে সমস্ত অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র মেরামতির প্রয়োজন, সেগুলি করা হবে। যে সমস্ত কেন্দ্র কারও বাড়িতে চলে, সেগুলির জন্য অন্য কোথাও ব্যবস্থা করে দেওয়া হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy