মৃত কিশোর।
কবর থেকে দেহ তুলে ময়নাতদন্তে পাঠাল পুলিশ। বুধবার ঘটনাটি ঘটেছে বাগদা থানার মালিপোতা গ্রামে।
পুলিশ জানিয়েছে, মৃত কিশোরের নাম সুমন মণ্ডল (১৬)। সে তার মা ও বোনের সঙ্গে বনগাঁর মণিগ্রামে থাকত। মাস কয়েক আগে মহারাষ্ট্রের পুণেতে কাজ করতে যায়। পুণের নারায়ণগাঁওতে তার মৃত্যু হয়। অ্যাম্বুল্যান্সে দেহ আসে। এরপরেই ওই কিশোরের বাবা দেহ কবর দিয়ে দেয় বলে অভিযোগ। কিন্তু কিশোরের মা বাগদা থানায় অভিযোগ করেন, এই মৃত্যুর কারণ নিয়ে তাঁর সন্দেহ রয়েছে। ময়নাতদন্ত প্রয়োজন। এরপরেই বুধবার একজন ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে দেহ কবর থেকে তুলে ময়নাতদন্তে পাঠানো হয়।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বছর সতেরো আগে বাগদার মালিপোতা গ্রামের শাহজাহান মণ্ডলের সঙ্গে বনগাঁর মণিগ্রামের পাপিয়া মণ্ডলের বিয়ে হয়। বিয়ের তিন বছর পর নানা অশান্তির কারণে শাহজাহান পাপিয়াকে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেন। তিনি ছেলে সুমনকে নিয়ে বনগাঁর মণিগ্রামে বাপের বাড়িতে চলে যান। বছর কয়েক আগে শাহজাহান মালিপোতা গ্রামেই একজন বাংলাদেশি মহিলাকে বিয়ে করেন।
পুলিশ জানিয়েছে, কয়েক মাস আগে শাহজাহান কাজের জন্য সুমনকে পুণের নারায়ণগাঁওতে তাঁর বন্ধু জাহাঙ্গির বিশ্বাসের কাছে পাঠান। সেখানে সুমন সোনার দোকানে কাজ করত। সুমন ফোনে তার মায়ের সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছিল। পাপিয়ার দাবি, রবিবার দুপুরে সুমন তাঁকে ফোন করে জানায়, বাবা তার কাছে অনেক টাকা দাবি করছে। ওই রাতেই শাহজাহান মণিগ্রামে এসে পাপিয়াকে জানায়, সুমন আত্মহত্যা করেছে। পাপিয়ার সন্দেহ হওয়ায় তিনি মৃতদেহ এলে সেটির ময়নাতদন্ত করার কথা বলেন।
পুলিশ জানিয়েছে, সোমবার মৃতদেহ গ্রামে পৌঁছয়। সেটি ময়নাতদন্তে পাঠাবেন বলে তিনি অপেক্ষা করছিলেন। কিন্তু মণিগ্রামে দেহ না এনে অন্য রাস্তা দিয়ে ঘুরিয়ে সেটিকে বাগদার মালিপোতায় নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে শাহজাহানের পারিবারিক কবরস্থানে তড়িঘড়ি দেহটি কবর দিয়ে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ।
পাপিয়া বলেন, ‘‘আমার ছেলের মৃত্যু সন্দেহজনক। আমার কাছে না এনে তাড়াহুড়ো করে তাকে কেন কবর দেওয়া হল? ময়নাতদন্ত করালেই আসল সত্য জানা যাবে।’’ ঘটনার তদন্ত চেয়ে বাগদা থানায় অভিযোগ করেছেন পাপিয়া।
বুধবার দুপুরে দেহ কবর থেকে তোলার সময় পাপিয়া সেখানে উপস্থিত ছিলেন। তিনি দেহটি শনাক্ত করেন। তারপর দেহটি ময়নাতদন্তে পাঠানো হয়। ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট নাজিম আলি মুফতি বলেন, ‘‘দেহ কবর থেকে তুলে ময়নাতদন্তে পাঠানো হল। এ বার চিকিৎসকেরা মৃত্যুর প্রকৃত কারণ বলতে পারবেন।’’ বনগাঁর এসডিপিও অশেষ বিক্রম দস্তিদার বলেন, ‘‘মৃতের মায়ের অভিযোগের ভিত্তিতে মামলা শুরু করা হয়েছে। দেহটির ময়নাতদন্তের পর মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা যাবে।’’
গ্রামবাসীরা জানান, পুণে থেকে অ্যাম্বুল্যান্সে দেহটি গ্রামে পৌঁছানোর পরই কোনও মতে দেহ নামিয়েই ফিরে যায় সেটি। পুণে থেকে বাগদা আসার জন্য গাড়িভাড়া বাবদ মোটা টাকা প্রয়োজন। সেই টাকা কে দিল— তাও খতিয়ে দেখছে পুলিশ। সুমনের বাবা শাহজাহানেরও খোঁজ চলছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy