Advertisement
০৩ মে ২০২৪
Pradhan Mantri Awas Yojana

দেগঙ্গার গ্রামে ঘুরে আবাস যোজনায় গরমিল খুঁজছে সিপিএম-বিজেপি

উত্তর ২৪ পরগনার দেগঙ্গা ব্লকে চলছে কাজ। ‘অনিয়মের তালিকা’ প্রশাসনের কাছে জমা দেওয়া হবে বলে জানিয়েছে দুই দল।

সরেজমিন: বাঁ দিকে, চাকলা পঞ্চায়েতে সিপিএমের নজরদারি। নিজস্ব চিত্র

সরেজমিন: বাঁ দিকে, চাকলা পঞ্চায়েতে সিপিএমের নজরদারি। নিজস্ব চিত্র

ঋষি চক্রবর্তী
দেগঙ্গা শেষ আপডেট: ১০ জানুয়ারি ২০২৩ ০৮:১৬
Share: Save:

উদ্দেশ্য অভিন্ন। তবে উদ্যোগ স্বতন্ত্র।

গ্রামে গ্রামে ঘুরে আবাস যোজনার ঘর বিলি নিয়ে অনিয়ম খতিয়ে দেখতে বেরিয়ে পড়েছে সিপিএম এবং বিজেপি। কেন্দ্রের চাপের মুখে পড়ে সরকারি উদ্যোগে আবাস যোজনার তালিকা খতিয়ে দেখার কাজ হয়েছে। তাতে বাদ গিয়েছে বহু নাম। কিন্তু তারপরেও অভিযোগ বিস্তর। অভাবী বহু মানুষ ঘর পাননি। আবার তালিকায় এমন অনেকের নাম উঠেছে, যাঁদের পাকা বাড়ি আছে। শাসকদেলর ঘনিষ্ঠেরা অনেকেই তালিকায় জায়গা পেয়েছেন বলে অভিযোগ। পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে বেরিয়ে পড়েছে বিরোধী শিবির।

উত্তর ২৪ পরগনার দেগঙ্গা ব্লকে চলছে কাজ। ‘অনিয়মের তালিকা’ প্রশাসনের কাছে জমা দেওয়া হবে বলে জানিয়েছে দুই দল।

উত্তর ২৪ পরগনায় সরকারি আবাস প্লাস যোজনায় নাম উঠেছে প্রায় আড়াই লক্ষ মানুষের। দেগঙ্গা ব্লকে ৮,৯৮৬ জন আবেদনকারীর নাম প্রকাশিত হয়েছে। বিরোধী দল ও স্থানীয় মানুষের অনেকের দাবি, তালিকায় নাম আছে বহু সচ্ছল মানুষের।

অভিযোগ পুরোপুরি অস্বীকার করছে না শাসক দলও। দেগঙ্গা ব্লক তৃণমূলের সহ সভাপতি তুষার দাস বলেন, ‘‘২০১৮ সালের তালিকা খতিয়ে দেখেছেন ব্লক প্রশাসনের কর্তা, পুলিশ, ও আশাকর্মীরা। কিছু আবেদনকারী সচ্ছল, এটা ঠিক। আবেদন করার পরে ঋণ নিয়ে অনেকে বাড়ি সংস্কার করেছেন। অনেকের যৌথ পরিবার। গত চার বছরে সংসার বেড়েছে। হাঁড়ি আলাদা হয়েছে অনেকের। এ সব কারণে কিছু জটিলতা তৈরি হয়েছে তালিকা তৈরিতে। তা নিয়েই রাজনীতি করছে বিরোধীরা। দলের তরফে আমরাও সরকারকে জানিয়েছি কিছু অনিয়মের কথা।’’

তবে তৃণমূলের সংশোধন-কর্মসূচিতে ভরসা না রেখে দেগঙ্গা ব্লকে এই কাজে নেমে পড়েছে বাম-বিজেপি। আমুলিয়া, বেড়াচাঁপা ১, বেড়াচাঁপা ২, চাকলা, চাঁপাতলা, চৌরাশি, দেগঙ্গা ১, দেগঙ্গা ২, হাদিপুর ঝিকড়া ১, হাদিপুর ঝিকড়া ২, কলসুর, সোহাই শ্বেতপুর ও নূরনগর পঞ্চায়েত এলাকায় কাজ চলছে বলে জানিয়েছে দুই দল।

সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য আহমেদ আলি খান বলেন, ‘‘সার্ভে করার পরে যে তালিকা প্রকাশিত হয়েছে, সেখানে বহু সচ্ছল ব্যক্তির নাম আছে। সে সব তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। ওই সব মানুষের আয়ের উৎসও জানার চেষ্টা চলছে। সেই সঙ্গে যে সব গরিব মানুষ তালিকায় বাদ পড়েছেন, তাঁদের তালিকাও করা হচ্ছে।’’

বিজেপির বারাসত সাংগঠনিক জেলা সভাপতি তাপস মিত্র বলেন, ‘‘দেগঙ্গা ব্লক থেকে বহু অভিযোগ আসছে। আমাদের কার্যালয়ে এসে বহু গরিব মানুষ জানাচ্ছেন, তাঁরা বাড়ি পাননি। সেই তালিকা আমরা তৈরি করছি। কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দলও আসবেন বলে আশা করছি।’’

তা হলে কী বাম-বিজেপির এটি যৌথ কর্মসূচি?

সে কথা মানছেন না দু’দলের নেতারা। আহমেদ বলেন, ‘‘ওঁরা ওঁদের মতো কাজ করছেন। আমরা নিজেদের মতো করে গ্রামে ঘুরছি।’’ তাপসের কথায়, ‘‘বামেরা কী করছে বলতে পারব না। আমরা দলের উপর মহলের নির্দেশে এই কর্মসূচি নিয়েছি।’’

তবে গ্রামে ঢুকে কাজ করা সহজ হচ্ছে না বলে জানালেন দু’দলের নেতারাই। সিপিএমের দেগঙ্গা এরিয়া কমিটির সদস্য শেখ সাহিনুজ্জামান রহমান বলেন, ‘‘তৃণমূলের অত্যাচারে মানুষ অতিষ্ঠ। আমাদের সঙ্গে প্রকাশ্যে কথা বলতে ভয় পাচ্ছেন গ্রামের অনেকেই। আমরাও তাঁদের বিপদে ফেলতে চাই না বলে সর্বত্র যাচ্ছি না। অন্য নানা ভাবে তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে।’’

বিজেপির দেগঙ্গা ব্লকের নেতা তরুণ ঘোষ বলেন, ‘‘তৃণমূলের হামলার ভয়ে অনেকেই প্রকাশ্যে মুখ খুলছেন না। আমরা চেষ্টা করছি যতটা সম্ভব তথ্য জোগাড় করতে।’’

দেগঙ্গার কার্তিকপুরের বাসিন্দা প্রশান্ত কাহার জানালেন, ২০১১ সালে সরকারি আবাস যোজনার তালিকায় তাঁর নাম ছিল। ২০১৮ সালে নাম বাদ যায়। এবারও ঘরের তালিকায় নাম আসেনি। বিকাশ নিজের ভাঙাচোরা ঘর দেখাতে গিয়ে কেঁদে ফেলেন। বললেন, ‘‘আমপানের সময়ে ঘর ভেঙেছিল। তখনও কোনও সাহায্য পাইনি।’’

চাকলা পঞ্চায়েতের বল্লভপুর মাঠপাড়ার বাসিন্দা রেশমা খাতুন থাকেন প্লাস্টিকের তাঁবু-ঘেরা একচিলতে ঘরে। তিনিও জানালেন, আমপানের পরেও ক্ষতিপূরণ পাননি, সরকারি ঘরের তালিকাতেও নাম নেই তাঁর। ঘরের জন্য বহুবার আবেদন করেও কাজ হয়নি। ওয়াহাবউদ্দিন মোল্লা, জোহর আলি, মোনোয়ারা বিবি, মর্জিনা বিবি, আলাউদ্দিন মণ্ডলদেরও অভিযোগ কার্যত এক। পঞ্চায়েতে বহুবার ঘরের জন্য আবেদন করেও ব্যর্থ সকলে।

দেগঙ্গা এলাকাটি বারাসতের লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত। তৃণমূলের সাংসদ কাকলি ঘোষদস্তিদার বলেন, ‘‘শান্ত দেগঙ্গাকে অশান্ত করতে চক্রান্ত করছে সিপিএম-বিজেপি। শীঘ্রই দিদির সুরক্ষা কবচ শুরু হবে। তখন মানুষের অভাব-অভিযোগ সব শোনা হবে। সমাধানের চেষ্টা করা হবে।’’ বিরোধীদের তাঁর কটাক্ষ, ‘‘সিপিএম-বিজেপির লোক কোথায় যে গ্রামে গ্রামে গিয়ে সার্ভে করবে?’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Pradhan Mantri Awas Yojana Deganga CPIM BJP
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE