E-Paper

অশান্ত বাংলাদেশ, প্রভাব পেট্রাপোলের অর্থনীতিতে

বনগাঁয় বড় কোনও শিল্প বা কল-কারখানা নেই। বহু মানুষ পেট্রাপোল বন্দরকে কেন্দ্র করে জীবিকা নির্বাহ করেন।

শেষ আপডেট: ২১ জুলাই ২০২৪ ০৫:৩২
 শুনশান পেট্রাপোল সীমান্ত।

 শুনশান পেট্রাপোল সীমান্ত। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক।

বাংলাদেশ উত্তাল। তার প্রভাব এসে পড়ছে পেট্রাপোল বন্দর কেন্দ্রিক অর্থনীতির উপর। বৃহস্পতিবার থেকে বন্দর দিয়ে মানুষের যাতায়াত প্রায় নেই। কার্যত মাছি তাড়াচ্ছেন এখানকার খাবারের দোকান, ফলের দোকান, মিষ্টির দোকান বা মুদ্রা বিনিময় কেন্দ্রের কর্মীরা। অটো বা যাত্রিবাহী গাড়ির চালকেরাও ঘণ্টার পর ঘণ্টা বেকার বসে থাকছেন। কবে বাংলাদেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে, সেই অপেক্ষায় রয়েছেন সকলে।

দেবব্রত দাসের কথাই ধরা যাক। তিনি পেট্রাপোল বন্দর-বনগাঁ স্টেশন রুটে অটো চালান। শনিবার সকাল সাড়ে ১০ নাগাদ পেট্রাপোল বন্দরে গিয়ে দেখা গেল পর পর অটো দাঁড়িয়ে। যাত্রী নেই। দেবব্রতর খেদ, ‘‘আমাদের রুটে ৯২টি অটো চলে। অন্য সময়ে আমি প্রতিদিন গড়ে ৫-৬ বার যাতায়াত করি। একবার যাত্রায় ২০০ টাকা ভাড়া পাই। আজ সকাল ৬টায় এসেছি। কোনও যাত্রী পাইনি। বাংলাদেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে আয় বন্ধ হয়ে যাবে।’’ অন্য যাত্রিবাহী গাড়ির চালকদেরও একই অবস্থা।

বন্দরের একটি ভাতের হোটেলের এ দিন ভিড় দেখা গেল না। হোটেল মালিক স্বপনকুমার দে বলেন, ‘‘বাংলাদেশের পরিস্থিতির কারণে যাত্রীদের যাতায়াত কমেছে। বুধবার থেকে হোটেলে ভিড় নেই।’’

বনগাঁয় বড় কোনও শিল্প বা কল-কারখানা নেই। বহু মানুষ পেট্রাপোল বন্দরকে কেন্দ্র করে জীবিকা নির্বাহ করেন। তাঁদের রুজি-রোজগারের বেশির ভাগটাই হয় বাংলাদেশি যাত্রীদের থেকে। এ দিন সকাল থেকে পেট্রাপোল বন্দরে পণ্য রফতানিও বন্ধ হয়ে যায়। আমদানি চলে ধীর গতিতে। ও দেশের পরিস্থিতির উন্নতি না হলে বাণিজ্যে ব্যাপক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। পণ্য আমদানি-রফতানির সূত্রে অনেক মানুষ রোজ বন্দরে আসেন। তাঁদের আসা কমে গেলে বন্দরের অর্থনীতি আরও ধাক্কা খাবে বলে আশঙ্কা।

দু'দেশের মধ্যে যাতায়াতের সময় যাত্রীরা বন্দরের মুদ্রা বিনিময় কেন্দ্রগুলি থেকে টাকা ভাঙান। কেন্দ্রগুলিতেও ভিড় নেই। একটি কেন্দ্রের কর্মী বাপ্পা ঘোষ বলেন, ‘‘যাত্রী একেবারে কমে গিয়েছে। ব্যবসা কার্যত বন্ধের মুখে।’’

বাংলাদেশে থাকা ভারতীয়রা বিস্তর কাঠখড় পুড়িয়ে দেশে ফিরছেন। এমনই একজন নদিয়ার বগুলার বাসিন্দা বিলাস বিশ্বাস। বাংলাদেশের মাগুরাতে আত্মীয়ের বাড়িতে গিয়েছিলেন। মহারাষ্ট্রের বাসিন্দা মতিজুল রহমানও এ দিন দেশে ফেরেন। তিনি বলেন, ‘‘ বাংলাদেশে বেড়াতে গিয়েছিলাম। আরও কয়েক দিন থাকার ইচ্ছে ছিল। কিন্তু অশান্তির কারণে দ্রুত ফিরে এসেছি। যশোর থেকে কয়েক বার গাড়ি পাল্টে বেনাপোলে পৌঁছেছি।’’

বাংলাদেশের বাগেরহাটের বাসিন্দা ফুল মিয়াঁ সেখানকার উত্তাল পরিস্থিতির মধ্যেও চিকিৎসার কারণে এ দেশে এসেছেন। বেঙ্গালুরুতে চিকিৎসক দেখাতে যাওয়ার আগে বললেন, ‘‘ওখানে বাস-ট্রেন সব বন্ধ। ৫ হাজার টাকা খরচ করে অ্যাম্বুল্যান্স ভাড়া করে এসেছি। চিকিৎসক দেখানোটা খুবই জরুরি।’’ পেট্রাপোল হয়ে বাংলাদেশে ফিরছিলেন নড়াইলের রবীন্দ্রনাথ চক্রবর্তী। চাকদহে আত্মীয়ের বাড়িতে এসেছিলেন। বললেন, ‘‘বাড়ির লোকজনের সঙ্গে যোগাযোগ নেই। গাড়ি চলছে না। কী ভাবে ফিরব, জানি না।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Bangladesh Protest Petrapol

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy