Advertisement
E-Paper

আরএসএস পাঠিয়েছে? প্রশ্ন যুবককে

দিন কয়েক পরে সবেমাত্র বাড়ি ফিরেছেন গৃহকর্ত্রী। ক’দিন আগে দেশপ্রেমের নামে তাণ্ডবের চিত্র এখনও বাড়ির গায়ে। বাড়িতে ঢুকতে গিয়ে দেখলেন মিটার বক্স ভাঙা। 

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০১:৩৮
ফেরা: বাড়িতে এলেন চিত্রদীপের স্ত্রী মহুয়া। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক

ফেরা: বাড়িতে এলেন চিত্রদীপের স্ত্রী মহুয়া। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক

দিন কয়েক পরে সবেমাত্র বাড়ি ফিরেছেন গৃহকর্ত্রী। ক’দিন আগে দেশপ্রেমের নামে তাণ্ডবের চিত্র এখনও বাড়ির গায়ে। বাড়িতে ঢুকতে গিয়ে দেখলেন মিটার বক্স ভাঙা।

সবেমাত্র ঘরে পা রেখেছেন, রাস্তার উল্টো দিকে দাঁড়িয়ে থাকা এক জন চিৎকার করে উঠল, ‘‘দেশদ্রোহীকে বিদ্যুতের লাইন দেওয়া হবে না।’’

গৃহকর্ত্রীর কানে যায়নি কথাটা। তাঁর সঙ্গে যিনি ছিলেন, তিনি এগিয়ে গিয়ে প্রশ্ন করলেন, ‘‘আপনাকে কি আরএসএস পাঠিয়েছে?’’ উত্তর মিলল না। খানিকক্ষণ নিজের মনে চোটপাট করতে করতে লোকজন জোটাতে না পেরে রণে ভঙ্গ দিল অনাহূত আগন্তুক।

শুক্রবার বনগাঁর বাড়িতে ফেরার মুহূর্তে এমনই অভিজ্ঞতা হল মহুয়া সেনের। স্বামী চিত্রদীপ সোম ক’দিন আগে ফেসবুকে পুলওয়ামায় জঙ্গি হানায় জওয়ানদের মৃত্যুতে কিছু প্রশ্ন তুলেছিলেন। যার জেরে কিছু লোক বাড়িতে হাজির হয়ে তাঁকে ক্ষমা চাইতে বাধ্য করে। ‘ভারতমাতা কি জয়’ বলতে বাধ্য করা হয়। পরে ভাঙচুরও চলে চিত্রদীপের বাড়িতে।

ঘটনার পরে এলাকা ছাড়েন স্বামী-স্ত্রী। এ দিন বনগাঁ থানায় গোটা ঘটনা লিখিত ভাবে জানিয়েছেন মহুয়া। ‘অজ্ঞাতপরিচয়’ কয়েক জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানিয়েছেন। পুলিশ অবশ্য আগেই নিজে থেকে মামলা শুরু করেছিল। থানা থেকে জানানো হয়েছে, আগের এফআইআরের সঙ্গে মহুয়ার দায়ের করা অভিযোগটি জুড়ে দেওয়া হবে।

এ দিন বেলা ২টো নাগাদ বনগাঁ থানা থেকে ভ্যানে বাড়ি পৌঁছন মহুয়া। সঙ্গে ছিলেন চিত্রদীপের বন্ধু, যুক্তিবাদী সংগঠনের সদস্য দীপক ব্যাপারী। বনগাঁর বিচালিহাটার বাড়িতে তাঁরা ঢুকতেই উৎসাহী লোকজন বাড়ির সামনে জড়ো হয়ে যায়। ঘরের তালা খুলতে পারছিলেন না মহুয়া। পাশের দোকান থেকে স্কু ড্রাইভার এনে তালা খোলেন। বাড়ির পরিচারিকা দূরে দাঁড়িয়েছিলেন। মহুয়া তাঁকে ঘরে ডেকে নেন। দীপক তখনও ঘরের বাইরে। তাঁরই কানে আসে জনতার ভিড়ে দাঁড়িয়ে থাকা এক জনের মন্তব্য। রুখে দাঁড়ান তিনি। গজগজ করতে করতে সরে পড়ে ওই ব্যক্তি। দীপক সেই ছবি মোবাইলে তুলে রেখেছেন বলে জানালেন।

তবে ঘটনাটিকে মহুয়ারা গুরুত্ব দিতে নারাজ। দীপক বলেন, ‘‘ওই ব্যক্তি সম্ভবত মদ্যপ ছিল। সুস্থ-স্বাভাবিক বলে আমাদের মনে হয়নি। বিষয়টিকে আমরা গুরুত্ব দিচ্ছি না। এখানে এসে কোনও সমস্যায় পড়তে হয়নি।’’ এ দিন বেলা ১২টা নাগাদ বিরাটি থেকে মহুয়া প্রথমে যান বনগাঁ থানায়। সঙ্গে ছিলেন এপিডিআর-এর বনগাঁ শাখার সম্পাদক অজয় মজুমদার। সোশ্যাল মিডিয়ায় চিত্রদীপকে যারা হুমকি দিয়েছিল, তার স্ক্রিনশট পুলিশের কাছে জমা দিয়েছেন মহুয়া। পুলিশের এক কর্তা বলেন, ‘‘বাড়িতে থাকতে ওঁদের যাতে কোনও অসুবিধা না হয়, সেটা দেখা হচ্ছে।’’

অজয় বলেন, ‘‘আমাদের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কাছে চিত্রদীপরা অভিযোগ করেছিলেন। আমরা মহুয়ার সঙ্গে এসেছিলাম থানায় অভিযোগ করতে ও নিরাপত্তার দাবি জানাতে।’’ তাঁর কথায়, ‘‘দেশপ্রেমের নামে একদল মানুষ যে ভাবে হেনস্থা করল, বাড়ি ভাঙচুর করল— তা মেনে নেওয়া যায় না।’’ মহুয়া জানান, রবিবার দুপুরে এক দল লোক বাড়িতে এসে চিত্রদীপকে ক্ষমা চাইতে বাধ্য করে। পরে তাঁরা খবর পান, তাঁদের বাড়ি ভাঙচুরের ছক কষা হচ্ছে। বনগাঁ স্টেডিয়ামে লোক জড়ো হচ্ছে। খবর পেয়ে বাড়ি ছাড়েন তাঁরা। সন্ধ্যার দিকে সত্যিই ভাঙচুর চলে বাড়িতে।

এ ক’দিনের মধ্যে মুখ্যমন্ত্রীর বাড়িতে গিয়ে ঘটনার কথা জানিয়েছেন চিত্রদীপরা। মুখ্যমন্ত্রী নিজে কড়া প্রতিক্রিয়া দেন। নিমতা থানার পুলিশ বিরাটির বাড়িতে গিয়ে নিরাপত্তার আশ্বাস দিয়ে আসে।

তবে জওয়ানদের ‘শহিদ’ বলা হবে কিনা, এই প্রশ্ন ফেসবুকে তোলায় ডানলপের স্কুল থেকে চাকরি গিয়েছে তাঁর। মহুয়া বলেন, ‘‘স্বামীর ফোনটাও স্কুল কর্তৃপক্ষ রেখে দিয়েছেন। ওটা ফেরত চাই।’’ চিত্রদীপ বলেন, ‘‘এখন আর হুমকি আসছে না ঠিকই, আমিও কয়েক দিনের মধ্যে বনগাঁয় ফিরতে চাই। তবে পরিচিতরা বলেছেন, কিছু দিন পরে আসতে।’’

RSS Lynching Social Media Pulwama Attack Pulwama Terror Attack
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy