Advertisement
E-Paper

গণ্ডি কোথায়, প্রশ্ন নানা মহলে

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, পুলিশ কর্মীদের উপস্থিতিতে ধৃতদের আদালত কক্ষে নিয়ে যাওয়ার কথা। সঙ্গে সিভিক ভলান্টিয়ার থাকতে পারেন। কিন্তু শুধুমাত্র সিভিক ভলান্টিয়ারেরা ওই কাজ করতে পারেন না।   

সীমান্ত মৈত্র

শেষ আপডেট: ২৯ জুলাই ২০১৮ ০০:৪৮

কোর্ট লকআপে থেকে বের করা হল দুই ধৃতকে। তাদের কোমরে দড়ি পরিয়ে হাঁটিয়ে আদালত কক্ষের দিকে নিয়ে গেলেন এক সিভিক ভলান্টিয়ার।

শুক্রবার দুপুরে এমন দৃশ্য দেখা গেল বনগাঁ মহকুমা চত্বরে। উর্দিধারী কোনও পুলিশ কর্মী ছাড়াই শুধু একজন সিভিক ভলান্টিয়ারকে দিয়ে ওই কাজ করানো কতটা যুক্তিপূর্ণ, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। ওই অভিযুক্তেরা যদি পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করত, তা হলে কী খালি হাতে একজন সিভিক ভলান্টিয়ারের পক্ষে তা প্রতিরোধ করা কি সম্ভব হত? সেই প্রশিক্ষণ থাকে না তাঁদের। তা ছাড়া, পুলিশের জন্য নির্ধারিত কাজ সিভিক ভলান্টিয়ারকে দিয়ে করালে পরবর্তী ক্ষেত্রে তাঁদের আচার-ব্যবহারে কোনও ঔদ্ধত্য দেখা দেবে না তো, সে প্রশ্নও থাকছে।

কিছু দিন আগেই মধ্যমগ্রামে সিভিক ভলান্টিয়ারের মারে এক স্কুটার আরোহীর মৃত্যুর অভিযোগকে কেন্দ্র করে তুলকালাম বেধেছিল। সে সময়ে নানা স্তরে অভিযোগ ওঠে, সিভিক ভলান্টিয়ারদের দিয়ে পুলিশের অনেক কাজ করানোয় অল্পবয়সী ওই ভলান্টিয়ারদের অনেকেরই আচরণ লাগামছাড়া হয়ে উঠছে। নিজেদের পুলিশের সমকক্ষ ভাবতে শুরু করছেন তাঁরা। সাধারণ মানুষের সঙ্গে দুর্ব্যবহারের অভিযোগ উঠছে। রাস্তাঘাটে গাড়ি থামিয়ে তল্লাশি চালানোর যে দায়িত্ব পুলিশের, সেই দায়িত্বও অনেক সময়ে সিভিক ভলান্টিয়ারেরা নিজেরাই করতে শুরু করছে। যা মানতে আপত্তি করছেন অনেকে। তা থেকে বিবাদ বাধছে। অনেকের মতে, সিভিক ভলান্টিয়ারদের কাজের গণ্ডি নির্দিষ্ট না হওয়ায় এমন সমস্যা দেখা দিচ্ছে। পুলিশের সঙ্গে ওঠাবসার কারণে এবং পুলিশের হয়ে নানা দায়িত্ব পালন করার ফলে সিভিক ভলান্টিয়ারদের অনেকে বেপরোয়া হয়ে উঠছেন বলে অভিযোগ নানা মহলে।

মধ্যমগ্রামের ঘটনার পরে থানায় থানায় সিভিক ভলান্টিয়ারদের নিয়ে কর্মশালা হয়। সেখানে পুলিশ কর্তারা বার্তা দেন, সিভিক ভলান্টিয়ারেরা যেন নির্দিষ্ট গণ্ডির মধ্যে থেকেই কাজ করেন। কোনও ভাবে রাস্তাঘাটে যেন কারও সঙ্গে দুর্ব্যবহার না করেন। কিন্তু বনগাঁ আদালতের পথে যে ভূমিকায় দেখা গেল সিভিক ভলান্টিয়ারকে, তাতে পুলিশ কর্তাদের সেই বার্তা লঙ্ঘিত হওয়ার জায়গা তৈরি হল নাকি, উঠছে সেই প্রশ্ন।

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, পুলিশ কর্মীদের উপস্থিতিতে ধৃতদের আদালত কক্ষে নিয়ে যাওয়ার কথা। সঙ্গে সিভিক ভলান্টিয়ার থাকতে পারেন। কিন্তু শুধুমাত্র সিভিক ভলান্টিয়ারেরা ওই কাজ করতে পারেন না।

কেন সিভিক ভলান্টিয়ার দিয়ে আদালতে নিরাপত্তা দেওয়ার কাজ করানো হচ্ছে?

পুলিশের একটি সূত্র জানাচ্ছে, কোর্টে পুলিশ কর্মী কম থাকায় মাঝে মধ্যে সিভিকদের দিয়ে কাজ চালাতে হয়। তবে পুলিশ কর্মীরাও থাকেন। বনগাঁর এসডিপিও অনিল রায় বলেন, ‘‘কোর্ট লকআপ থেকে পুলিশ কর্মীর সঙ্গে সিভিক ভলান্টিয়ারেরা থাকেন। এ ক্ষেত্রে কী হয়েছিল, তা খোঁজ নিয়ে দেখা হচ্ছে।’’

বনগাঁ মহকুমা আদালতের মুখ্য সরকারি আইনজীবী সমীর দাস বলেন, ‘‘অভিযুক্তদের এ ভাবে শুধুমাত্র সিভিক ভলান্টিয়ার দিয়ে কোর্ট লকআপ থেকে আদালতে নিয়ে যাওয়া যায় না। পুলিশ কর্মী থাকা বাধ্যতামূলক। ভলান্টিয়ার পুলিশকে সাহায্য করতে পারেন মাত্র।’’

কয়েকজন সিভিক ভলান্টিয়ারের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, পুলিশ কর্মীরা অনেক সময়েই বাড়তি কাজ চাপিয়ে দেন তাঁদের উপরে। ভুল-ত্রুটি ঘটে গেলে দায়িত্ব কার উপরে বর্তাবে, তা অজানা অল্পবয়সী ওই যুবকদের। একজনের কথায়, ‘‘এটা ঠিক, অনেক ভলান্টিয়ার নিজেদের পুলিশ ভেবে এলাকায় রীতিমতো কলার উঁচিয়ে ঘুরে বেড়ায়। তবে সকলে এমনটা নয়। আমাদের সংযত থাকার জন্য বার বার পরামর্শ দেন পুলিশ কর্তারা।’’ পঞ্চায়েত ভোটের আগে রুটমার্চ করানো থেকে বুথের নিরাপত্তার দায়িত্বেও দেখা গিয়েছে সিভিক ভলান্টিয়ারদের। পুলিশের এক কর্তা বলেন, ‘‘থানাগুলি এখন অতিরিক্ত সিভিক ভলান্টিয়ার নির্ভর হয়ে পড়েছে। কনস্টেবলদের তো ব্যবহারই করা হয় না। পর্যাপ্ত কনস্টেবলও থানায় থাকে না।’’

Police Civic Volunteers সিভিক ভলান্টিয়ার
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy