Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

বিপর্যয় মোকাবিলায় মহড়া উপকূলে

সুনামির আশঙ্কা প্রবল। বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের কর্মীদের নিয়ে প্রস্তুত ছিলেন হিঙ্গলগঞ্জের বিডিও সুদীপ্ত মণ্ডল। শুরু হয় মাইকে প্রচার।

মহড়া: সুনামি বিপর্যয় মোকাবিলায়। হিঙ্গলগঞ্জে ছবিটি তুলেছেন সুদীপ ঘোষ

মহড়া: সুনামি বিপর্যয় মোকাবিলায়। হিঙ্গলগঞ্জে ছবিটি তুলেছেন সুদীপ ঘোষ

নিজস্ব প্রতিবেদন
হিঙ্গলগঞ্জ ও কাকদ্বীপ শেষ আপডেট: ২৫ নভেম্বর ২০১৭ ০১:৫৫
Share: Save:

সকাল প্রায় সাড়ে ৯টা। বেজে উঠল হিঙ্গলগঞ্জের বিডিওর মোবাইল। ফোন ধরতেই অন্য প্রান্ত থেকে বলা হয়, আন্দামান-নিকোবর আইল্যান্ডে ভূমিকম্প হয়েছে। রিখটার স্কেলে যার মাত্রা ৮.৮। প্রবল ঘূর্ণিঝড় আছড়ে পড়তে চলেছে সুন্দরবন এলাকায়। ঝড়ের ফলে নদীর জল বাড়বে। সুনামির আশঙ্কা প্রবল। বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের কর্মীদের নিয়ে প্রস্তুত ছিলেন হিঙ্গলগঞ্জের বিডিও সুদীপ্ত মণ্ডল। শুরু হয় মাইকে প্রচার।

বেলা সাড়ে ১১টা। ফের বেজে ওঠে বিডিওর মোবাইল। খবর আসে, ঝড় আছড়ে পড়েছে সুন্দরবনের পূর্ব এবং পশ্চিম হেমনগরে। ঝড়ের দাপটে ভেঙে পড়ছে গাছ, বাড়ি। স্ট্রেচার নিয়ে সেবক বাহিনী ছোটেন হেমনগর নৈশাবাসের দিকে।

এরই মধ্যে খবর আসে ইতিমধ্যে ৭০০ মানুষ ঝড়ের তাণ্ডবে আহত হয়েছেন। মৃত্যু হয়েছে অনেকের। উদ্ধার করার পরে গ্রামের মানুষের খাওয়া-থাকা এবং চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়। ততক্ষণে সেখানে পৌঁছে গিয়েছে সীমান্তরক্ষী বাহিনী, পুলিশ এবং শুল্ক দফতরের লঞ্চ, স্প্রিডবোট। এসেছেন দমকল কর্মীরা।

রায়মঙ্গল নদীতে কয়েকজনকে ভাসতে দেখে মুহূর্তে ঝাঁপিয়ে পড়ে উদ্ধারকারী দল। দ্রুত তাদের উদ্ধার করে বোটে তুলে রওনা দেয় পাড়ের দিকে। সেখান থেকে গাড়িতে করে নিয়ে আসা হয় হেমনগর স্কুলের মাঠে অস্থায়ী ক্যাম্পে। শুরু হয় চিকিৎসা।

একটা ঘটনার সামাল দিতে না দিতে হেমনগরের একটা অংশে ঝড়ের দাপটে গাছ ভেঙে পড়ার খবর পৌঁছয় কন্ট্রোল রুমে। উদ্ধারকারী দলের সদস্যেরা দৌড়ন সেখানে। হাত-করাত দিয়ে কেটে ফেলেন গাছ। এলাকার মানুষদের উদ্ধার করে নিয়ে আসা হয় স্কুলমাঠের আশ্রয় কেন্দ্র। গবাদি পশুদেরও উদ্ধার করা হয়।

এই ভাবেই শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত উদ্ধারকারী দল, প্রশাসনের কর্তারা ব্যস্ত ছিলেন বিপর্যয় মোকাবিলায়।

তবে সবটাই ছিল মহড়া। সুনামির মতো বড় ধরনের প্রাকৃতিক বিপর্যয় ঘটে গেলে কী করতে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া হবে, সে জন্য দেশ জুড়ে উপকূল এলাকাগুলিতে এই মহ়ড়া হয়েছে একযোগে।

মহড়ায় ইনসিডেন্ট কম্যান্ডার ছিলেন বিডিও সুদীপ্ত মণ্ডল। তিনি বলেন, ‘‘সমন্বয়ের অভাবে আয়লার তাণ্ডব আমরা ঠিক মতো মোকাবিলা করতে পারেনি। সুনামি কিংবা আয়লার মতো বিপর্যয় হলে যাতে সব ক’টি দফতরের মধ্যে মেলবন্ধন গড়ে পরিস্থিতির মোকাবিলা করা যায় সেই উদ্দেশ্যেই এই মহড়া।’’ বিপর্যয়ের সময়ে মোবাইল বা ইন্টারনেট সংযোগ না থাকলেও কী ভাবে পরিস্থিতি সামলানো যাবে, তারও মহড়া হয়েছে এ দিন। যুদ্ধকালীন তৎপরতা মহড়া হয়েছে এ দিন নামখানার বকখালি, সাগরের রুদ্রনগর এবং বজবজেও।

বকখালির সৈকতে থাকা পর্যটকদের মধ্যেও সচেতনতা ছড়ানো হয়। তিন বছর ধরে এ ধরনের মহড়া চলছে দেশ জুড়ে। উপকূলরক্ষী বাহিনীর বকখালি শাখার কম্যান্ডান্ট অভিজিৎ দাশগুপ্ত বলেন, ‘‘এ রকম একটি বিপর্যয় এলে মূলত উপকূল এলাকার ২-৩ কিলোমিটার এলাকার মধ্যে মানুষের বিপদ আগে আসে। তাই তাঁদের এবং মৎস্যজীবীদের মধ্যে সচেতনতা তৈরি করা হয়েছে। পাশাপাশি এটাও দেখে নেওয়া হল, আমরা নিজেরা কতটা তৈরি রয়েছি।’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Disaster Rehearsal
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE