বর্ষা দোরগোড়ায়। বলদেঘাটা খাল, ইছামতী এবং যমুনা নদী সংস্কার না হওয়ার গত কয়েক বছর ধরে জল উপচে বানভাসি দশা হচ্ছে গাইঘাটা ব্লকের অন্তত চারটি পঞ্চায়েত (সুটিয়া, রামনগর, ঝাউডাঙা এবং শিমুলপুর) পঞ্চায়েত এলাকার বাসিন্দাদের। ঘরবাড়ি ছেড়ে গ্রামবাসীদের ত্রাণ শিবিরে আশ্রয় নিতে হচ্ছে। গত বছরও তাঁদের অনেকেরই দুর্গাপুজো, লক্ষ্মীপুজো ও কালীপুজো পর্যন্ত কেটেছিল ত্রাণ শিবিরে। এ বার এখনও ওই খাল এবং দুই নদী সংস্কার না-হওয়ায় তাঁরা প্রমাদ গুনছেন। ভারী বৃষ্টি হলে ফের ত্রাণ শিবিরে যেতে হবে বলে তাঁরা ধরেই নিয়েছেন।
ভুক্তভোগীদের অনেকেই মনে করেন, ইছামতীর সংস্কার ছাড়া সমস্যা পুরোপুরি মিটবে না। গত বার বানভাসি পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার পর এলাকায় এসেছিলেন জেলাশাসক শরদকুমার দ্বিবেদী-সহ জেলা প্রশাসনের কর্তারা এবং জেলা সভাধিপতি নারায়ণ গোস্বামী। তিনি নদী-খাল সংস্কারের আশ্বাস দিয়েছিলেন।
কিন্তু এক বছর পরেও সেই কাজ হল না কেন?
নারায়ণ বলেন, ‘‘ইছামতী থেকে পলি তুলে নদী সংস্কারের কাজ দ্রুত শুরু করা হচ্ছে। ওই কাজের দরপত্রের প্রক্রিয়া শেষ হয়ে গিয়েছে। যে সংস্থা কাজের বরাত পেয়েছে তারা ইতিমধ্যেই এলাকায় গিয়ে রাস্তা তৈরি করছে। পলি ওই পথে নিয়ে আসা হবে।’’
সভাধিপতি জানান, প্রাথমিক পর্যায়ে স্বরূপনগরের টিপি থেকে তেঁতুলিয়া সেতু পর্যন্ত ইছামতীর নদীপথ সংস্কার করা হবে। গাইঘাটার বিডিও নীলাদ্রি সরকার বলেন, ‘‘পরবর্তী সময়ে বলদেঘাটা খাল সংস্কারের পরিকল্পনা করা হচ্ছে।’’
ভারী বৃষ্টিতে ওই চার পঞ্চায়েত এলাকার বিস্তীর্ণ চাষজমি জলের তলায় চলে যায়। মানুষের রুজিরুটি বন্ধ হয়ে যায়। রাস্তায় নৌকা নামে। জলবন্দি দশা থেকে মুক্তি পেতে গত বছর গ্রামের মানুষ দলবদ্ধ ভাবে কোদাল ও যন্ত্র দিয়ে টিপি এলাকা মাটির বাঁধ কেটে দিয়েছিলেন। এর ফলে জমা জল যমুনা হয়ে ধীর গতিতে হলেও ইছামতীতে পড়তে শুরু করে। ফলে, কিছুটা সুরাহা হয়।
ওই কাজে শামিল সুটিয়ার ননীগোপাল পোদ্দার বলেন, ‘‘এ বার এখনও নদী-খাল সংস্কারের কাজ শুরু হয়নি। সবে নদীর মাপজোক হচ্ছে। এখনও যা সময় আছে, ইছামতী সংস্কারের কাজ হলেও মানুষ অনেকটাই স্বস্তি পাবেন।’’
গ্রামবাসীদের জল-যন্ত্রণার অন্যতম কারণ বলদেঘাটা খাল। সংস্কারের অভাবে পলি জমে খালটি কার্যত মৃতপ্রায়। অভিযোগ, খালে অবৈধ ভাবে ভেড়ি করা হয়েছে। তাতেই খালটির গতিপথ রুদ্ধ হয়েছে। খালের জমি বেদখল হচ্ছে। এখন ভারী বৃষ্টি হলেই খালের জল লোকালয়ে ঢোকে। খালটি চারঘাট এলাকায় যমুনার সঙ্গে মিশেছে। সেখান থেকে যমুনা টিপি এলাকায় ইছামতী নদীতে মিশেছে।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)