E-Paper

প্রবেশমূল্য বন্ধ, সুন্দরবনে শঙ্কা প্রভাবের

পর্যটকদের থেকে পাওয়া অর্থের ৪০ শতাংশ সুন্দরবন লাগোয়া লোকালয়গুলির উন্নয়নের জন্য যৌথ বন পরিচালন কমিটির হাতে সরাসরি তুলে দিত বন দফতর।

প্রসেনজিৎ সাহা

শেষ আপডেট: ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ০৮:১৮
সুন্দরবন।

সুন্দরবন। —ফাইল চিত্র।

সুন্দরবনে ঘুরতে আসা পর্যটকদের থেকে প্রবেশমূল্য বাবদ নেওয়া অর্থ দিয়ে নানা উন্নয়নমূলক কাজ হত। জঙ্গল রক্ষার কাজেও ব্যবহার করা হত ওই অর্থ। সম্প্রতি উত্তরবঙ্গ সফরে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্যের জঙ্গলগুলিতে পর্যটকদের প্রবেশমূল্য নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করার পরে, ওই টাকা নেওয়া বন্ধ করেছে বন দফতর। ফলে, জঙ্গল সংক্রান্ত বিভিন্ন কাজের বিপুল অঙ্কের টাকা কোথা থেকে আসবে তা নিয়ে চিন্তিত আধিকারিকেরা।

প্রতি বছর পর্যটকদের থেকে পাওয়া অর্থের ৪০ শতাংশ সুন্দরবন লাগোয়া লোকালয়গুলির উন্নয়নের জন্য যৌথ বন পরিচালন কমিটির হাতে সরাসরি তুলে দিত বন দফতর। সুন্দরবন ব্যাঘ্র প্রকল্প এলাকায় ২৬টি ও ২৪ পরগনা বনবিভাগ এলাকায় ৪০টি বন পরিচালন কমিটি রয়েছে। সূত্রের খবর, বছরে গড়ে ১০ লক্ষ করে টাকা পেত কমিটিগুলি। তা দিয়ে রাস্তাঘাট তৈরি বা সংস্কার, খাল কাটা, রাস্তায় আলো লাগানো, জেটি সংস্কার, পুকুর কাটা, টিউবওয়েল বসানো-সহ নানা কাজ হত। বাকি ৬০ শতাংশ অর্থ এলাকার নানা উন্নয়নে সরাসরি ব্যয় করত বন দফতর। জেটি নির্মাণ থেকে শুরু করে ম্যানগ্রোভ রোপণ হত এই অর্থ দিয়েই। জঙ্গল ঘেরা বা পাহারা-সহ বিভিন্ন কাজে গ্রামের মানুষকে নেওয়া হত অর্থের বিনিময়ে। এলাকার মানুষকে জল সেচের যন্ত্র, চাষের নানা সামগ্রী, সেলাই-যন্ত্রও দেওয়া হত। গ্রামের মহিলাদের হাতের কাজের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হত। বিকল্প চাষ, মৌমাছি প্রতিপালনের মাধ্যমেও গ্রামের মানুষের জঙ্গল নির্ভরতা কমানোর চেষ্টা চালানো হত।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সুন্দরবন ব্যাঘ্র প্রকল্পের এক আধিকারিক বলেন, “সুন্দরবন ভ্রমণে যারা আসেন, তাঁদের কাছ থেকে ১৮০ টাকা করে জঙ্গলে প্রবেশের মূল্য নেওয়া হত। সারা বছরের সে টাকার ৪০ শতাংশ বন পরিচালন কমিটিগুলির মধ্যে ভাগ করে দেওয়া হত এলাকা উন্নয়নের জন্য। এ ছাড়াও, বন দফতর জঙ্গলের সুরক্ষা ও এলাকার অন্যান্য উন্নয়ন ও এলাকার মানুষের বিকল্প কর্মসংস্থানের জন্য এই অর্থ বরাদ্দ করত। এখন কী হবে বুঝতে পারছি না! এই অর্থ বন্ধ হলে গোটা ব্যবস্থাটাই ভেঙে পড়বে। মানুষজন আবার জঙ্গলমুখী হবেন। এলাকার বাসিন্দাদের নিরাপত্তার পাশাপাশি জঙ্গলের নিরাপত্তাও লঙ্ঘিত হবে।”

যৌথ বন পরিচালন কমিটির সদস্য নিরাপদ সর্দার, নিখিল মণ্ডলেরা বলেন, “পর্যটকদের ফি মকুবের জেরে বড় ক্ষতি হল। নাইলনের জাল সারানো থেকে শুরু করে মাটি কাটা, ম্যানগ্রোভ রোপণ, জঙ্গল পাহারা যেমন বন্ধ হয়ে যাবে। আবার এলাকার উন্নয়নমূলক কাজও বন্ধ হয়ে যাবে। যাঁরা বিকল্প পেশা পেয়ে জঙ্গলে যাওয়া ছেড়ে দিয়েছিলেন, তাঁদের অনেকেই হয় তো পেটের তাগিদে ফের জঙ্গলের পথে পা বাড়াবেন। তাতে ঝুঁকি বাড়বে।” এ ব্যাপারে প্রতিক্রিয়া জানতে বৃহস্পতিবার ফোন করা হলে, ধরেননি সুন্দরবন উন্নয়নমন্ত্রী বঙ্কিম হাজরা। জবাব মেলেনি মোবাইল-বার্তার।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Sundarbans

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy