Advertisement
০২ মে ২০২৪
River Dams

বহু এলাকায় বাঁধ অটুট, স্বস্তি

গোসাবার রাঙাবেলিয়ার বাসিন্দা সুধীর গায়েন, সবিতা মণ্ডলরা বলেন, ‘‘খুবই ভয়ে ভয়ে ছিলাম, এই বুঝি জোয়ারে কোটালের জল আবার বাঁধ ভেঙে গ্রামে ঢোকে।”

ভাঙেনি বাঁধ। কানায় কানায় জল। —নিজস্ব চিত্র

ভাঙেনি বাঁধ। কানায় কানায় জল। —নিজস্ব চিত্র

প্রসেনজিৎ সাহা
গোসাবা শেষ আপডেট: ০৮ জুন ২০২০ ০৬:০৪
Share: Save:

বাঁধ নিয়ে দুশ্চিন্তা ছিলই। তবে পূর্ণিমার ভরা কোটালে অনেকটাই স্বস্তিতে ক্যানিং, গোসাবা, বাসন্তী, কুলতলি, ডায়মন্ড হারবার, কাকদ্বীপের বেশির ভাগ মানুষ। দু’একটি জায়গা বাদ দিলে নদী বাঁধ অধিকাংশ জায়গাতেই অক্ষত। এ নিয়ে গত কয়েক দিন ধরে সংশয়ে ভুগেছেন গ্রামের মানুষ। প্রশ্ন ছিল প্রশাসনের অন্দরেও। তবে বড়় রকমের কোনও অঘটন ঘটেনি দক্ষিণ ২৪ পরগনার নদীবাঁধ সংলগ্ন গ্রামগুলিতে। যদিও কংক্রিটের বাঁধই যে পাকাপাকি সমাধানের পথ, সে কথা এক বাক্যে মানছেন গ্রামের মানুষ। না হলে অন্য কোনও সময়ে নদী বাঁধ ভাঙার আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে।

গোসাবার রাঙাবেলিয়ার বাসিন্দা সুধীর গায়েন, সবিতা মণ্ডলরা বলেন, ‘‘খুবই ভয়ে ভয়ে ছিলাম, এই বুঝি জোয়ারে কোটালের জল আবার বাঁধ ভেঙে গ্রামে ঢোকে। যাক, শেষ পর্যন্ত বাঁধ ভেঙে নতুন করে গ্রাম প্লাবিত না হওয়ায় আমরা হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছি।”

সপ্তাহ দু’য়েক আগেই সুপার সাইক্লোন আমপানের ফলে সুন্দরবনের গোসাবা, বাসন্তী ও ক্যানিং ব্লকের বিস্তীর্ণ এলাকার নদী বাঁধ ভেঙে যায়। কাকদ্বীপ, পাথরপ্রতিমা, ডায়মন্ড হারবা, কুলতলির বহু গ্রাম জলের নীচে তলিয়ে যায়। সে ক্ষয়ক্ষতির ধাক্কা এখনও সামলে উঠতে পারেনি সুন্দরবন।

ক্যানিং মহকুমায় রায়মঙ্গল, বিদ্যাধরী, গাড়াল, মাতলা, ও হোগল নদীর বাঁধ ভেঙে বহু গ্রাম প্লাবিত হয়। বাড়ি ঘর, চাষের জমি, পুকুর সবই নষ্ট হয় নদীর নোনা জলে। গত কয়েক দিনে সেচ দফতর ও স্থানীয় ব্লক প্রশাসনের উদ্যোগে সেই সমস্ত ভাঙা নদী বাঁধ এলাকাগুলি মেরামতি করা হয়েছে জোরকদমে। বাঁশের পাইলিং করে, মাটির বস্তা দিয়ে প্রাথমিক ভাবে বাঁধ সারাই করে সেচ দফতর। দ্রুত বাঁধ মেরামতি করার জন্য দক্ষ কর্মীদের পাশাপাশি মাটি কাটার যন্ত্রও ব্যবহার করা হয়। অন্য দিকে, ব্লক প্রশাসনের নির্দেশে স্থানীয় গ্রাম পঞ্চায়েতগুলিও একশো দিনের কাজে নদী বাঁধ মেরামতির কাজ শুরু করে। পূর্ণিমার কোটালের আগে কাজ শেষ করা ছিল সেচ দফতরের কাছে বড় চ্যালেঞ্জ। তবে কাজ যে ভাবে এগিয়েছিল, তাতে সংশয় পুরো কাটেনি। শেষ পর্যন্ত অবশ্য প্রকৃতি সহায় হওয়ায় এই এলাকাগুলিতে নতুন করে বাঁধ ভাঙেনি।

দক্ষিণ ২৪ পরগনার জয়নগর সেচ ডিভিশনের এগজ়িউটিভ ইঞ্জিনিয়র কিংশুক মণ্ডল বলেন, “বাঁধগুলিকে রক্ষা করাই আমাদের কাছে চ্যালেঞ্জ ছিল। এ যাত্রায় কোটালের জল আর এই এলাকায় বাঁধ ভেঙে গ্রামে ঢোকেনি। আবার কিছুদিন হাতে সময় পাওয়া গেল ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধগুলি মেরামতি করার জন্য।”

এ দিন অবশ্য বাঁধ ভেঙে গ্রামে জল না ঢুকলেও অনেক জায়গাতেই জোয়ারের সময়ে জল বাঁধের কানায় কানায় চলে এসেছিল। সে সময়ে জোরে হাওয়া দিলে বিপদ বাড়তে পারত। ক্যানিং মহকুমা সেচ দফতরের সহকারী বাস্তুকার সুরজিৎ লাহিড়ি বলেন, “আমরা সব লময়ে বাঁধের উপরে নজর রেখেছিলাম। পূর্বাভাস অনুযায়ী যতটা জল বাড়ার কথা ছিল, তার থেকে উঁচু করেই ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় বাঁধ বাঁধা হয়েছিল। হাওয়া দিলে বিপদ বাড়তে পারত ঠিকই। কিন্তু জোয়ারের সময়ে সে ভাবে হাওয়া না থাকায় বাঁধের নতুন করে অসুবিধা হয়নি।” গোসাবার বিডিও সৌরভ মিত্র বলেন, ‘‘আমপানের পর দিন থেকেই ক্ষতিগ্রস্ত নদী বাঁধ মেরামতির কাজ শুরু হয়েছে। এই কোটালের আগে অনেক ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা মেরামতি করা হয়েছে। সে কারণেই নতুন করে বাঁধ ভাঙেনি। বাকি ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাও দ্রুত মেরামত করা হবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

River Dams High Tide
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE