Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
Blood donation camp

রক্ত দিতে পারবেন কারা, জরুরি সেই তথ্য

কেবল ওই রক্তদান শিবিরের চিত্র নয়। সাম্প্রতিক সময়ে বনগাঁ মহকুমা এবং সংলগ্ন এলাকায় আয়োজিত রক্তদান শিবিরে রক্ত দিতে এসে অনেকেই বাদ পড়েন।

রক্ত দিতে পারলেন না অনেকেই।

রক্ত দিতে পারলেন না অনেকেই। প্রতীকী চিত্র।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ২৯ মে ২০২৩ ০৯:২৯
Share: Save:

বনগাঁ মহকুমা হাসপাতাল চত্বরে শনিবার মহিলা তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষ থেকে রক্তদান শিবিরের আয়োজন করা হয়েছিল। কিন্তু শিবিরে এসেও অনেকে রক্তদান করতে পারেননি। বনগাঁ মহকুমা হাসপাতালের ব্লাডব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, শনিবার রক্তদান করেছিলেন ৬৩ জন। যাঁদের মধ্যে বেশিরভাগই ছিলেন মহিলারা। যদিও ২৬ জন রক্তদাতার রক্ত নেওয়া হয়নি। তাঁদের মধ্যে ২৫ জন ছিলেন মহিলা। তাঁদের বেশির ভাগেরই রক্ত নেওয়া যায়নি হিমোগ্লোবিনের মাত্রা ১২.৫-এর নীচে ছিল বলে।

এটা কেবল ওই রক্তদান শিবিরের চিত্র নয়। সাম্প্রতিক সময়ে বনগাঁ মহকুমা এবং সংলগ্ন এলাকায় আয়োজিত রক্তদান শিবিরে রক্ত দিতে এসে অনেকেই বাদ পড়েন। বনগাঁ মহকুমা হাসপাতালের ব্লাডব্যাঙ্ক ইনচার্জ তথা চিকিৎসক গোপাল পোদ্দার বলেন, "কোনও শিবিরে ৫০ জন রক্তদাতা রক্ত দিতে এলে ৫/৭ জন বাদ যান। রক্ত নেওয়ার আগে রক্তদাতাদের শারীরিক পরীক্ষা করা হয় এবং তাঁদের অসুস্থতার কেস হিস্ট্রি ভাল করে জেনে নেওয়া হয়।"

কী কারণে রক্তদাতাদের বাদ দিতে হচ্ছে?

গোপাল জানান, কারও রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ ১২.৫-এর নীচে থাকলে তাঁর রক্ত নেওয়া হয় না। রক্তচাপ ১৪০ এর উপরে (সিস্টোলিক) এবং ৯০-এর বেশি (ডায়াস্টলিক) থাকলে নেওয়া হয় না। এ ছাড়া, এক বছরের মধ্যে জন্ডিস হলে, ছ’মাসের মধ্যে টাইফয়েড হলে বা তিন মাসের মধ্যে ম্যালেরিয়া হলে রক্ত নেওয়া হয় না। এক বছরের মধ্যে বড় অস্ত্রোপচার হলেও রক্ত নেওয়া হয় না। এ ছাড়াও আরও অনেক নিয়ম আছে। গোপাল বলেন, "মহিলাদের বাদ দেওয়া হয় মূলত হিমোগ্লোবিনের কারণে।"

ব্লাডব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ রক্তদান শিবিরের উদ্যোক্তাদের নিয়মকানুন ভাল ভাবে বুঝিয়ে দেন। কারা রক্তদান করতে পারবেন, কারা পারবেন না— সে কথা জানানো হয়। রক্তদাতাদেরও সে সব বুঝিয়ে বলা হয়। তারপরেও অনেকে রক্ত দিতে চলে আসেন বলে উদ্যোক্তাদের অনেকের অভিজ্ঞতা।

রক্ত দিতে পারবেন না জেনেও কেন আসেন তাঁরা?

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, অনেক শিবিরেই রক্তদান করলে আকর্ষণীয় সব উপহার মেলে। সে সবের লোভে অনেকে আসেন। যেখানে উপহার থাকে না, সেখানে এই সমস্যা কম। কোন রক্তদান শিবিরে কত ভিড় হল, তা নিয়ে আয়োজকদের মধ্যে ঠান্ডা লড়াই চলে। কিন্তু সেই সমস্ত শিবিরে কতটা নিয়ম মেনে রক্তদাতা চিহ্নিত করা হচ্ছে, সেই প্রশ্ন থেকেই যায়। স্বাস্থ্য দফতরের তরফে রক্তদান আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত বিভিন্ন সংগঠনের কাছে পাঠানো হচ্ছে একটি নিয়মাবলী। যেখানে স্পষ্ট করা রয়েছে, কারা রক্ত দান করতে পারবেন, কারা পারবেন না। বিভিন্ন ক্ষেত্রে সাময়িক বিরতির সময় কতটা, তা-ও স্পষ্ট ভাবে জানানো হচ্ছে।

রাজ্যের রক্ত সঞ্চালন পর্ষদের এক কর্তার কথায়, “এমনটা নয় যে নতুন করে কোনও নির্দেশিকা জারি করা হয়েছে। বছর দুয়েক আগে জাতীয় রক্ত সঞ্চালন পর্ষদ রক্তদাতা চিহ্নিতকরণের নিয়মাবলীতে কিছু পরিবর্তন করেছে। সেটাই সারাংশ হিসেবে সকলে আবারও মনে করিয়ে দেওয়ার পদক্ষেপ করা হয়েছে।” তিনি আরও জানান, রক্তদান শিবিরে যাওয়া চিকিৎসক থেকে কর্মী এবং রক্তদান আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত সংগঠনগুলি সকলেই নিয়মগুলি জানেন। কিন্তু তারপরেও নির্দিষ্ট সময় অন্তর সকলের কাছে বিষয়টি তুলে ধরা হচ্ছে।

রক্তদান আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত অনেকের দাবি, এখন অনেক ক্ষেত্রেই শিবিরের আয়োজন হওয়ার অর্থই ছোটখাটো একটা উৎসব। যার অধিকাংশই রাজনৈতিক তকমা যুক্ত। সেখানে রক্তদাতা চিহ্নিতকরণ বা শিবিরের নিয়ম-নীতির থেকেও বেশি প্রাধান্য পায় কত ভিড় হল। কোথাও আবার কী খাওয়াদাওয়া হচ্ছে, কী উপহারের ব্যবস্থা রয়েছে— তা নিয়েই বেশি আগ্রহ থাকে। সেখানে রক্তদানের প্রথামিক নিয়মগুলিও অনেক সময়ে উপেক্ষিত থেকে যায়।

সাধারণত দু’বার রক্তদানের মধ্যে তিন মাসের নূন্যতম ব্যবধান রাখার কথাই সকলেই জানেন। কিন্তু সেটিতেও পরিবর্তন করা হয়েছে। নতুন নিয়মাবলীতে মহিলাদের ক্ষেত্রে অন্তত ৪ মাস এবং পুরুষদের ক্ষেত্রে ৩ মাসের ব্যবধানের কথা বলা হয়েছে। আবার অ্যানাস্থেসিয়া করে বড় কোনও অস্ত্রোপচারে রক্তক্ষরণ হয়ে থাকলে, সন্তান প্রসব, আকুপাংচার, ট্যাটু-করা হলে, অ্যান্টি রাবিস বা হেপাটাইটিস-বি টিকা নিয়ে থাকলে অন্তত ১২ মাসের ব্যবধানে রক্তদান করা যাবে। গর্ভপাত, ছোটখাটো অস্ত্রোপচার, রক্ত নিয়ে থাকলে, দাঁত তুললে বা অস্ত্রোপচারের ৬ মাস পরে রক্ত দেওয়া যাবে। এ ছাড়াও, ঠান্ডা লাগা, সর্দি-কাশি, কোভিড, টাইফয়েড সহ বিভিন্ন রোগ এবং অ্যান্টিবায়োটিক, বিভিন্ন ওষুধ ও টিকার ক্ষেত্রেও রক্তদানের সময় নির্দিষ্ট রয়েছে।

ওয়েস্ট বেঙ্গল ভলান্টারি ব্লাড ডোনার্স ফোরামের সাধারণ সম্পাদক অপূর্ব ঘোষ বলেন, “নতুন প্রজন্মের চিকিৎসক থেকে টেকনিশিয়ানেরা চাকরিতে যোগ দেওয়ার পরেই তাঁদের শিবিরে পাঠানো হচ্ছে। তাঁদের ভাল করে নিয়মগুলি জানানো হোক। মানুষকে জানাতে সংবাদপত্রে বিজ্ঞাপন দেওয়া প্রয়োজন।” রক্তদান আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত দীপঙ্কর মিত্রের কথায়, “নির্দিষ্ট সময় অন্তর এমন নিয়মাবলী জারি করা হলে ব্লাড ব্যাঙ্কগুলির মধ্যেও একটা সমতা বজায় থাকে। না হলে, বিভিন্ন শিবিরে বিভিন্ন নিয়ম দেখা যায়।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Blood donation camp Bangaon
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE