Advertisement
E-Paper

পুজোর বাজারে ভাটা, মহালয়া পেরনোর অপেক্ষায় ব্যবসায়ীরা

কিছু দিন আগেই অতিবৃষ্টিতে বিস্তর ক্ষতি হয়েছে চাষের। পুজোর আগেও বৃষ্টি-বাদলা হয়েছে ক’দিন আগেও। এই পরিস্থিতিতে বনগাঁয় পুজোর বাজারে এখনও কেনাবেচা না বাড়ায় চিন্তিত ব্যবসায়ীরা। তাঁরা জানালেন, মাস পয়লা হয়ে গেলেও কেনাবেচার এই হাল আগের বছরগুলিতে হতো না। সাম্প্রতিক অতিবৃষ্টিতে বনগাঁ মহকুমার বিস্তীর্ণ এলাকা জলমগ্ন হয়ে পড়েছিল। বহু মানুষকে ঘর ছেড়ে ত্রাণশিবিরে আশ্রয় নিতে হয়েছিল।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৬ অক্টোবর ২০১৫ ০১:১২
খদ্দের হাতেগোনা। তাই একটু গড়িয়েই নেওয়া যাক। বনগাঁয় নির্মাল্য প্রামাণিকের তোলা ছবি।

খদ্দের হাতেগোনা। তাই একটু গড়িয়েই নেওয়া যাক। বনগাঁয় নির্মাল্য প্রামাণিকের তোলা ছবি।

কিছু দিন আগেই অতিবৃষ্টিতে বিস্তর ক্ষতি হয়েছে চাষের। পুজোর আগেও বৃষ্টি-বাদলা হয়েছে ক’দিন আগেও। এই পরিস্থিতিতে বনগাঁয় পুজোর বাজারে এখনও কেনাবেচা না বাড়ায় চিন্তিত ব্যবসায়ীরা। তাঁরা জানালেন, মাস পয়লা হয়ে গেলেও কেনাবেচার এই হাল আগের বছরগুলিতে হতো না।
সাম্প্রতিক অতিবৃষ্টিতে বনগাঁ মহকুমার বিস্তীর্ণ এলাকা জলমগ্ন হয়ে পড়েছিল। বহু মানুষকে ঘর ছেড়ে ত্রাণশিবিরে আশ্রয় নিতে হয়েছিল। মহকুমার অর্থনীতি দাঁড়িয়ে রয়েছে কৃষির উপরে। বৃষ্টিতে হাজার হাজার বিঘে জলের তলায় চলে গিয়েছে। বিশেষ করে পাট ও সব্জির ক্ষতি হয়েছে ব্যাপক। চাষিরা আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন। কেউ ঋণ করে বা অন্যের কাছ থেকে টাকা ধার নিয়ে চাষ করেছিলেন। ওই টাকা কী ভাবে শোধ করবেন, তা ভেবে উঠতে পারছেন না অনেকেই। চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, পুজোর আগে পাট ও সব্জি বিক্রি করে তাঁরা জামাকাপড় কেনাকাটা করেন। এ বার আর্থিক দেনায় ডুবে গিয়ে পুজোর জামা কেনার সামর্থ্য নেই অনেকেরই।
তবে এত কিছুর পরেও ব্যবসায়ীদের আশা, মহালয়ার পরে অন্তত বাজার কিছুটা ভাল হবে।
এমন ভাবার অন্য কারণও আছে। ২০০০ সালের ভয়াবহ বন্যা পাল্টে দিয়েছে বনগাঁর পুজোর বাজারের চরিত্রটাই। সে বছর মহালয়ার আগে বন্যায় হাজার হাজার মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়েছিলেন। অনেক মানুষের মাথার উপরে খোলা আকাশ ছাড়া আর কিছু ছিল না। সে বার পুজোর কেনাকাটা হয়ে গিয়েছিল বেশিরভাগ পরিবারে। হাতে টাকা প্রায় শেষ। এই অবস্থায় ঘর-বাড়ি ছেড়ে আশ্রয়ের খোঁজে বেরিয়ে পড়তে হয়েছিল বন্যার্ত মানুষকে। পুজোর দিনগুলোয় সর্বত্র চোখে পড়েছিল বুভুক্ষ মানুষের হাহাকার। পনেরো বছর আগের সেই স্মৃতি ক্রমে মানুষের মনে ফিকে হয়ে এলেও মহালয়ার আগে পর্যন্ত পুজোর কেনাকাটায় উৎসাহ পান না অনেকেই।
বনগাঁ শহরে যশোহর রোডের দু’ধারের দোকানগুলিতে এবং শহরের বহু নাম করা দোকান ও শপিং মলে অবশ্য পুজোর জন্য বিভিন্ন ধরনের পোশাকের সম্ভার সাজিয়ে রাখা হয়েছে ইতিমধ্যেই। কিন্তু ভিড় তেমন চোখে পড়ল না। স্থানীয় এক বস্ত্র প্রতিষ্ঠানের মালিক বললেন, ‘‘দেড় মাস আগে থেকে মানুষ টুকটাক কেনাকাটা শুরু করেছেন। আস্তে আস্তে সেটা বাড়বে বলেই আশা।’’ তাঁর মতে, শহরের একটা বড় অংশের মানুষ এখন কেনাকাটা সারতে বারাসত, হাবরা বা কলকাতায় চলে যান। নতুন প্রজন্মের মধ্যে এই প্রবণতা অনেক বেড়েছে। একটি জুতোর দোকানের মালিক জানালেন, অতিবৃষ্টিতে ফসলের ক্ষতির ফলে অনেকের হাতে টাকা নেই। ফলে বিক্রিবাটা কমেছে।’’ একটি বিউটি পার্লারের মালকিন জানালেন, ‘‘সাম্প্রতিক বন্যা পরিস্থিতির জন্য ঈদ এবং পুজো— দু’ক্ষেত্রেই মন্দা চলছে। শহরের কিছু মেয়ে-বৌ আসছেন বটে, কিন্তু গ্রামীণ এলাকা থেকে ভিড়টা কম।’’ কিন্তু গ্রামীণ এলাকা থেকে বিউটি পার্লারে কি আদৌ আসেন মহিলারা? ওই ব্যবসায়ী জানান, গ্রামগঞ্জ থেকে পার্লারে আসা মেয়ে বা অল্প বয়সী বধূর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। সোনার দোকানের মালিক তথা বঙ্গীয় স্বর্ণশিল্পী সমিতির জেলা সভাপতি বিনয় সিংহের কথায়, ‘‘গত বছরের তুলনায় এ বার এখন পর্যন্ত ৩০ শতাংশ কম কেনাবেচা হচ্ছে আমাদের ব্যবসায়। ব‌ন্যা পরিস্থিতির কারণে ফসলের ক্ষতি হওয়ায় চাষিদের হাতে টাকা ‌নেই। অর্থ লগ্নি সংস্থায় টাকা রেখে বহু মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এ সবের প্রভাব পড়েছে পুজোর বাজারে।’’

বনগাঁ চেম্বার্স অব কর্মাসের সহ সম্পাদক দীলিপ মজুমদার জানালেন, মহকুমার বিভিন্ন এলাকা ইদানীং বাজার গড়ে উঠেছে। ফলে মানুষ এখন আগের মতো বনগাঁ শহরেই শুধু কেনাকাটা সারতে আসেন না। তা ছাড়া, যাঁদের হাতে টাকা আছে, তাঁরা কলকাতা, কৃষ্ণনগর, চাকদহ বা হাবরায় গিয়েও বাজার করছেন।

কৃষির পাশাপাশি চোরাচালানের উপরে বনগাঁর অর্থনীতি অনেকটাই নির্ভর করে। নানা কারণে ওই কারবারেও আগের মতো রমরমা নেই বলে জানা গেল। সেই প্রভাবও পড়েছে পুজোর বাজারে, মনে করেন ব্যবসায়ীদের কেউ কেউ। বনগাঁর ট্রান্সপোর্ট ব্যবসার হালও খারাপ।

Mahalaya Durga Puja south bengal
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy