নষ্ট: শুকিয়ে যাওয়া বেগুন খেত।—নিজস্ব চিত্র
প্রচণ্ড গরম আর আর্দ্রতার সঙ্গে পাল্লা দিতে গিয়ে ক্ষতির মুখে পড়ছেন গাঙ্গেয় দক্ষিণবঙ্গের আনাজ চাষিরা। রোগ-পোকার আক্রমণ ঠেকাতে বেশি মাত্রায় কীটনাশক ব্যবহার করছেন তাঁরা। এতে মানবদেহে ক্ষতিবৃদ্ধির আশঙ্কা বাড়ছে। কীটনাশকের ব্যবহার কমাতে গেলে কয়েক দিনের মধ্যে আবহাওয়ার বদল জরুরি বলে মনে করছেন কৃষিবিজ্ঞানীরা
কিছু দিন ধরেই অস্বাভাবিক তাপ ও আর্দ্রতার জন্য রোগ-পোকার আক্রমণে জমিতে ফসল নষ্ট হতে শুরু করেছে। উত্তরবঙ্গে বৃষ্টি হচ্ছে, দক্ষিণবঙ্গেও কোথাও কোথাও বিক্ষিপ্ত ভাবে হয়েছে। কিন্তু গাঙ্গেয় দক্ষিণবঙ্গে বৃষ্টির বালাই নেই। ঝোড়ো হাওয়ার সঙ্গে মেঘ উধাও হয়ে যাচ্ছে।
কৃষি বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, এই গরমে আর্দ্রতার মাত্রা বেড়ে যাওয়ায় সাদা মাছি, লাল মাকড়, ল্যাদা পোকা আর ছত্রাকের আক্রমণ ভয়ঙ্কর আকার নিচ্ছে। ফসল বাঁচিয়ে বাজারজাত করতে গিয়ে চাষিরা কেমিক্যাল কীটনাশক ব্যবহার করছেন। বহু ক্ষেত্রেই তা মাত্রা ছাড়াচ্ছে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন কৃষি বিজ্ঞানীরা।
কৃষিবিজ্ঞানী অমিত চট্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আগে যে মাত্রায় কাটনাশক ব্যবহার করে ভেন্ডিতে সাদা মাছি বা বেগুনে ল্যাদা পোকার আক্রমণ কমতো, এখন আর সেই মাত্রায় কাজ হচ্ছে না। পোকামাকড়েরও পরিবেশের সঙ্গে তাল মেলাতে জীবনীশক্তি বেড়েছে। ফলে কীটনাশকের মাত্রা বাড়াচ্ছেন চাষিরা।’’
কিন্তু সেই আনাজ খাচ্ছেন যাঁরা, তাঁদের জন্য এটা সুখবর নয়। নিয়ম অনুযায়ী, জমিতে ফসল থাকাকালীন রাসায়নিক কীটনাশক ব্যবহার করা হলে সেই কীটনাশকের প্রভাব ফসলের গায়ে সাত-দশ দিন থাকে। তারপরে তা খাওয়া যেতে পারে। কিন্তু আচমকা পোকার আক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় ফসল বাঁচাতে বিক্রিতে তাড়াহুড়ো করছেন চাষি। প্রবল মাত্রায় কীটনাশকও ব্যবহার করা হচ্ছে। রোগের প্রকোপ বাড়তে পারে বলে এখনই নতুন করে ফসলের চারা পুঁততে চাইছেন না গঙ্গার দু’পাড়ের চাষিরা। পটল, ঢ্যাঁড়স, ঝিঙে, পুঁই, লাউ, কুমড়ো, শশা, নটে বা অন্য শাকের ক্ষেত্রে ছত্রাকজনিত রোগ ধরতে শুরু করেছে। মাচার আনাজে রোগ-পোকার আক্রমণ এড়াতে গাছের গোড়ায় ঠিকমতো জল দেওয়ার দিকে নজর রাখার পরামর্শ দিচ্ছেন কৃষি বিজ্ঞানীরা।
সব থেকে বেশি ক্ষতির মুখে পড়েছে বেগুন আর ঢেঁড়শ। উত্তর ২৪ পরগনার নৈহাটির আনাজ চাষি নিতাই সরকার, নদিয়ার মোহনপুরের হরিপদ মালাকার, হুগলির পান্ডুয়ার অখিলবন্ধু ঘোষদের সমস্যাটা এক। বেগুনে কীটনাশক ব্যবহার করতে করতে এ বার নিজেরাই প্রমাদ গুনছেন। তাঁদের আশঙ্কা, কীটনাশকের প্রভাবে মাঠ থেকে ফসল তুললেও মজুত করে রাখা যাবে না বেশি দিন। তাই খোলা বাজারে অপেক্ষাকৃত কম দামেও আনাজ বিক্রি করতে চাইছেন অনেক চাষি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy