Advertisement
E-Paper

বোমাবাজির অভিযোগে কুপিয়ে খুন, পাল্টা ভাঙচুর

বোমাবাজি, কুপিয়ে খুন, বাড়ি ভাঙচুর, লুঠপাট, ধানের গাদায় আগুন, পুলিশের গাড়িতে হামলা। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে রাত পর্যন্ত কিছুই বাদ থাকল না গোপালনগর থানার খাবরাপোতা গ্রামে।

সীমান্ত মৈত্র

শেষ আপডেট: ২৬ নভেম্বর ২০১৬ ০২:১৬
গ্রামে পুলিশের টহল। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক।

গ্রামে পুলিশের টহল। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক।

বোমাবাজি, কুপিয়ে খুন, বাড়ি ভাঙচুর, লুঠপাট, ধানের গাদায় আগুন, পুলিশের গাড়িতে হামলা। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে রাত পর্যন্ত কিছুই বাদ থাকল না গোপালনগর থানার খাবরাপোতা গ্রামে। হামলা এবং পাল্টা হামলার ঘটনায় শুক্রবার বিকেল পর্যন্ত এই ঘটনায় আট জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এসডিপি (বনগাঁ) অনিল রায়ের নেতৃত্বে গ্রামে চলছে বিশাল পুলিশ বাহিনী ও র‍্যাফের টহল।

উত্তর ২৪ পরগনার জেলা পুলিশ সুপার ভাস্কর মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ওই গ্রামে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় একটি বোমাবাজির ঘটনাকে কেন্দ্র করে খুনের ঘটনা ও বাড়ি-বাড়ি ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। অভিযুক্তদের খোঁজে তল্লাশি চলছে।’’

পুলিশ এবং স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় খাবরাপোতা গ্রামের বাসিন্দা গোলাম মণ্ডলের বাড়ির সামনে বোমাবাজির অভিযোগ ওঠে এরশাদ মণ্ডল, লোকমান মণ্ডল এবং সইদুল মণ্ডল নামে তিন জনের বিরুদ্ধে। তার পর গ্রামবাসীদের একাংশ তিন জনকে তাড়া করে এরশাদ এবং লোকমানকে ধরে ফেলে এবং মারধর শুরু করে। সইদুল পালিয়ে যায়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে তাদের আটক করে। পুলিশ চলে যাওয়ার পরে গ্রামেরই একটি কলাবাগান থেকে তাঁকে খুঁজে বের করে গ্রামবাসীদের একাংশ। বোমাবাজির অভিযোগ তুলে সইদুলকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপানো হয়। ফের গোলমালের খবর পেয়ে পুলিশ আবার খাবরাপোতা গ্রামে যায়। তখন এরশাদ, লোকমান এবং সইদুল ঘনিষ্ঠ কয়েক জন এবং তাঁদের পরিবারের সদস্যরা পাল্টা রাস্তায় নামেন। পুলিশের গাড়ি লক্ষ করে ঢিল ছোঁড়া হয়। তখন পুলিশ কর্মীরা সংখ্যায় কম থাকায় জেলা পুলিশের সদর দফতরে গোলমালের খবর দেওয়া হয়। তার মধ্যেই কয়েকটি বাড়িতে ভাঙচুর চালানো হয়, পুড়িয়ে দেওয়া হয় ধানের গাদা। আগুন লাগানো হয় একটি বাড়িতে। পরে বনগাঁর এসডিপিও অনিল রায়ের নেতৃত্বে বনগাঁ মহকুমার বিভিন্ন থানার ওসি এবং পুলিশের বাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। মাঠ থেকে উদ্ধার করা হয় সইদুলের দেহ। রাতেই গ্রামে আসেন জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়।

ভাঙচুর করা হয়েছে বাড়ি।

পুলিশ জানিয়েছে, তিনটি পৃথক অভিযোগের ভিত্তিতে আট জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ধৃতদের মধ্যে সইদুলকে খুনের অভিযোগে কুরবান মণ্ডল, জাফর মণ্ডল ও হুমায়ুন মণ্ডল, বোমাবাজির ঘটনায় এরশাদ মণ্ডল লোকমান মণ্ডল এবং বাড়ি ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগের অভিযোগে ইউসুফ মণ্ডল, লতিফ মণ্ডল ও সাহান মণ্ডলকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ধৃতদের শুক্রবার বনগাঁ আদালতে তোলা হলে বিচারক তদন্তকারী এক পুলিশ কর্তা জানান, ২০০৯ সালে ৪ জুন সন্ধ্যায় স্থানীয় সুন্দরপুর এলাকায় তৃণমূল নেতা ইয়ান নবিকে গুলি করে খুনের অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছিল সাহিদুল এবং লোকমানকে। বর্তমানে তারা জামিনে মুক্ত ছিল। সেই খুনের জের এবং বৃহস্পতিবারের বোমাবাজির জন্যই সাইদুলকে খুন করা হয়েছে বলে মনে করছেন তদন্তকারীরা।

সইদুলের স্ত্রী আমেনার অভিযোগ, ‘‘ইয়ান নবি খুনের ঘটনায় আদালতে হাজিরা দিতে বুধবার মুম্বই থেকে বাড়ি ফিরেছিলেন স্বামী। বৃহস্পতিবার সকালে তিনি বাড়ি থেকে আদালতে যান। কিন্তু আর বাড়ি আসেননি। সন্ধ্যায় শুনি তাঁকে কুপিয়ে খুন করা হয়েছে।’’ তিনি স্থানীয় গঙ্গানন্দপুর পঞ্চায়েতের তৃণমূল সদস্য আবু তাহেব মণ্ডল-সহ মোট ১১ জনের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ করেছেন। ওই পঞ্চায়েত সদস্যের বাড়িতে ভাঙচুর চালানো হয় বৃহস্পতিবার রাতে। ওই বাড়ির পাশের একটি মুদিখানার দোকানে লুঠপাট চালানো হয়েছে বলেও অভিযোগ।

শুক্রবার সকালে গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, পুলিশে টহল চলছে। এ দিন সকালে ওই গ্রামে যান স্থানীয় বনগাঁ উত্তর কেন্দ্রের বিধায়ক বিশ্বজিৎ দাস এবং গঙ্গানন্দপুর পঞ্চায়েতের উপ প্রধান জাফর আলি মণ্ডল। বিশ্বজিৎবাবু সইদুলের বাড়িতেও যান। তৃণমূলের পঞ্চায়েত সদস্যের ওই খুনে যুক্ত থাকার অভিযোগ উড়িয়ে বিশ্বজিৎবাবুর দাবি, ‘‘দুষ্কৃতীরা এলাকায় বোমাবাজি করেছে। এলাকা অশান্ত করবার চেষ্টা করেছে। তার বিরুদ্ধে সাধারণ গ্রামবাসী রুখে দাঁড়িয়েছেন।’’

কয়েক বছর আগেও দুষ্কৃতী তাণ্ডব এবং রাজনৈতিক সংঘর্ষে জেরবার ছিল গোপালনগরের এই গ্রাম। মাঝে শান্ত থাকার পরে ফের গোলমালে আতঙ্কিত স্থানীয় বাসিন্দারা।

vandalism bombing Stabbed to death
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy