Advertisement
E-Paper

স্ট্যাম্প নিয়ে কাকদ্বীপে চলছে কালোবাজারি

পাথরপ্রতিমার বনশ্যামনগরের বাসিন্দা বীরেন দাস এফিডেভিট করার জন্য এসেছিলেন আদালতে। কিন্তু আদালতে স্ট্যাম্প না থাকায় ফিরে যেতে হল তাঁকে। দিন তিনেক ঘোরার পর শেষ পর্যন্ত দশ টাকার স্ট্যাম্প তিন গুন টাকা বেশি দাম দিয়ে রেজিষ্ট্রি অফিস থেকে কিনতে হল বীরেন্দ্রবাবুকে।

শান্তশ্রী মজুমদার

শেষ আপডেট: ০৯ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০৩:২৭

পাথরপ্রতিমার বনশ্যামনগরের বাসিন্দা বীরেন দাস এফিডেভিট করার জন্য এসেছিলেন আদালতে। কিন্তু আদালতে স্ট্যাম্প না থাকায় ফিরে যেতে হল তাঁকে। দিন তিনেক ঘোরার পর শেষ পর্যন্ত দশ টাকার স্ট্যাম্প তিন গুন টাকা বেশি দাম দিয়ে রেজিষ্ট্রি অফিস থেকে কিনতে হল বীরেন্দ্রবাবুকে।

দীর্ঘ দিন ধরেই সরকারি স্ট্যাম্প ভেন্ডার নেই কাকদ্বীপ মডেল আদালতে। তার জেরে সমস্যায় পড়ছেন বিচারপ্রার্থী ও আইনজীবীরা। আদালতেরই কিছু কর্মী নিজেরা আগে থেকে স্ট্যাম্প কিনে রেখে তা বেশি টাকায় বিক্রি করছেন বলে অভিযোগ। আর বেশি দামে না কিনলে দীর্ঘ দিন ধরে অপেক্ষা করতে হচ্ছে বলেও জানালেন অনেকে।

রেজিস্ট্রি অফিসের অস্থায়ী এক ভেন্ডারকেই দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে স্ট্যাম্পের জোগান দেওয়ার। কিন্তু কবে‌ জোগান স্বাভাবিক হবে, তা-ও স্পষ্ট হচ্ছে না। এ বিষয়ে প্রশাসনের কোনও ভ্রূক্ষেপ নেই বলে অভিযোগ উঠছে। যদিও প্রশাসনের কর্তারা দ্রুত সমাধানের আশ্বাস দেন। মহকুমাশাসক রাহুল নাথ বলেন, ‘‘সমস্যার কথা জেনেছি। দেখছি, যাতে দ্রুত সমাধান করা যায়।’’

ঠিক কী রকম সমস্যায় পড়তে হচ্ছে মানুষকে?

বেলা ২টোর পরে বেশিরভাগ দিনই স্ট্যাম্প থাকে না ‘মডেল’ আদালতে। তখনই তা কিনতে হচ্ছে চোরাপথে। ১০ টাকার স্ট্যাম্প ২৫-৩০ টাকায় মিলছে। যা গরিব মানুষের পক্ষে কিনতে অসুবিধা হচ্ছে। কিন্তু বাধ্য হয়ে তা কিনতেও হচ্ছে। কাকদ্বীপ আদালতের আইনজীবী মনোজ পাণ্ডা বলেন, ‘‘স্ট্যাম্প না থাকায় বিচারপ্রার্থীরা যেমন হেনস্থা হচ্ছেন, তেমনি অনেক সময়ে আইনজীবীদেরও অস্বস্তিতে পড়তে হচ্ছে। এই সমস্যার দ্রুত সমাধান হওয়া দরকার।’’

কাকদ্বীপ বার অ্যাসোসিয়েশনের তরফেও বিষয়টি নিয়ে প্রশাসনকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এখনও প্রশাসনের তরফে স্থায়ী কোনও স্ট্যাম্প ভেন্ডারকে দায়িত্ব দেওয়া হয়নি। বারের সম্পাদক আইনজীবী দেবপ্রকাশ জানা বলেন, ‘‘অনেক সময়েই এ রকম হয়, যে আইনজীবী বা ল’ক্লার্কের নামে স্ট্যাম্প তুলে রাখতে হয়। তা না হলে বিচারপ্রার্থী বা অন্য কোনও কাজে মানুষ এলে তাঁদের ফিরে যেতে হবে। এ ব্যাপারে মহকুমাশাসক এবং জেলাশাসককেও চিঠি দিয়ে জানানো হয়েছে, যাতে অন্তত একজন স্থায়ী স্ট্যাম্প ভেন্ডার দেওয়া যায়।’’ প্রশাসনের তরফেই স্ট্যাম্প ভেন্ডার নিয়োগ করা হয় আদালতে।

২০১০ সাল থেকেই কাকদ্বীপ আদালতে রেজিস্ট্রি অফিসের দুই স্ট্যাম্প ভেন্ডার অস্থায়ী কাজ করতেন। একজন মারা যাওয়ার পরে আরও একজনকে সেই জায়গায় দায়িত্ব দেওয়া হয়। কিন্তু তিনি আসছেন না। ফলে রেজিস্ট্রি অফিসের স্ট্যাম্প ভেন্ডারের উপরেই চাপ পড়ছে। নাম বা পদবি পরিবর্তন, জন্ম বা বয়েসের জন্য হলফনামা, সম্পত্তি হস্তান্তর থেকে শুরু করে চুক্তি, উত্তরাধিকার সবেতেই প্রয়োজন হয় স্ট্যাম্প। বিশেষ করে ১০ টাকার নন জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পের চাহিদা সব থেকে বেশি। সেটাও মিলছে না। আইনজীবীরা জানান, চুক্তি বা উত্তরাধিকারের ক্ষেত্রে দু’পক্ষের যে কোনও এক পক্ষের নামে স্ট্যাম্প বিক্রি হওয়ার কথা। কিন্তু তা সব সময় সম্ভব হয় না। সে কারণে পরবর্তীকালে অন্য কারও নামে তোলা স্ট্যাম্প ব্যবহার করে আইনি জটিলতাও তৈরি হতে পারে। প্রত্যন্ত এলাকা থেকে আসা অনেকেই এ সব না জেনেই বাধ্য হচ্ছেন বেশি টাকা দিয়ে স্ট্যাম্প তুলতে।

Stamp paper Black marketing
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy