Advertisement
E-Paper

‘যেতে নাহি দিব’, বদলি হওয়া শিক্ষককে ছাড়বেই না কুলতলির স্কুল পড়ুয়ারা, গেটে তালা অভিভাবকদের

কুলতলির স্কুলে টিচার ইন-চার্জ পদে ছিলেন মসিউর রহমান। বদলির নির্দেশ এসেছে। কিন্তু ‘স্যর’কে না ছাড়ার পণ করেছে স্কুলের পড়ুয়া কচিকাঁচারা। ব্যানার তুলে ধরে স্যরকে রাখতে স্লোগান দিল তারা।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০২ ডিসেম্বর ২০২৩ ১৭:০০
Screen Grab

মসিউর স্যরকে ঘিরে ধরে বিক্ষোভ পড়ুয়াদের। — নিজস্ব চিত্র।

শিক্ষকের বদলির নির্দেশ হয়েছে। কিন্তু পড়ুয়ারা চায় না স্যরকে অন্যত্র যেতে দিতে। তাই স্যরকে ঘিরে ধরে আটকে রেখেছে দক্ষিণ ২৪ পরগনার কুলতলি ব্লকের কুন্দখালি গোদাবর অঞ্চলের ধানখালি অবৈতনিক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পড়ুয়ারা। শুধু পড়ুয়ারাই নয়, তাঁদের অভিভাবকরা স্কুলের গেটে তালা মেরেছেন। যাতে স্যর বেরিয়ে না যান। স্যরের বদলি আটকাতে কচি কচি পড়ুয়াদের নাছোড় ‘আন্দোলন’ এবং অভিভাবকদের ‘সহায়তার’ জেরে শনিবার পঠনপাঠনই হল না স্কুলে।

কেউ ক্লাস টু, কেউ থ্রি, আবার কেউ ক্লাস ফাইভ। এক ব্যক্তিকে মাঝখানে রেখে সাদা পোশাক পরিহিত কচিকাঁচারা ভিড় করে দাঁড়িয়ে স্কুলের মাঠে। সেই ব্যক্তি কিছু বলার চেষ্টা করছেন, কিন্তু বার বার কচিকাঁচাদের সম্মিলিত কিচিরমিচিরে ঢাকা পড়ে যাচ্ছে গলার স্বর। শুধু শোনা যাচ্ছে, ‘যেতে দেব না, যেতে দেব না’ স্লোগান। শনিবার এই স্কুলের পড়ুয়াদের চোখে জল। কারণ, তাঁদের প্রিয় মসিউর স্যরের নামে ট্রান্সফারের নির্দেশ এসেছে। তিনি নাকি চলে যাবেন অন্যত্র। তাই স্যরকে যেতে না দেওয়ার পণ করেছে ছোট ছোট স্কুলপড়ুয়ারা। মসিউর স্যরকে যেতে দিতে নারাজ কচিকাঁচাদের অভিভাবকরাও। স্যর যাতে স্কুল ছেড়ে বেরিয়ে যেতে না পারেন সে জন্য স্কুলের প্রধান ফটকে তালা মেরে দিয়েছেন তাঁরা। মা-বাবাদের সাফ কথা, স্যরকে এখানেই থাকতে হবে। কিন্তু সরকারি ফরমান অগ্রাহ্য করবেন কী করে! মসিউর স্যর সকলকে সে কথা বোঝানোর চেষ্টা করছেন প্রাণপণ। কিন্তু কেউ শুনলে তো!

ধানখালি অবৈতনিক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ‘টিচার ইন-চার্জ’ মসিউর রহমান মোল্লা। ১০ বছরের কর্মজীবনে এই স্কুলের দায়িত্ব পাওয়ার পরেই আমূল বদলে ফেলেছেন স্কুলের চেহারা। যেমন উন্নতি হয়েছে স্কুলের, তেমনই কচিকাঁচাদের মন বসেছে পড়ায়। গত এক দশক ধরে ভালবেসে পড়ুয়াদের পড়িয়েছেন মসিউর ‘স্যর’। শুধু কী তাই, পড়ুয়ারা ঠিক মতো খাওয়াদাওয়া করছে কি না, তার দিকেও কড়া নজর তাঁর। বদলির নির্দেশ নিয়ে তিনি বলছেন, ‘‘এখানে কেউই আমাকে যেতে দিতে চায় না। আমিও যে যেতে চাই, তেমন নয়। কিন্তু সরকারি নির্দেশ তো মানতেই হবে। বাচ্চাদের সেটা বোঝাতে পারছি না। এখন দেখছি, তাঁদের মা-বাবারাও বুঝতে পারছেন না।’’

এক স্কুলপড়ুয়ার অভিভাবক বিলকিস গাজি বলেন, ‘‘নিজের সন্তানের মতো সব ছাত্রকে দেখেন স্যর। ভাগ্যিস স্যর ছিলেন।’’ আর এক অভিভাবক আজিজুল হাসান লস্কর বলেন, ‘‘মসিউর স্যর আসার পর বিদ্যালয়ে ছাত্রছাত্রীদের পঠনপাঠনের মান অনেক বেড়েছে। এলাকায় শিক্ষার পরিবেশ ফিরে এসেছে। গ্রামের সব ছেলেরাই মসিউর স্যারের জন্য এখন রোজ স্কুলে যায়।’’ অভিভাবক শামসুল হাসান মোল্লা বলেন, ‘‘স্কুল ছুটি থাকলেও এলাকায় এসে ছাত্রছাত্রীদের খোঁজ নিয়ে যান। এ রকম শিক্ষক পাওয়া যায় না। শুধু পড়াশোনা নয়, ছাত্রছাত্রীদের পুষ্টির দিকেও কড়া নজর তাঁর। এমন শিক্ষককে কেউই হাতছাড়া করতে চায় না। আমরাও তাই স্যরকে যেতে দেব না।’’

স্কুলের অভিভাবকরা ইতিমধ্যে স্কুল পরিদর্শকের অফিসে শিক্ষকের বদলি রুখতে চিঠি দিয়েছেন। কিন্তু তাতে কাজ কতটা হবে তা নিয়ে সন্দিহান তাঁরা। স্কুলেরই দুই শিক্ষক জয়দীপ মজুমদার ও মুরারিমোহন হালদার জানান, অভিভাবকদের বিক্ষোভের জেরে এবং অভিভাবকরা স্কুলের প্রধান ফটকে তালা মেরে দেওয়ায় শনিবার বন্ধ আছে পঠনপাঠন।

Transfer Teacher school
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy