Advertisement
E-Paper

ভেন্ডিং মেশিনে স্বচ্ছন্দ ছাত্রীরা

কয়েক মাস আগেও স্কুলে এসে হঠাৎ ঋতুস্রাবের ফলে দ্রুত বাড়ি ফিরে যেত গাইঘাটার ঝাউডাঙা সম্মিলনী হাইস্কুলের অনেক ছাত্রীই। অনেক সময়ে স্কুলেই আসত না। বাড়িতেও স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্যবহারের চল নেই বিশেষ। সচেতনার অভাব ছিল ছাত্রী ও পরিবারের মহিলাদেরও।

সীমান্ত মৈত্র

শেষ আপডেট: ০৪ ডিসেম্বর ২০১৭ ০১:৫৮
ভেন্ডিং-মেশিন: এ ভাবেই বসানো হয়েছে মেশিনগুলি। নিজস্ব চিত্র

ভেন্ডিং-মেশিন: এ ভাবেই বসানো হয়েছে মেশিনগুলি। নিজস্ব চিত্র

কয়েক মাস আগেও স্কুলে এসে হঠাৎ ঋতুস্রাবের ফলে দ্রুত বাড়ি ফিরে যেত গাইঘাটার ঝাউডাঙা সম্মিলনী হাইস্কুলের অনেক ছাত্রীই। অনেক সময়ে স্কুলেই আসত না। বাড়িতেও স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্যবহারের চল নেই বিশেষ। সচেতনার অভাব ছিল ছাত্রী ও পরিবারের মহিলাদেরও।

কিন্তু ইদানীং পরিস্থিতি পাল্টেছে।

মাস দু’য়েক আগে শিবপুর ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের পক্ষ থেকে স্কুলে বসানো হয়েছে স্বয়ংক্রিয় স্যানিটারি ভেনডিং মেশিন। তারপর থেকে ছাত্রীদের মধ্যে আগ্রহ তৈরি হয়েছে ন্যাপকিন ব্যবহারের বিষয়ে। প্রধান শিক্ষক অনুপম সর্দার বলেন, ‘‘এখন ছাত্রীরা নিজেরাই মেশিনে ৫ টাকার কয়েন ফেলে একটি করে ন্যাপকিন কিনছে। বাড়ির মহিলাদের জন্যেও নিয়ে যাচ্ছে। স্কুলের পক্ষ থেকে আমরা ছাত্রীদের বুঝিয়েছি।’’

বনগাঁ মহকুমার বিভিন্ন স্কুলে খোঁজ-খবর নিয়ে জানা গেল, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ভেনডিং মেশিন এখনও বসেনি। আবার যে এমনও দেখা গিয়েছে, স্কুলে ভেনডিং মেশিন না থাকলেও স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলাদের মাধ্যমে স্কুলে ন্যাপকিন বিক্রি শুরু হয়েছে।

বনগাঁ শহরের নিউ বনগাঁ গার্লস হাইস্কুলে সাংসদ তহবিলের অর্থে গত বছর সেপ্টেম্বর মাসে স্কুলে ভেনডিং মেশিন বসে। পড়ুয়াদের মধ্যে আগ্রহও বেড়েছে। কিন্তু মাস কয়েক মাস হল মেশিনটি আর চলছে না। এখন একটি স্বনির্ভর গোষ্ঠী স্কুলে ন্যাপকিন সরবরাহ করে। আগে ৫ মেশিনে ৫ টাকায় ২টি করে ন্যাপকিন মিলছিল। এখন ১০ টাকায় মিলছে ৩টি করে। প্রধান শিক্ষিকা সোমা সরকার বলেন, ‘‘ছাত্রীদের মধ্যে ন্যাপকিন ব্যবহারের সচেতনা অনেকটা বেড়েছে। তারা নিয়মিত স্কুল থেকে নিয়ে যায়।’’ শিক্ষিকা রীতা পাল বলেন, ‘‘অনেকে আমাদের কাছে এসে ন্যাপকিন চাইছে। নিজেরা মেশিন থেকে নিতে সংকোচ পুরোপুরি কাটেনি।’’

বনগাঁর ঠাকুর হরিদাস উচ্চ বিদ্যালয়ে আবার মেশিন বসলেও। ন্যাপকিন সরবরাহ নেই। ছাত্রীরা জানাল, ন্যাপকিনের গুণগত মানও ভাল নয়।

গোপালনগরের নহাটা সারদা সুন্দরী বালিকা বিদ্যামন্দির স্কুলে মেশিন না বসলেও স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলারা স্কুলে এসে ন্যাপকিন বিক্রি করছেন । চলতি বছরে ওই কাজ শুরু হয়েছে। প্রধান শিক্ষিকা শম্পা পাল জানালেন, মহিলারা ৫০০ করে ন্যাপকিন দিয়ে যান। ছাত্রীরা পরিবারের মহিলাদের জন্যেও নিয়ে যাচ্ছে। ওই স্কুলের ছাত্রীরা জানায়, আগে এ নিয়ে কোনও ধারণাই ছিল না। স্কুল থেকে জানতে পেরে বাড়িতে আলোচনা করি। এখন পরিবারের সকলেই সচেতন হয়েছেন।

বনগাঁ শহরের কুমুদিনী উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের পড়ুয়ার সংখ্যা প্রায় আড়াই হাজার। স্কুলের পক্ষ থেকে প্রশাসনের বিভিন্ন মহলে মেশিন বসানোর জন্য আবেদন করা হলেও এখনও বসেনি। প্রধান শিক্ষিকা ইন্দ্রাণী উকিল বলেন, ‘‘মেশিন না বসলেও জুন মাস থেকে স্কুলে ন্যাপকিন বিক্রির ব্যবস্থা করা হয়েছে। ছাত্রীদের আমরা নিয়মিত সচেতন করছি।’’ ছাত্রী ও শিক্ষিকাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, দোকানে গিয়ে ন্যাপকিন কিনতে তারা সংকোচবোধ করেন। এখন স্কুলে থেকে মেলায় সুবিধা হয়েছে।

বনগাঁ শহরের মতিগঞ্জ এলাকার একটি ওষুধের দোকানের মালিক তথা বেঙ্গল কেমিস্ট অ্যান্ড ড্রাগিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের বনগাঁ শাখার সম্পাদক অপূর্ব দাস বলেন, ‘‘গ্রামের মহিলা ন্যাপকিন কিনতে এসে এখনও ইতস্তত বোধ করেন। দোকানের অন্য লোকজন চলে গেলে তাঁরা চাপা স্বরে বলেন, একটি প্যাড দিন।’’

তবে স্কুলে স্কুলে ন্যাপকিন পাওয়া গেলে পরিস্থিত আরও বদলাবে বলেই আশা।

Sanitary Napkin Vending Machine Students স্যানিটারি ন্যাপকিন
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy