Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
Education

Paray Shikshalaya: শিক্ষকেরা পাড়ায়, উচ্ছ্বসিত পড়ুয়ারা

এর মধ্যে অনেকেই পড়ার প্রতি আগ্রহ হারিয়ে বিভিন্ন কাজে যোগ দিয়েছে। স্কুল বন্ধ থাকায় বেশ কিছু ছাত্রীর বিয়ে হয়ে গিয়েছে।

উৎসাহ: পড়ায় মন ফিরছে ওদের।

উৎসাহ: পড়ায় মন ফিরছে ওদের। নিজস্ব চিত্র।

সামসুল হুদা
ভাঙড়  শেষ আপডেট: ২৯ জানুয়ারি ২০২২ ০৭:১৭
Share: Save:

সরকারি বিধি-নিষেধের কারণে প্রায় দু’বছরের বেশি সময় ধরে স্কুলমুখো হয়নি পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণির ছাত্রছাত্রীরা। এর মধ্যে অনেকেই আবার পড়ার প্রতি আগ্রহ হারিয়ে বিভিন্ন কাজে যোগ দিয়েছে। স্কুল বন্ধ থাকায় বেশ কিছু ছাত্রীর বিয়ে হয়ে গিয়েছে।

সরকারি নির্দেশে গত বছর নভেম্বর মাস থেকে স্কুল খোলা হলেও কেবলমাত্র নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে ক্লাস শুরু হয়েছিল। সে সময়ে ভাঙড়ের কাঁঠালিয়া হাইস্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকারা দেখেন, দ্বাদশ শ্রেণির ৮৮ জন ছাত্রীর মধ্যে ২০ জনের বিয়ে হয়ে গিয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী ১৩৫ জন ছাত্রীর মধ্যে ৩ জনের বিয়ে হয়েছে। এর মধ্যে অনেক ছাত্র পড়ায় আগ্রহ হারিয়ে বিভিন্ন কাজে যোগ দিয়েছে।

এই পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে ছাত্রছাত্রীদের স্কুলে ফিরিয়ে আনতে এবং নাবালিকা মেয়েদের বিয়ে বন্ধ করতে অভিভাবক ও পড়ুয়াদের সঙ্গে কথা বলেন স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকারা। কিন্তু দু’মাস ক্লাস চলার পরে করোনা অতিমারির কারণে ফের বন্ধ হয়ে গেছে স্কুল-কলেজ। ফের যাতে ছাত্রছাত্রীরা পড়ায় আগ্রহ হারিয়ে না ফেলে, সে জন্য উদ্বিগ্ন কাঁঠালিয়া হাইস্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকারা।

সোমবার থেকে স্কুলের প্রধান শিক্ষক জর্জিস হোসেনের নেতৃত্বে ২৪ জন শিক্ষক-শিক্ষিকা ৪ জনের দলে ভাগ হয়ে ‘পাড়ায় শিক্ষালয়’ কর্মসূচি চালু করেছেন। পাঁচটি পাড়াকে বেছে নিয়ে শিক্ষক-শিক্ষিকারা ক্লাস নিতে পৌঁছে যাচ্ছেন। গ্রামে খোলা মাঠে, কারও বাড়ির উঠোনে, খামারে, গাছতলায় শতরঞ্চি, মাদুর, ত্রিপল পেতে মাস্ক পরে, শারীরিক দূরত্ববিধি মেনে ছাত্রছাত্রীদের বসানোর ব্যবস্থা করা হচ্ছে। শিক্ষকেরা ব্ল্যাকবোর্ড, চক, ডাস্টার নিয়ে পৌঁছে যাচ্ছেন।

কাঁঠালিয়া হাইস্কুল সূত্রে জানানো হয়েছে, আপাতত পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত ছাত্রছাত্রীদের ওই কর্মসূচিতে পাঠদান দেওয়া হচ্ছে। অনেকের পরিবারে মোবাইল ফোন কেনার, নেট রিচার্জ করার মতো অবস্থা নেই। এই পরিস্থিতিতে সব থেকে বেশি সমস্যায় পড়তে হচ্ছে নিচু ক্লাসের বহু পড়ুয়াকে। নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রছাত্রীদের জন্য অনলাইন ক্লাস করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে স্কুল।

এই কর্মসূচিতে ছাত্রছাত্রীদের পড়ার প্রতি আগ্রহ ফিরিয়ে আনতে তাদের স্কুলের পক্ষ থেকে চকোলেট, খাতা, পেন, দেওয়া হচ্ছে। প্রতিদিন বেলা ১২টা থেকে বিভিন্ন বিষয়ের উপরে ৩০ মিনিটের ক্লাস করা হচ্ছে। এ ছাড়াও, ওয়ার্ক এডুকেশন ক্লাসের মাধ্যমে ছাত্রছাত্রীদের হাতের কাজ শেখানো হচ্ছে।

নবম-দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রছাত্রীদের অনলাইন ক্লাস করার জন্য এবং নিয়মিত পড়াশোনার জন্য অনুপ্রাণিত করতে শিক্ষক-শিক্ষিকারা তাঁদের বাড়িতে যাচ্ছেন বলেও জানা গেল। গুগল মিটে কী ভাবে অনলাইন ক্লাসে যোগ দিতে হবে, তা শিক্ষকেরা বাড়ি গিয়ে হাতেকলমে দেখিয়ে দিয়ে আসছেন।

ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী ফিরদৌসি ইয়াসমিন বলে, ‘‘চতুর্থ শ্রেণি পাশ করার পরে যখন এই স্কুলে পঞ্চম শ্রেণিতে ভর্তি হলাম, তারপর থেকে একদিনও ক্লাস হয়নি। স্যার-দিদিমণিদের সঙ্গে দেখাও হয়নি। বড় স্কুলে ওঠার পরে এই প্রথম ক্লাস করলাম। বন্ধুদের সঙ্গে দেখা হল, খুব ভাল লাগছে।’’

প্রধান শিক্ষক বলেন, ‘‘নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রছাত্রীরা অনলাইন ক্লাস করতে পারলেও সমস্যায় পড়েছিল নিচু ক্লাসের ছাত্রছাত্রীরা। তা ছাড়া, মাঝে কিছুদিন স্কুল খোলার পরে দেখা গিয়েছে, অনেকেই পড়ার প্রতি আগ্রহ হারিয়ে অন্যত্র কাজে চলে গিয়েছে। এদের অনেকের বাড়ি গিয়ে বুঝিয়ে স্কুলে আনা সম্ভব হয়েছে। আবার স্কুল বন্ধ থাকায় তারা যাতে পড়ায় আগ্রহ হারিয়ে না ফেলে, সে জন্য আমরা পাড়ায় গিয়ে শিক্ষাদানের ব্যবস্থা করেছি।’’ আপাতত পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত ছাত্রছাত্রীদের পাড়ায় গিয়ে পড়ানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে জানালেন তিনি। পাশাপাশি মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের জন্য বিশেষ ক্যাম্পের ব্যবস্থা করা হয়েছে বলেও জানিয়েছে প্রধান শিক্ষক।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Education
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE