Advertisement
০১ মে ২০২৪
Bangaon

সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে পরিকাঠামোর অভাব ভুরি ভুরি

গুজরাতে সেতু ভেঙে দুর্ঘটনা পরে মোরবী হাসপাতালের অব্যবস্থার নানা কথা উঠে আসছে। প্রধানমন্ত্রী আসবেন বলে তড়িঘড়ি পদক্ষেপ নিতে দেখা গিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে।

একাধিক পরিষেবা অমিল এই হাসপাতালে। নিজস্ব চিত্র

একাধিক পরিষেবা অমিল এই হাসপাতালে। নিজস্ব চিত্র

সীমান্ত মৈত্র  
বনগাঁ শেষ আপডেট: ০৩ নভেম্বর ২০২২ ০৮:২৩
Share: Save:

বনগাঁ মহকুমা হাসপাতাল চত্বরে কয়েক বছর আগে তৈরি করা হয়েছে বনগাঁ সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল। অভিযোগ, ঝাঁ চকচকে ভবন তৈরি হলেও চিকিৎসার পরিকাঠামোয় ঘাটতি আছে। একটি সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল চিকিৎসার যা সুযোগ-সুবিধা থাকার কথা, তা বাস্তবে নেই। বড় কোনও আপদ-বিপদ ঘটলে এই হাসপাতাল কতটা চাপ সামলাতে পারবে, তা নিয়ে উঠছে প্রশ্ন।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, বিভিন্ন রোগের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, চতুর্থ শ্রেণির কর্মী, নার্স, রেডিয়োলজিস্ট, জেনারেল ডিউটি মেডিক্যাল অফিসার,-সহ অনেক কিছুরই অভাব আছে এখানে। সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে নেই এমআরআই, সিটি স্ক্যানের ব্যবস্থা। নেই পূর্ণাঙ্গ আইসিসিইউ। আশঙ্কাজনক রোগীকে কলকাতার হাসপাতালে স্থানান্তরিত করতে হয়।

বনগাঁ উত্তর কেন্দ্রের বিজেপি বিধায়ক অশোক কীর্তনিয়ার অভিযোগ, ‘‘সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালের নামে নীল-সাদা একটা ভবন করা হয়েছে মাত্র। কোনও পরিষেবা পাওয়া যায় না। বহু রোগীকেই কলকাতায় রেফার করে দেওয়া হয়।’’ তাঁর কটাক্ষ, বড়সড় কোনও দুর্ঘটনা ঘটলে, এক সঙ্গে অনেক জখম রোগী এলে চিকিৎসকেরা পালিয়ে যেতে বাধ্য হবেন! তবে তাঁদের দোষ দিয়ে লাভ নেই। পরিকাঠামো না থাকলে তাঁরা কী করতে পারেন!

সিপিএমের বনগাঁ শহর এরিয়া কমিটির সদস্য পীযূষকান্তি সাহা বলেন, ‘‘নামেই সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল। কোনও উন্নত পরিষেবা মেলে না। বিভিন্ন রোগের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের অভাব আছে। সামান্য কারণেই রোগীকে কলকাতায় স্থানান্তরিত করা হয়। তা হলে কিসের সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল!’’

বনগাঁ মহকুমার কয়েক লক্ষ মানুষ এই হাসপাতালের উপরে নির্ভরশীল। এ ছাড়া, বারাসত মহকুমার একাংশ ও নদিয়া জেলা থেকেও রোগী আসেন। অনেকে জানালেন, গুরুত্বপূর্ণ হাসপাতাল হওয়া সত্ত্বেও চিকিৎসা পরিষেবা পেতে হিমশিম খেতে হয়। অভিযোগ, কিছু আয়া দুর্ব্যবহার করেন। অভিযোগ, কিছু চিকিৎসক রোগীর কাছে গিয়ে দেখেন না। দূর থেকে দেখে ওষুধ দেন।

রোগীর আত্মীয়দের আরও বক্তব্য, হাসপাতালে ৬টি শয্যার এইচডিইউ (হাই ডিপেনডেন্সি ইউনিট) আছে। কিন্তু প্রয়োজনের তুলনায় তা খুবই কম। রোগীর অবস্থা আশঙ্কাজনক হলে তাঁকে অন্যত্র পাঠিয়ে দেওয়া হয়। বনগাঁ হাসপাতালে সরকারি অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবা মেলে না। রোগীদের বেসরকারি অ্যাম্বুল্যান্সের উপরে ভরসা করতে হয়। অনেক সময়ে ভাড়া বেশি নেওয়া হয় বলে অভিযোগ।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, এখন শল্য বিভাগে মাত্র দু’জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক আছেন। প্রয়োজন অন্তত ৬ জন বিশেষজ্ঞ শল্য চিকিৎসকের। হাসপাতাল সূত্রে জানানো হয়েছে, আশঙ্কাজনক রোগীদের চিকিৎসার জন্য ৩০ শয্যার হাইব্রিড সিসিইউ শীঘ্রই চালু করা হচ্ছে। কিন্তু যতদিন তা না হচ্ছে, রোগীদের দুর্ভোগের মধ্যে থাকতে হচ্ছে।

হাসপাতাল সূত্রের খবর, চতুর্থ শ্রেণির কর্মীর অভাব আছে। এখন আছেন ৩৩ জন, যা প্রয়োজনের এক তৃতীয়াংশ মাত্র। রেডিয়োলজিস্ট না থাকায় ২৪ ঘণ্টা আলট্রাসনোগ্রাফি পরিষেবা দেওয়া যাচ্ছে না। অভিযোগ, আলট্রাসনোগ্রাফি করাতে হলে দীর্ঘ দিন অপেক্ষা করে থাকতে হচ্ছে। টেকনিশিয়ানের অভাবে ২৪ ঘণ্টা ইসিজি পরিষেবা দিতে পারছেন না কর্তৃপক্ষ।

নার্স আছেন ১৪৩ জন। প্রয়োজনের তুলনায় তা অর্ধেক বলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের মত। সার্জারি, অর্থোপেডিক্স, ইএনটি, চোখ, চর্ম, মনোরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের অভাব আছে। জেনারেল ডিউটি মেডিক্যাল অফিসার আছেন ৭ জন। এঁরাই মূলত জরুরি বিভাগে পরিষেবা দিয়ে থাকেন।

তবে রোগীরা জানালেন, হাসপাতালের ব্লাডব্যাঙ্কের অনেক উন্নতি হয়েছে। ২৪ ঘণ্টা রক্ত পাওয়া যায়। হাসপাতালে ভর্তি রোগীর রক্তের অভাব হয় না। এ দিকে, স্ট্রেচারের সমস্যা আছে। কিছু স্ট্রেচার ভাঙা। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, ভাঙা স্ট্রেচার মেরামত করা হচ্ছে। প্রতিটি ওয়ার্ডে ইসিজি ব্যবস্থা চালু করা হচ্ছে।

এই পরিস্থিতিতে জরুরি ভিত্তিতে যদি কোনও বড়সড় দুর্ঘটনা ঘটে, এক সঙ্গে অনেকে রোগী হাসপাতালে হাজির হন, তা হলে কী ভাবে পরিষেবা দেওয়া হবে?

হাসপাতালের সুপার কৌশিক ঢল বলেন, ‘‘আপৎকালীন পরিস্থিতিতে এক সঙ্গে অনেক রোগীকে চিকিৎসা দেওয়ার ব্যবস্থা আছে। হাসপাতালে সব সময়ে ১০-১২ জন চিকিৎসক থাকেন। সকলকে কাজে যুক্ত করা হবে। হাসপাতালের আশপাশে যে সব চিকিৎসক থাকেন, তাঁদের দ্রুত ডেকে নেওয়া হবে।’’

কিন্তু পরিকাঠামো তো নেই, চিকিৎসক কী ভাবে পরিষেবা দেবেন? এ রকম ক্ষেত্রে পড়ে থাকে ‘রেফার’ দাওয়াই— মানছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অনেকেই।

চিকিৎসা পরিষেবার আরও উন্নতি কী ভাবে করা যায়, তা নিয়ে তৃণমূলের বনগাঁ সাংগঠনিক জেলার সভাপতি বিশ্বজিৎ দাস জানিয়েছেন, এ ব্যাপারে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলবেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Bangaon super speciality hospital
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE